পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوbجاسوt পারি নে বৌঠান। ছেকড়া গাড়ীর ঘোড়াগুলে। সারাদিন চাবুকের মার খেয়ে আর আধপেটা খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যেবেলায় মরিয়া হয়ে ছোটে শেষ বিশ্রামের আশায় । তাদের সে উন্মাদ গতি কখনও দেখ নি। তাই এমন কথা বলতে পেরেছ। একটু আগে ট্রেনে আসতে আসতে তুমি আমাকে এই মাত্র যা প্রশ্ন করলে আমি নিজেকে নিজে ঠিক সেই প্রশ্নই করছিলাম, কেন প্রকাশ-দা এমন অসম্ভব অতিরিক্ত পরিশ্রমের তলায় নিজেকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন ক’রে ফেললে ?...চোখ ফিরিয়ে দেখি মুহাস-বৌদির চোখে জল । তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,—কাল রবিবার নয় ? বললাম,—কাল রবিবারই বটে ; কিন্তু হঠাৎ একথা কেন ? মুহাস-বৌদি নিজেকে সংযত ক’রে বললেন,--প্রত্যেক বারই রবিবারে উনি কাঙালের মত বলতেন, ‘আজ রবিবার, নয় ? আজ দুপুরে একটু ঘুমুতে পাব । হঠাৎ মনে পড়ে গেল । মুহাস-বৌদির ঐ একটি কথায় আমি আমার প্রশ্নের জবাব পেলাম । দিনের শেষে শুধু বোধ করিবা একটু ঘুমাবার আশাতেই সে প্রাণপণ করে চলেছে। চলা যখন ফুরোল তখন ঘাড় গুজে সেইখানেই গুয়ে পড়ল । এর পরেও কি হবে বা হ’তে পারে তার অবর্তমানে তার সংসারের চেহারাটা কেমন দাড়াবে—এসব ভাববার মত সামর্থ্য তার অার ছিল না ।” মন্দ অত্যন্ত ক্লেশ পাইতেছিল, তথাপি কৌতুহলবশত এ প্রসঙ্গ হইতে নিবৃত্ত হইতেও পারিতেছিল না। বলিল, “সংসারে আর কি তাহার কেউ ছিল না ? মা বাবা ? তোমাদের জানালেও ত একটা উপায় হয়ত হ’তে পারত শেষ পৰ্য্যন্ত ।” নরেশ কহিল, "দরিদ্রের আত্মসম্মান জিনিষটা বড় তীব্র ও অসহিষ্ণু। ঘূণাক্ষরেও সে আমাদের কাছে তার অভাব-অভিযোগের কথা কখনও বলে নি । সংসারেও তার বিশেষ কেউ নেই। বাবা ছোট বেলায় মারা গেছেন। মা আছেন, কাশীবাস করেন । তাকে মাসে ছ-টি করে টাকা প্রকাশ-পাকেই নিয়মিত পাঠাতে হ’ত। গায়ে যা হোক একটা ভদ্রাসন-ছিল, মেজবোনের বিয়েতে বাধা দিয়ে বিয়ের খরচ যোগাড় হয়। সে-বাড়ী আর প্রকাশ-দা ছাড়াতে পারে নি। অনেকটা সেই ক্ষোতেই খুড়ীমা কাশীবাসিনী হয়েছেন—ছেলের সঙ্গে রাগীরাগি ক’রে ।” * , প্রবাসী SN988

মন্দা বলিল, “যাই বল তাহ প্রকাশবাবুর অবস্থা যখন এত খারাপ তখন তোমার খুড়ীমার কিছুতেই তার ঘাড়ে তাড়াতাড়ি একটি বৌ চাপিয়ে দেওয়া উচিত হয় নি। অত অল্প আয়ে ঐ সৰ্ব্বনেশে বোঝা তাকে বহন করতে না হ’লে হয়ত এমন ঘটত না ।” নরেশ হাসিল, “হায় রে, বাঙালী-ঘরে তেমন আয় নেই ব’লে মা-বাপে ছেলের বিয়ে দিতে দেরি করছে এমন দৃশ্য কোথাও কখনও দেখেছ বৌঠান ? সংসারের এই যুপকাষ্ঠে বাঙালীর কতখানি গেছে আর রোজ কত যাচ্ছে সে তিল তিল ত্যাগের খবর কেউ রাখে কি না জানি নে । কিন্তু কোন একটা বড় শক্তি, বড় প্রতিভা এই নিরর্থক পঙ্গু, ত্যাগের ক্ষেত্র থেকে টেনে যদি তাদের তুলতে পারে, তাহ’লে এই বিরাট শক্তি দিয়ে অনেক কিছু কাজই হওয়া সম্ভব ।” বিজয়নাথ মাথা নাড়িয়া বলিলেন, “তুমি ঠিকই বলেছ নরেশ । এই কথাটা আমি আমার জীবনেও অনেকবার অনেক রকমে দেখেছি । আজ আরও একবার নূতন ক’রে দেখলাম। এই নিয়ে সন্ধ্যেবেলায় এই ঘরে বসেই আমার বন্ধুরা তর্কে তর্কে মুখর হয়ে উঠেছিলেন। তাদের বোঝাতে পারছিলাম না ঠিক, কিন্তু তোমার কথাগুলি যা এই মাত্র বললে বড় ব্যথার সঙ্গে স্মরণ করছিলাম।” নরেশ হাতের রুমালটা রাখিয়া বলিল, “সারাদিন যা শ্রান্তি গেছে, এক পেয়াল চা দাও বৌঠান । এই ত ভার নিয়ে যাচ্ছি, বাড়ীতে আবার কি রকম অভ্যর্থনা পাব জানি নে ! মধ্যবিত্ত বাঙালী-ঘরের অনিবার্ধ্য অভাব ও সেই হেতু সঙ্কীর্ণ অনুদারতার কথা, সব না জানে কিছু কিছু তো জানই । কিন্তু সে পরের কথা, যাই হোক, এখন উপস্থিত এক পেয়ালা চা না পেলে কিছুতেই ত চাঙ্গ হতে পারছিনে।” মন্দা তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাড়াইল । তাহার সমস্ত অবরুদ্ধ ক্লেশ সবলে ঝাড়িয়া ফেলিয়া একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া কুহিল, “যাই আমি এখনই চা তৈরি করে পাঠিয়ে দিই। দেখি সুহাসেরও বোধ হয় এতক্ষণ কাপড় ছাড়া হয়েছে। ওর ত অশৌচ যাচ্ছে, ফল আর দুধ ছাড়া বোধ হয় কিছু খাবে না।”