পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سیارکSجد প্রবাসী $\938 গাম্ভীর্ঘ্যের খোলার ভিতর ঢুকিয়া পড়িত। গান গাহিতে বলিলে সে পদ ভুলিয়া যাইত, বাজনা বাজাইতে বলিলে তাহার হাত ব্যথা করিত এবং সকল বিষয়েই পিসিমার কন্যাকে আপনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলিয়া প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিত। দেখিতে দেখিতে মিলির বয়স প্রায় বাইশ হইল, কিন্তু রেঙ্গুনে তাহার বিবাহ হইবার কোন আশা দেখা গেল না । পালিত-গৃহিণী মহা ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন, যেমন করিয়াই হউক মেয়ের বিবাহ দিতে হইবে। বেশী ভাল করিতে গিয়া শেষ পর্ষ্যস্ত মেয়ের যদি মোটে বিবাহই না হয়, তখন ও-মেয়ের দশা কি হইবে ? তিনি তলে তলে খোজ লইতে লাগিলেন সুরেশ কিছু কাজকৰ্ম্ম করে কি না। শোনা গেল সে একটা আপিসে একশত টাকা মাহিনায় কাজে ঢুকিয়াছে। অন্ত ছোটখাট কাজেও কিছু কিছু করিবার চেষ্টা করে । গভীর দীর্ঘনিশ্বাসের সহিত পালিত-গৃহিণী বলিলেন, “মেয়েটার অদৃষ্টে এই লেখা ছিল!” দেবরের সহিত পরামর্শ করিয়া তিনি ঠিক করিলেন ষে মিলিকে দেশে আনাইয়া স্বরেশের সহিতই বিবাহ দিবেন। কিন্তু নরেশ্বর গেলেন ক্ষেপিয় । তিনি বলিলেন, “আমি চললাম এদেশ ছেড়ে । তোমাদের যা খুশী তোমরা করগে যাও।” রণেন্দ্র বলিলেন, “দাদা ভুলে যান যে তিনি যেমন জেদী, তার মেয়েটিও ঠিক তেমনি হতে পারে। ওর কপালে টাকা নেই তুমি ত বলছই । এই বেল বিয়ে দিয়ে দাও, তবু স্বামী ভদ্রলোক হবে, সে একটা সাস্তুনা।” মিলি আসিয়াছে, তাহার পিতা পলাতক । কিন্তু তৎসত্ত্বেও মহা ঘটা করিয়া বিবাহের আয়োজন লাগিয়া গিয়াছে। পালিত-গৃহিণী প্রথম শুভদিনেই বিবাহ দিবেন। আর একদিনও অকারণ নষ্ট করিবেন না । বাড়ীতে সকল জাতীয় কৰ্ম্মীরই খুব প্রয়োজন । কাজেই মিলি ও হৈমন্ত্রীর ষত বন্ধুবান্ধব আছে সকলেরই সৰ্ব্বক্ষণ আনাগোন চলিতেছে । মেয়ের দূরে থাকে, গাড়ী না পাইলে তাহাদের আসা শক্ত, সুতরাং তাঁহাদের চেয়ে ছেলেদেরই বেশী দেখা যায়। তপন, নিখিল, মহেন্দ্র প্রত্যহ দুই বেলাই আসে। কত রকমের জিনিষের যে ঐ একদিনের ব্যাপারের জন্ত প্রয়োজন তাহার ঠিক নাই। কাপড়-গহনাটা মেয়েদের এলাকায় পড়ে, কাজেই হৈমন্তী ও স্বধা তাহার ভার লইয়াছে। আর বাকি সব কাজই ছেলেদের। চিঠির কাজটায় ছেলেরা ইচ্ছা করিয়া মেয়েদেরও দলে লইয়াছে। নিখিল বলে, “মেয়েদেরই হাতের লেখা ভাল। তারা যদি চিঠির ঠিকানা লিখে দেন, তাহলে আমরা চিঠি ভাজ ক'রে পুরবার ভার নিতে পারি।” হৈমন্তীর এরকম কাৰ্য্য-বিভাগে আপত্তি । সে বলে, *তার মানে আপনারা শক্ত কাজগুলো আমাদের দিয়ে করিয়ে, নিজেরা থালি একটু হাত নাড়বেন ।” মহেন্দ্র বলিল, “তা নয় ! পৃথিবীতে কাজ পুরুষেই করে । মেয়েরা কেবল একটু মিষ্টি কথা বলে তাদের মনট খুশী রাখে।” মিলি বলিল, “শুধু মিষ্টি কথা বলার ভার নিয়ে যদি সংসারে আমরা একবার বেরোই, তাহ’লে পরশুরামের পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করার মত দু-দিনে পুরুষজাতি সব স্ত্রীলোকের মাথা কেটে রেখে দেবে।" নিখিল বলিল, “বাপরে, বিয়ের কনে হয়ে আপনি পুরুষজাতির নামে এমন কথা বলছেন । আপনার চক্ষে কোনো মোহের অক্ষণ আছে বলে ত মনে হচ্ছে না ।” মিলি বলিল, “আছে বলেই ত জেনে শুনেও এমন পাগলামি করছি । ভাল মন্দ সব জেনেও মামুষের নিজের সম্বন্ধে সৰ্ব্বদাই মনে কতকগুলো দুরাশ থাকে।” নিখিল বলিল, “আচ্ছা, একটা ভাগাভাগি করলে হয় না ? আমরা যতক্ষণ কাজ করব ততক্ষণ আপনার মিষ্টি কথা বলবেন অর্থাৎ গান করবেন, এবং আপনারা যতক্ষণ কাজ করবেন ততক্ষণ আমরা আমাদেরসাধ্যমত মিষ্টি কথা বলব ।” হৈমন্তী হাত জোড় করিয়া বলিল, “দোহাই নিখিলদা, আপনি ওকাজের ভার নেবেন না, তাহলে আমাদের সব ঠিকানা ভুল হয়ে যাবে।” নিখিল বলিল, “আমি বুঝতে পেরেছি, তপন ছাড়া আর কারুর গান এ সভায় মঞ্জুর নয়।” তপন লাল হইয়া উঠিয়া বলিল, “ন, ন, তা কেন ? আপনার গানই আজ সকলের জাগে শোনা হবে।”