পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوچ fাৰ্ব্বতীর এই আকস্মিক ব্যবহারের সঙ্গে কমলাপুরীতে পাৰ্ব্বতীর যে ক্লান্ত উদাস মূৰ্ত্তি সে দেখেছিল তার যেন একটা নিগূঢ় যোগ আছে। চিন্তা করতে করতে পাৰ্ব্বতীর প্রত্যেকটি আচরণ, শচীন্দ্র-সংক্রাস্ত পাৰ্ব্বতীর সমস্ত কথা আলোচনা করে তার কাছে ক্রমেই সব যেন পরিষ্কার হয়ে এল। শচীন্দ্র এবং পাৰ্ব্বতীর মধ্যে যে একটা হৃদয়ঘটিত ঘটনার অঘটন ঘটেছে এ সম্বন্ধে তার যেন আর সংশয় থাকতে চাইল না। ব্যঙ্গপূর্ণ হাসিতে তার মুখটা ভরে উঠল। মনে মনে বললে, ‘বাংলাদেশের এই সব নেড়ানেড়ীদের দিয়ে আবার দেশের স্বাধীনতা ফিরবে ! যারা নিজেদের লীলা নিয়েই দিনরাত মত্ত তারা আবার প্রাণ দেবে দেশের জন্যে পাৰ্ব্বতীকে আরও মূল্যহীন, বস্তুহীন বলে তার মনে হতে লাগল। ভাবলে, শচীন্দ্রকে দেশের কাজে ভজাবার চেষ্ট পণ্ডশ্রম হবে । এদের কাছে রঙ্গলালকেও তার মানুষের মত মানুষ বলে মনে হ’ল,—রজলালের মধ্যে অন্তত এই রঙ্গ ক’রে বেড়াবার স্বাকামি নেই । আসল কথা, নিখিলের প্রতি এই প্রকার মুকুমার মনোবৃত্তি অধুনা তার কঠোর চিত্তেও বোধ করি অন্তরে অন্তরে গোপনে দুৰ্ব্বলতার সঞ্চার করেছিল । নিজের সেই দুৰ্ব্বলতার আভাসকে তীব্র ঘৃণায় অস্বীকার করবার উত্তেজনায় কাউকে সে শাস্তভাবে সহজ ভাবে বিচার করবার ধৈর্য্য মনে মনে রক্ষা করতে পারছিল না । তার নিজের চিত্তের অবজ্ঞাত, সদ্যজাগ্রত হৃদয়াবেগের বিরুদ্ধে তার নিজের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে অস্তরে তার সংগ্রাম চলছিল এবং সেই সংগ্রামে, তার মগ্ন অস্তরে তার পরাজয়ের চেতনায় তাকে নিজের প্রতি এবং অপরের প্রতি নিষ্ঠুর করে তুলেছিল। ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে সে একখানি এক্কা ক’রে শহরটির ভূপরিচয়ের একটা মোটামুটি ধারণা করে নিলে। শচীন্দ্রের বাড়ীতে গিয়ে যখন সে পৌছল, বেলা তখন পড়ে আসছে। ভগ্নপ্রাচীরবেষ্টিত নিস্তন্ধ বনাকীর্ণপ্রায় এই গৃহে প্রবেশ করতে সহসা সকলের সাহসে কুলত না । হঠাৎ দেখলে, বাড়ীটিতে লোক আছে বলে ধারণাই হয় না। বাটীর এক পাশের ঘর থেকে অল্প অল্প ধূমোদগীরণ-রেখা লক্ষ্য করে সে গিয়ে ধীরে ধীরে কড়া নাড়া দিতে লাগল। মিনিট পাচেক পরে দরজা খুলে একটি রুদ্রমূৰ্ত্তি হিন্দুস্থানী পাচক (মহারাজ ) “কোন হয় রে” ব’লে সীমাকে দেখে অপরাধ-ভয়েই হোক বা স্ত্রীলোক-জ্ঞানে সমীহ ক’রেই হোক—এমন বিমূঢ় হ’য়ে পড়ল যে বাক্যব্যয়মাত্র না করে পিছন ফিরে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে ছাদে তার মনিবের কাছে গিয়ে উপস্থিত হ’ল । এবং অত্যস্ত উত্তেজিত সন্ত্রমের সঙ্গে বলতে লাগল, “মাইজি, আয়ী হ্যয়ে হুজুর। হামারা কুছ কস্বর নহি হ্যয় । ময়নে সোচা কি কোই বদমাস---” শচীন্দ্র তাড়াতাড়ি উঠে বললে, “মাইজি কি রে ? মাইঞ্জি কোথেকে এল ?” হঠাৎ তার মনে হ’ল মুত কমলা তার ধ্যানলোক থেকে অকস্মাৎ এসে উপস্থিত হ'য়েছে ; কিংবা কমলা কি জীবিত ? সে কি সত্যই ফিরতে পারে মা ? “হা হুজুর, মাইজি বেশক ” “কি রকম দেখতে রে, খুব গোর ?” “ই নহি এভলা গোর নাহি ।” শচীন্দ্র বুঝতে পারলে কমলা নয়। কমল হওয়া সম্ভব* নয় । যে মৃত তাকে জীবিত কল্পনা করার শিশুঞ্জণেfচত দুরাশা এখনও তাকে পরিত্যাগ করে নি মনে ক’রে তার হাসি পেল । মেয়েটি যে পাৰ্ব্বতী এ-বিষয়ে তার সনে? রইল না, এবং পাৰ্ব্বতীর স্নেহের এই নিদর্শনে তৎক্ষণাং মনটা তার কমলার চিন্তা থেকে পাৰ্ব্বতীর প্রতি করুণা পূর্ণ হয়ে উঠল । নীচে নেমে সে সীমাকে দেখবার পূৰ্ব্বেই “পাৰ্ব্বতী" বলে ডেকে বেরিয়ে এল এবং একজন অপরিচিত তরুণীহে দেখে অকস্মাং ধেন ভদ্রত করবার ভাষাও খুঁজে পেল না । শচীন্দ্রকে বিব্রত হ’য়ে পড়তে দেখে সীমা বললে, “আমার সঙ্গে আপনার পরিচয় নেই, কিন্তু গত কয়েক দিন শুং আপনার পরিচয়ই নিয়ে বেড়িয়েছি এবং অবশেষে আপনা গ্রামে গিয়ে আপনার ঠিকানা সংগ্রহ করে এখানে এসেছি পাৰ্ব্বতী দেবীও আমার সঙ্গে আসডেন, কিন্তু কিছু বা পড়ায় তিনি আসতে পারেন নি। আপনাকে বিরক্ত করা: এলাম। আপনার ঠিকানা সংগ্রহ করতে মে-বেগ পো হয়েছে তাতেই বুঝছি এমন নির্জনবাস আপনি ইচ্ছে ক't