পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.এবেণী $ళిS কিছুই না। "মানবের টিউশাধন কোন দিন আমার চিত্তকে চঞ্চল ক’রে নি। দেশের সেবা এমন কি বাংলার সেবা কিংবা নারীজাতির মঙ্গলসাধন, কোন কালে আমার চিত্তে স্থান পায় নি। আমার পত্নীর স্মৃতিকল্পে যে-কোন একটা কিছু করতে পারলেই আমি তৃপ্ত হতাম। পাৰ্ব্বতী, পাৰ্ব্বতাই তার প্রাণ দিয়ে হৃদয় দিয়ে এবং অক্লাস্ত সেবা দিয়ে একে গড়ে তুলেছেন । তা নইলে জনহিতটিত ও সব আমি কখনও চিন্তাও করি নি । কৰ্ম্মচারী । তিনিই কমলাপুরীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী—” কথাটা ব’লেই শচীন্দ্রের একটু বিসদৃশ বোধ হ’তে লাগল। সে লজ্জিত হয়ে চুপ করে গেল । উচ্ছ্বাসের মুখে তার পত্নীর স্মৃতির প্রতি এ যেন একপ্রকার অবমানমঃ । সে অন্যদিকে ফিরে লিঞ্জের এই অনুভব করতে চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেঙ্গ সে-ভাব তার মন থেকে মুছে গিয়ে পাৰ্ব্বতী যে নিজেকে অপরাধ ‘কৰ্ম্মচারী মা র’ ব’লে উল্লেখ ক’রেছে, পরিত্যক্ত পাৰ্ব্বতীর সেই উfফু অভিমানজনিত কল্পনা করে, অতুতপ্ত চিত্তে মনে মনে সেই বিষয় আলোচনা করতে লাগল। শচীন্দ্রের ও পাৰ্ব্বতীয় মনোভাব সম্বন্ধে সীমার আর কোন সন্দেহ রইল না । ‘অধিষ্ঠাত্রী দেবী কথাট তার কানে কৌতুকাবহ বোধ হ’লেও কথাটাকে সে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেল। যদিও তার মনে আর সন্দেহ ছিল না যে শচীন্দ্র তার কথায় তাদের কাজে এসে যোগ দেবে না, তবু সে একবার শেষ চেষ্টা ক'রে দেখলে । নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে মনে মনে একটা মোটামুটি রিহারস্তল দিয়ে, সংযত অথচ ভাবালুতার আভাসে স্নিগ্ধ গভীর স্বরে সে বলতে লাগল “দেখুন, সাত্য কথা বলতে কি, জনহিতব্ৰত, অর্থাৎ নিছক লোকের মঙ্গলের জন্যে কিছু করা, মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক নয় । ওটা সভ্যজগতে মুরু হয়েছিল আত্মরক্ষার্থে। ক্রমে মানুষ যত পাকা সামাজিক জীব হয়ে উঠতে লাগল ততই ও-জিনিষটার উপর একটা মহত্তর উদ্দেশ্য আরোপ করলে এবং পুণ্যশ্লোভী মাম্যকে পরহিতসাধনে প্রলুব্ধ করে তুললে। কিন্তু স্বাধীনতার ইচ্ছা আমাদের জন্মগত, মজ্জাগত মৃতরাং স্বাভাবিক। তাই মাছুষ প্রতিfনয়ত ধৰ্ম্মের মধ্যে, সমাজের মধ্যে, রাষ্ট্রের মধ্যে কেবল মুক্তি কামনা করে চলেছে। অার এক দল স্বার্থাম্বেষী মানুষ যুগের পর যুগ এদের বাধতে চেয়েছে বৈরাগ্যের, সংযমের, শাস্তির লোভ দেখিয়ে । কিন্তু পারে নি। মানুষ মানুষের চাপে মুক্তির নিশ্বাসের জন্তে ইপিয়ে উঠেছে । সেই আদিম তৃষ্ণা, সেই মহান চেষ্টা, কেউ টুটি চেপে মারতে পারে না । সেই তৃষ্ণ এই আমাদের মধ্যেও, জড় ব’লে নিজীব ব’লে, মৃত ব'লে যাদের শ্রীবিতের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে—তাদের মধ্যেও তীব্র ব্যাকুল চিত্তপ্লাবী কান্নায় ফেটে পড়তে চাচ্ছে। স্বভাবের সেই শ্রেষ্ঠতম, মহত্তম, পবিত্রতম সম্পদলাভে কেন আমরা নিজেদের বঞ্চিত ক'রে রাখব?—আমরা মহাকাশের মূল্যে ক্রয় করা একমুষ্টি উচ্ছিষ্টের লোভে লৌহপিণ্ণরের মধ্যে ব'সে নিমীলিত নেত্ৰে ইষ্টনাম জপ করব কেন ?” বলতে বলতে সীমা উঠে এসে সহস শচীন্দ্রের দুটো হাত ধরে বললে, “দেখুন, আপনার ¦ আপনার বোন ব’লে আমি পরিচয় দিয়েছি । এই প্ৰগলভ ছোট বোনটির কথা শুতুল । ঝেড়ে ফেলুন আপনার ভাববিলাসী মনের জড়তা । নেমে আইন আপনার সমস্ত শক্তি নিয়ে যেখানে মানুষের চাপে মানুষ পিষে মারা যাচ্ছে, মানুষের দেবতা যেখানে লাঞ্ছিত হয়েছে । আপনার সমস্ত অর্ঘ্য দিয়ে সেই শ্মশানকে মুক্তিতীর্থে পরিণত করুন।” বলে সে ভাবাবেগে অভিভূত হয়েই যেন তার স্থির দৃষ্টি আকাশের দিকে তুলে চুপ করে পাশে বসে পড়ল । শচীন্দ্র অবাক হয়ে চাইল তার মুখের দিকে। ভাবলে এমনি ক’রে নিজেকে ভুলে একটা মহত্তর কাজের মধ্যে সম্পূর্ণ আত্মহারা হতে পারলে সে বেঁচে যেত। অপরিচিত তন্ত্ৰী মেয়েটির অপূৰ্ব্ব নিষ্ঠ, দেশের কাজে আত্মদানের মহত্ব তাকে অভিভূত করতে লাগল। কি যে তার কাজের স্বরূপ তা সে ঠিকমত্ত জানে না ; কিন্তু এই নিঃসঙ্গ মেয়েটি যে তার গৃহ, তার সমাজ, তার ব্যক্তিগত সমস্ত মুখস্বাচ্ছদ্য आशभ-ञानून পরিত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েছে, সহায়-সহানুভূতিবিহীন মিঠুর সংসারের মধ্যে, তাদেরই জন্তে ফা - তার আহবানকে বাতুলের প্রলাপ বলে অশ্রদ্ধ করবে,—এরই করুণ তার মনকে গভীর ভাবে স্পর্শ করলে। তবু তার বড় প্রিয় সেই স্মৃতি-মন্দিরের পবিত্রতা অন্য সাংসারিক বিক্ষোভের আঘাতে আবিল হয়ে উঠবে, এ সে ভাবতে পারে না ।