পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেতু শ্ৰীশরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ সন্তোজাত শিশুকণ্ঠের কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙিয়া গেল-পাশের ঘর হঠতে কে যেন জলদমন্দ্র স্বরে বলিল,— লিখে রাখ, ৩রা চৈত্র রাত্রি ১টা ১৭ মিনিটে জন্ম". রাত্রে এক স্বপ্ন দেখিয়াছি। কিছুতেই তুলিতে পারিতেছি না ; এত স্পষ্ট, এত অদ্ভুত। আমার সমস্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে। অহিদত্ত রঙ্কুল, বৃদ্ধ অসিধাবক তণ্ড, লালসামী রল্লা— এ কি স্বপ্ন ? না—আমারই মগ্নচৈতন্তের স্মৃতিকন্দর হইতে বাহির হইয়া আসিল আমার পুৰ্ব্বতন জীবনের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বতন জীবন বলিয়া কিছু কি আছে ? মৃত্যু হয় জানি, কিন্তু সেইথানেই ত সব শেষ। আবার সেই শেষটাকে স্বরু ধরিয়া নূতন কোনও জীবন আরম্ভ হয় নাকি ? আমার স্বপ্নটা যেন তাহারই ইঙ্গিত দিয়া গেল। একটা মানবের জীবন—সে মানুষটা কি আমি ?--উল্ট দিক দিয়া দেখিতে পাইলাম ; এক মৃত্যু হইতে অন্ত জন্ম পর্যস্ত। বীজ হইতে অঙ্কুর, অঙ্কুর হইতে ফুল ফল আবার বীজ —ইহাই জীব-জগতের পূর্ণ চক্র। কিন্তু এই চক্র পরিপূর্ণ ভাবে আমাদের দৃশ্বমান নয়, মাঝখানে চক্রাংশ থানিকট অব্যক্ত। মৃত্যুর পর আবার জন্ম—মাঝ দিয়া বিস্মংণের বৈতরণী বহিয়া গিয়াছে । আমার স্বপ্ন যেন সেই বৈতরণীর উপর সেতু বাধিয়া দিল । সত্যই কি সেতু আছে ? আমি বৈজ্ঞানিক, বল্পনার ধার ধারি না। আলোকরশ্মি ঋজু রেখায় চলে কি না, এই বিষয়ু লইয়া গত তিন বৎসর গবেষণা করিতেছি। কঠিন পরিশ্রম কবিতে হইয়াছে ; কিন্তু শেষ পৰ্য্যন্ত বোধ হয় সত্য সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি। কাল আমার কাজ শেষ হইয়াছে। হাল্কা মন ও হাদ্ধা মস্তিষ্ক লইয়া শয়ন করিতে গিয়াছিলাম। তার পর ঐ স্বপ্ন! ভাবিতেfছ, এ-স্বপ্ন যদি অলীক কল্পনাই হয়, তবে সে এই সকল অদ্ভুত উপাদান সংগ্ৰহ করিল কোথা হইতে ? আমার জাগ্রত চেতনার মধ্যে ত এ-সকল অভিজ্ঞতা ছিল না : কল্পনা কি কেবল শূন্যকে আশ্রয় করিয়া পল্লবিত হয় ? রক্তের মধ্যে সামান্য একটু কাৰ্বন-ডায়ক্সাইডের আধিক্য কি নিরবয়ব নাস্তিকে মূৰ্ব বাস্তব কfরয়। তুলিতে পারে ? জানি না। আমার যুক্তি-বিধিবদ্ধ বুদ্ধি এই স্বপ্নের আঘাতে বিপৰ্য্যস্ত হয়! গিয়াছে । যে-শিশু কাদিয়া উঠিল, সে কে ? আমি ? অার সেই জলদমন্দ্র কণ্ঠস্বর –পুৰাতন ভায়েঃ খুলিয়া দেখিতেছি, ৩৫ বৎসর পূৰ্ব্বে ৩র চৈত্র রায় ১টা ১৭ মিনিটে আমার জন্ম হইয়াছিল। দেখিতেছি, আমার সম্মুখে অতৃছিল অঙ্গাব-পিণ্ড জলিতেছে। বৃহৎ অঙ্গা ব-চুল্ল", ভস্থার ফুংকারে উগ্ৰ নিধুম প্রভায় উদ্ভাসিত হইয় উঠতেছে, আবার ভগ্নার নিস্তেজ রক্রিমবর্ণ ধারণ এই অগ্নির মধ্যস্থলে প্রোথিত কুহিয়াছে বিরামকালে অপেক্ষাকৃত করিতেছে । আমার অসি-ফলক । কক্ষ ঈষদগ্ধকার ; চারি দিকে মামা আকুতির শেহ-ফলক বিক্ষিপ্ত বুহিয়াড়ে । কোনটি খঙ্গের আকার ধারণ কfরতে করিতে সহসা থামিয়া গিয়াছে ; কোণটি দণ্ডের আকারে শূল অথবা মুদ্রগরে পরিণত হইবার আশায় অপেক্ষ করিতেছে। প্রাচীরগাত্রে স্বসম্পূর্ণ ভল্ল অসি লেীঃ জালিক সজ্জিত রহিয়াছে । অঙ্গার-পিণ্ডের আন্সোকে ইহার ঝলসিয়া উঠিতেছে, পুনরায় স্নান অস্পষ্ট হইয়া যাইতেছে। এই দুখ দেখিতে দেখিতে স্বপ্নলোকে জাগিয়া উঠিলাম। জলস্থ চুল্লীর অদূরে বেয়াসনে বসিয়া আমি করলঃ কপোলে দেখিতেছি, আর অসিধাবক তণ্ডু অগ্নির সম্মুখে বসিয়া ভগ্না চালাইতেছে।