পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৪

কীৰ্ত্তিক অরণ্যক كي عS বই সঙ্গে আনিয়াছিলাম তাহা পড়িয়াই কোন রকমে দিন কাটাই । কাছারিতে লোকজন যারা আছে তারা নিতান্ত বৰ্ব্বর, না বোঝে তাহারা আমার কথা, ন। আমি ভাল বুঝি তাহীদের কথা। প্রথম দিন-দশেক কি কষ্টে ধে কাটিল, কতবার মনে হইল চাকুরীতে দরকার নাই, এখানে ইপিাইয়া মরার চেয়ে আধপেট খাইয়া কলিকাতায় থাকা ভাল। অবিনাশের অনুরোধে কি ভুলই করিয়াছি এই জনহীন জঙ্গলে আসিয়া, এ জীবন আমার জন্য 双领卡 রাত্রিতে নিজের ঘরে বসিয়া এই সবই ভাবিতেছি, এমন সময় ঘরের দরজ ঠেলিয়া কাছারির বৃদ্ধ মুহুরী গোপাল মুকুবৰ্ত্তী প্রবেশ করিলেন। এই একমাত্র লোক যাহার সতিস্বাস কথা বলিয়া ইপি ছাড়িয়া বাচি । গোপালবাবু এখানে আছেন অন্তত সতর-আঠার বছর। বৰ্দ্ধমান জেলায় বোনপাশ ষ্টেশনের কাছে কোন গ্রামে বাড়ী । বলিলাম--বক্ষন, গোপাল বাবু— গোপালবাবু অন্ত একখান চেয়ারে বসিলেন । বলিলেন—আপনাকে একটা কথা বলতে এলাম নিরিবিলি, এথানকার কোনও মানুষকে বিশ্বাস করবেন না। এ বাংলা দেশ নয় । লোকজন সব বড় খারাপ— —বাংলা দেশের মানুষও সবাই যে খুব ভাল, এমন নয় গোপাল বাবু -সে আর আমার জানতে বাকী নেই, ম্যানেজার বাৰু। সেই দুঃখে আর ম্যালেরিয়ার তাড়নায় প্রথম এখানে আসি। প্রথম এসে বড় কষ্ট হ’ত, এ জঙ্গলে মন ইপিয়ে উঠত— আজকাল এমন হয়েছে দেশে ত দূরের কথা, পূর্ণিয়া কি পাটনাতে কাজে গিয়ে দু-দিনের বেশী তিন দিন থাকতে: পারি নে। গোপালবাবুর মুখের দিকে সকৌতুকে চাহিলাম— বলে কি ! জিজ্ঞাসা করিলাম—থাকতে পারেন না কেন ? জঙ্গলের জন্তে মন হাপায় নাকি ? গোপালবাবু আমার দিকে চাহিয়া একটু হাসিলেন। বললেন, ঠিক তাই, ম্যানেজার বাৰু। আপনিও বুঝবেন। পইন এসেছেন কলকাতা থেকে, কলকাতার জন্তে মন উডু উডু করছে। বয়সও আপনার কম। কিছুদিন এখানে থাকুন—তার পর দেখবেন । —কি দেথব ? –জঙ্গল আপনাকে পেয়ে বসবে। কোন গোলমাল কি লোকের ভিড় ক্রমশঃ আর ভাল লাগবে না। আমার তাই হয়েছে মশাই। এই গত মাসে মুঙ্গের গিয়েছিলাম মোকদ্দমার কাজে--কেবল মনে হয় কবে এখান থেকে বেকুব । মনে মনে ভাবিলাম, ভগবান সে দুরবস্থার হাত থেকে আমায় উদ্ধার করুন। তার আগে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে কোনকালে কলিকাতায় ফিরিয়া গিয়াছি । গোপালবাবু বলিলেন, বন্দুকট রাত-বেরাত শিয়রে রেখে শোবেন, জায়গা ভাল নয়। এর আগে একবার কাছারিতে ডাকাতি হয়ে গিয়েছে। তবে আজকাল এখানে আর টাকাকড়ি থাকেন, এই ঘা কথা! কৌতুহলের সহিত বলিলাম, বলেন কি ! কতকাল আগে ডাকাতি হয়েছিল ? --বেশী না । এই বছর আট নয় আগে। কিছুদিন থাকুন, তখন সব কথা জানতে পারবেন। এ অঞ্চল বড় খারাপ। তা ছাড়া এই ভয়ানক জঙ্গলে ডাকাতি ক’রে মেরে নিলে দেখছেই বা কে ? _ গোপালবাবু চলিয়া গেলে একবার ঘরের জানালার কাছে আসিয়া দাড়াইলাম। দুরে জঙ্গলের মাথায় চাদ উঠিতেছে—আর সেই উদীয়মান চন্দ্রের পটভূমিতে আঁকাবঁকা একটা বনঝাউয়ের ডাল, ঠিক যেন জাপানী চিত্রকর হকুসাই-অঙ্কিত একখানি ছবি । চাকুরী করিবার আর জায়গা খুজিয়া পাই নাই। এ-সব বিপজ্জনক স্থান আগে জানিলে কখনই অবিনাশকে কথা দিতাম না । দুর্ভাবনা সত্ত্বেও উদীয়মান চন্দ্রের সৌন্দর্ধ্য আমাকে বড় মুগ্ধ করিল। 8 কাছারির অনতিদূরে একুটা ছোট পাথরের টিল, তার ওপর প্রাচীন ও স্ববৃহৎ একটা বটগাছ। একদিন নিস্তৰ অপরাষ্ট্রে বেড়াইতে বেড়াইতে পশ্চিম গ্রিন্তে স্বৰ্য্যাস্তের শোভা দেখিতে টিলার উপরে উঠিলাম।