পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミb-8 প্রবাসী ১৩৪৪ এই সকল বিশাল শিক্ষাকেন্দ্রে দূরদূরাস্ত হইতে হাজার হাজার বিদ্যার্থী আসে। বৃহত্তর কেন্দ্র ডে-পুং, সেখানে সাত হাজার সাত শতাধিক বিদ্যার্থী আছে ; তাহার পর সে-রা, যেখানে সাড়ে পাচ হাজার ছাত্র বিদ্যালাভ করে। গন-দন ও ট-শী-লুন-পে এই দুই কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে সাড়ে তিন হাজার ছাত্র আছে। টশী লামা দেশত্যাগী হওয়ায় ট-শী-লুন-পো কিছু নীচে নামিয়াছে । এই সকল বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানের কথা পরে আরও বলিবার ইচ্ছা আছে। এ-সকলে উত্তরের সাইবিরিয়া, পশ্চিমের অস্ত্রাথান ( দক্ষিণ রুষ ) ও পূৰ্ব্বাঞ্চলের চীন জেহোল প্রদেশের বহু বিদ্যার্থী দেখিতে পাওয়া যায় । মহাবিদ্যালয়ের মত ইহাদের ছাত্রাবাস, পুস্তকালয় ও দেবালয় আছে এবং প্রত্যেকটিতে পৃথক জায়গীর আছে—এমন কি ক্ষুদ্রতম ছাত্রাবাসেও । উচ্চ শ্রেণীতে অধ্যয়ন প্রগাঢ়তর হয়, তবে গ্রন্থাদি মুখস্থ করার পারিপাট্য এখানেও চলে। আমাদের ছাত্রের ক্রিকেট ও ফুটবলে যে আনন্দ পায় এখানকার ছাত্রেরা ন্যায় ও দর্শন সম্বন্ধে শাস্ত্রার্থ করায় সেক্টরূপ উৎসাহ ও আনন্দ প্রকাশ করে । এখানকার উ-সঙ বা মহাবিদ্যালয়ের মূ-খন-পো ( ডীন ) যদিও উচ্চশ্রেণীর পণ্ডিত ও বিদ্বানগণ হইতে গৃহীত হইয়া থাকেন কিন্তু অধ্যাপমার কার্য্য প্রধানত: গেরু-গেন ( লেকৃচরার ) বা গে-শে (প্রোফেসার)গণই করিয়া থাকেন। অধ্যয়ন সমাপনান্তে বিদ্বন্মণ্ডলীর মত অন্তকুল হইলে বিদ্যার্থী ল্য-রমূ-প, অর্থাৎ ডক্টর, উপাধি পায়। তাহার পর সে নিজ মঠে ফিরিয়া যায় এবং যদি পঠনপাঠনে তাহার অধিক ইচ্ছা থাকে তবে সে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গে-শে বা গেৰ্ব-গেন হইতেও পারে । তিব্বতে ভিক্ষুণীদিগেরও শত শত মঠ আছে, সেখানে ভিক্ষুণীদিগের বিদ্যালাভের ব্যবস্থা আছে। এই সকল মঠ ভিক্ষু-মঠ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক ও দূরে অবস্থিত। সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা যদিও এগুলিতে আছে, কিন্তু কোনও ভিক্ষুণীবিশ্ববিদ্যালয় মাই এবং ভিক্ষুণী-বিদ্যখিণী ভিক্ষু-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করিতেও পারে না । ইহাদের শিক্ষা প্রধানতঃ সাহিত্য, ধৰ্ম্ম ও পূজা-পাঠ সম্বন্ধীয় হইয় থাকে। যদিও গৃহস্থ-ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করিতে পারে না কিন্তু মঠে উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত ছাত্রের গৃহস্থের শিক্ষকতা করায় কোনও বাধা নাই। যে কোন গৃহস্থ-ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পুস্তকাগারে গিয়া পুস্তক পাঠ করিতে পারে কিন্তু ছাত্রাবাসে তাহার থাকা নিষিদ্ধ হওয়ায় এই নিয়মে তাহার বিশেষ উপকার হয় না । অন্যদিকে উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত ভিক্ষু অতি অল্প ক্ষেত্রেই পুনৰ্ব্বার গৃহস্থ হয়, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সরকারী কার্ধ্যে তাঁহাদের চাহিদা খুবই বেশী। বিশেষ নিয়মানুসারে সরকারী প্রত্যেক কৰ্ম্মক্ষেত্রে একজন গৃহস্থ ও একজন ভিক্ষু এইরূপ জোড়া জোড়া চাকুরী হওয়ায় ইহাদের উচ্চপদলাভ সহজেই হয়। উদাহরণস্বরূপ আমার বন্ধু কুশে-তন-দর ভিক্ষুর নাম করা যাইতে পারে, তিনি লাসার টেলিগ্রাফ অফিসের দুই জন অফিসারের অন্যতম । ধনী বংশের বালকবালিকা নিজ গৃহের লামার নিকট শিক্ষালাভ করে। বালিকাদিগের এই প্রারম্ভিক শিক্ষাতেই সন্তুষ্ট থাকিতে হয়, তবে ভিক্ষুণী হইবার ইচ্ছা থাকিলে আরও কিছুদূর লেখাপড়া হইতে পারে। সাধারণ স্ত্রীলোকের লেখাপড়ার অভাবই অধিক। ধনীদিগের বালকগণ বিশেষভাবে নিযুক্ত অধ্যাপকের নিকট পড়িতে পারে, সাধারণ শ্রেণীর বালকের পক্ষে বয়োজ্যেষ্ঠদিগের নিকট অধ্যয়ন বা গ্রামস্থ মঠের পাঠশালা ভিন্ন বিদ্যাশিক্ষার অন্য কোনও পথ নাই । লাস, শীগর্চে ইত্যাদি নগরে কোন কোন পণ্ডিত নিজ নিজ বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছেন যেখানে অল্প ব্যয়ে শিক্ষালাভ সম্ভব। এখানে শিক্ষার ক্রম ভিক্ষু-শিক্ষালয়েরই মত, তবে দর্শন ও ন্যায় একেবারেই শিথানে হয় না। লাসায় সরকারী কাজকৰ্ম্ম শিক্ষার জন্য চী-পন নামক বিদ্যালয় আছে সেখানে হিসাব-কিতাব ইত্যাদি রাখার পদ্ধতি শিথান হয় এবং এই বিদ্যালয় হইতেই উপযুক্ত লোক সরকারী পদের জন্য বাছিয়া লণ্ডয়া হয়। কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে ভোট-সরকার গ্যাঞ্চিতে ইংরেজী স্কুল স্থাপন করিয়াছিলেন, এবং অনেক সর্দার তাহীদের বালকদিগকে সেখানে শিক্ষার জন্য পাঠাষ্টয়াছিলেন কিন্তু প্রারস্তেষ্ট অতি উচ্চ বেতনে ইংরেজ ও অন্য শিক্ষক নিয়োগ করায় তাহ বেশী দিন ইগরা চালাষ্টতে পারেন নাই । দুই-চারিটি বিদ্যার্থীকে সরকারী খরচে ইংলণ্ডেও পাঠানো হইয়াছিল কিন্তু তাতাদের শিক্ষণও আশাতুরূপ না হওয়ায় সে পন্থাও স্থগিত আছে । সংক্ষেপে তিব্বতে শিক্ষার অবস্থা এইরূপ। অন্য বিষয়ের ন্যায় শিক্ষাপ্রকরণেও বহির্জগতের ছায়া এদেশে বিশেষ পড়ে নাই। তবে ইহাতে সন্দেহ নাই যে, যে-সকল ব্যবস্থা বর্তমানে আছে সেগুলিতে নুতন বাতাস বহিলে, তিব্বতে আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি-বিস্তারে বিশেষ সময় লাগিবে না। 蕩 舉 碌 পূৰ্ব্ব দিকে চীন হইতে পশ্চিমে লাখ পৰ্য্যস্ত বিস্তৃত ভূমিখও তিব্বত দেশ। ইহা পৰ্ব্বতমালায় বেষ্টিত এবং গড়ে সমুদ্র হইতে ১২,০০০ ফুট উচ্চে স্থিত। উচ্চতার দরুন এখানে শীতের আধিক্য ও বায়ুমণ্ডল লঘু হওয়ায় এদেশে বৃক্ষ-গুন্মের অভাব আছে। মে-জুন মাসের গ্রীষ্মকালেও লাসার চারি দিকের পাহাড় তুষারাচ্ছাদিত থাকে, শীতকালের ত কথাই নাই ! হিমালয়ের বিশাল প্রাচীর পথরোধ করায় ভারতীয় সমুদ্রের মেঘমালা এখানে স্বচ্ছন্দে পৌছে না, সেই জন্ত এদেশে বৃষ্টি কম, তুষারপাতই