পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৪ মাষ্টার মশায়ের কানমলা, সেই বটগাছ—সেই সব যেন চোখের সামনে ভাস্ছে। আমার কি মনে হয় জান ভাই গজু?—যেদিন চলে যায় সেদিন আর ফিরে আসে না ।-••* তত ক্ষণে দু-জনে একট। অন্ধকার গলির মোড়ে আসিয়া পড়িয়াছেন। শ্ৰীপতিবাবু দেখিলেন এইখানেই স্নবিধা । কাজ হাসিল হইবামাত্র ঝর্ণ করিয়া গলির ভিতর ঢুকিয় অদৃপ্ত হইয়া যাইবেন কোনও অজুহাতে । এবং অজুহাতের জন্য ক্রপতিবাবুকে কোনদিনই বিশেষ ভাবিতে হইত না— এ-বিষয়ে তিনি সিদ্ধহস্ত—অর্থাৎ সিদ্ধমুখ ছিলেন। সেইখানেই দাড়াইয়া পড়িয়া হঠাৎ কি যেন ভাবিয়া ত্ৰপতিবাবু কহিলেন, “হ্যা ভাই গজু, তোমার কাছে একটা সিকির চেঞ্জ হবে ?" কারণ ইতিপূৰ্ব্বে গজুবাবুর পকেটের আওয়াজ শুনিয়াই বুঝিয়াছিলেন তাহার পকেটে যথেষ্ট চেঞ্জ আছে এবং সিকির চেঞ্জ থাকার খুবই সম্ভাবনা। দেখা গেল শ্ৰীপতিবাবুর ওস্তাদ কান তাহাকে ভুল আন্দাজ দেয় নাই। গজাননবাবু বলিলেন, “তা হবে।” বলিয়া চারিটি আনি বাহির করিলেন । শ্ৰীপতিবাবু তাড়াতাড়ি আনি চারিটি লইয়। গজানন বাবুর হাতে সিকিট দিয়া “তাহ’লে অাসি ভাই, আবার দেথfহবে নিশ্চয়ই" বলিয়া সা করিয়া গলির ভিতর অদৃপ্ত হইবার উদ্যোগ করিতেছিলেন। কিন্তু গজাননবাবু দালাল মানুষ, মানুষ চরাইয়া খান । ঝামু তিনি পানওয়ালাদের চাইতে কম নহেন । সিকিট হাতে পাইয়াই কহিলেন, “দাড়াও হে শ্ৰীপু, এ কি সিকি দিয়েছ ! এ যে একেবারেই তোমার গিয়ে সাঁসে।” শ্ৰীপতিবাবু আর একবার আকাশ হইতে পড়িলেন, বলিলেন, “অঁ্য, বল কি ? সাঁসে ? না, ভালমানুষ পেলে দেখছি সবাই ঠকায় । দুনিয়ায় দেখছি কাউকে বিশ্বাস করা যায় না !” গজাননবাবুকে তাহার চারিটি আনি ফেরত দিতে হইল। গজাননবাবুও সেই পানওয়ালাটার মত এমন বিশ্রী রকম হাসিলেন যে এই অনেক দিনের পরে দেখা বন্ধুটির কাছে ঐপতিবাবুর অত্যন্ত লজ্জ করিতে লাগিল। সীতা দেবীর মত ধরণীকে দ্বিধা করিয়া তাহার পাতালে প্রবেশ করিতে একবার ইচ্ছা হইল। কিন্তু তাহা সম্ভব হইবে না বুঝিয়া প্রবাসী N988 পাশের গলিতে প্রবেশ করাই তিনি ঠিক করিলেন, এবং যাহা করা ঠিক করিলেন তাহা করিতে বিন্দুমাত্রও বিলম্ব করিলেন না। “এখানে আমার একটু বিশেষ কাজ আছে” বলিয়া তিনি গলিতে ঢুকিয়া পড়িলেন, এবং গজাননবাবু আপনার কাজে চলিয়া গেলেন । “উঃ ! গছুটা কি চামার হয়ে উঠেছে আজকাল !" অত্যস্ত দুঃখের সহিত ভাবিতে লাগিলেন শ্রীপতিবাবু। "আমি সিকিট দিলুম সেটা বিশ্বাস ক’রে নিতে পারল না, বাজিয়ে দেখল ! ওঁ ! বন্ধু পৰ্য্যন্ত আজকাল বন্ধুকে বিশ্বাস করতে পারে না!” যে-পৃথিবীতে বন্ধু পৰ্য্যন্ত বন্ধুকে বিশ্বাস করিতে পারে না সে-পৃথিবীতে বাচিয়া থাকিয়া কোন লাভ আছে কি না, ইহাই চিন্তা করিতে করিতে এবং পৃথিবীটা যে কি ভয়ানক খারাপ হইয়া উঠিতেছে তাহ ভাবিয়া শ্ৰপতিবাবুর দুটি চোখ সজল হইয়া উঠিল—সারাটা হৃদয় ব্যথায় আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল । বলা বাহুল্য, গলিটির ভিতর শ্রীপতিবাবুর বিশেষ বা অবিশেষ কোন রকম কাজই ছিল না । কাজেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিয়া যখন বুঝিলেন চামার গজানন অনেক দূর চলিয়া গিয়াছে তপন গলি হইতে বাহির হইয়া আবার বড় রাস্তায় চলা স্বরু করিলেন এবং চলার সঙ্গে সঙ্গে ভাবিতে লাগিলেন, "এবারে কি করা যায় !" খানিকট অগ্রসর হইতেই দেখা হইল মন্ট, বাবুর সঙ্গে। শ্রপতি বাবু ভারী খুশী হইয়া গেলেন, কেন-ন মণ্ট, বাবু অসাধারণ ভালমাতুষ । তাহাকে পরম হংসও বলা যাইতে পারে—হাস যেমন দুধ এবং জলের মিশ্রণ ইষ্টতে দুধটুকুই গ্রহণ করে, মণ্ট, বাবুও সেইরূপ লোকের দোষ ছাড়িয়া কেবল গুণটুকুই গ্রহণ করিতেন । মানুষ যে খারাপ হইতে পারে ইহা তাহার ধারণার অতীত, তাহার ধারণা এই যে মানুষমাত্রেই ধৰ্ম্মপুত্র যুধিষ্ঠির। ঘোর সত্যযুগের মাঝখানে ঘুমাইতে স্বরু করিয়া ঘোর কলিযুগের মাঝখানে যেন মণ্ট বাৰু সবেমাত্র তাহার রিপ ভ্যান উইঙ্কলকে হারমানানো ঘুম হইতে জাগিয়াছেন। মণ্ট,বাবুর কাছে হয়ত সিকির চেঞ্জ আছে, এবং যদি থাকে তাহা হইলে অচল সিকিটা তাহার ঘাড়ে অনায়াসেই চাপানে যাইবে, এ-কথা মনে করিষা ঐপতি বাবুর মন এমন একটা