পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミふミ প্রশ্বাসী ృN998 অপ্রীতিকর নহে। মুসলমানদের মতে শাখ ও ঘণ্টায় তাহাদের উপাসনায় ব্যাঘাত জন্মে। এরূপ প্রশ্ন হইতে পারে, যে, উপরিলিথিত অন্য শব্দগুলি দ্বারা তাহা কেন হয় না, বা হইলে তাহাতে কেন আপত্তি হয় না। মুসলমানদের পক্ষ হইতে এই যুক্তিও প্রযুক্ত হইতে পারে, যে, শাখ ও ঘণ্ট। পৌত্তলিকদের পূজায় ব্যবহৃত হয় বলিয়া অপৌত্তলিক ধাৰ্ম্মিক মুসলমানদের নমাজে তাহাতে ব্যাঘাত হয়। পৌত্তলিক কে বটে, কে নয়, তাহার বিচার রাষ্ট্র করিতে পারে না । রাষ্ট্র অসাম্প্রদায়িক, রাষ্ট্রের কাছে সব ধৰ্ম্ম সমান । তা ছাড়া এ তর্কও উঠিতে পারে, যে, যে-কেহ বিশেষ কোন প্রাকৃতিক বা মতুষ্যনিৰ্ম্মিত জড় বস্তুকে যেরূপ পবিত্র মনে করে, অন্য সব জড় বস্তুকে সেরূপ পবিত্র মনে করে না, সে-ই কতকটা পৌত্তলিক । কিন্তু এ রকম তর্কের অসুসরণ আমরা করিব না । আমরা কেবল ইহাই বলিতে চাই, যে, সব ধৰ্ম্মসম্প্রদায় ও তাঁহাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্বন্ধে ঈশ্বরের যে নিরপেক্ষতা, যে ঔদার্ষ্য, যে তিতিক্ষা আমরা অতুমান করি, সকল সম্প্রদায়ের ঈশ্বরোপাসকের তাহা অর্জন করিবার চেষ্টা করা উচিত। কোন যুক্তি দ্বারাই প্রমাণ করা যায় না, যে, মঙ্গরমের ঢাকের আওয়াজ পবিত্র আর হিন্দুর মন্দিরের ঘণ্ট ও শাখের ধ্বনি অপবিত্র । ইহা প্রমাণ করা আরও কঠিন, যে, নীলামকারীর ঘণ্টার আওয়াজ পবিত্র বা অপবিত্র কিছুই নয়, কিন্তু সেই ঘণ্ট বা সেইরূপ ঘণ্টা হিন্দুর পূজাতে ব্যবহৃত হইলেই তাহা অপবিত্র ও আপত্তিজনক হইয়া উঠে। পুনায় হিন্দুদের পূজায় ব্যাঘাত জন্মাইয়া তথাকার ম্যাজিষ্ট্রেট অত্যন্ত অন্যায় কাজ করিয়াছেন । তথাকার পুলিস যে পূজার জন্য মারুতি মন্দিরে গমনোন্মুখ হিন্দুদিগকে লাঠি মারিয়া তাড়াইয়া দিয়াছে, ইহা সম্পূর্ণ বৰ্ব্বরোচিত কাজ । এই হিন্দুরা কাহারও অনিষ্ট করিতে যাইতেছিল না, শাস্তিপুর্ণ ভাবে পূজা করিতে ঘাইতেছিল । তাহাদিগকে প্রহার করা কাপুরুষতা । তথাকার পুলিস বলিতে পারে, তাহারা ম্যাজিষ্ট্রেটের হুকুম লঙ্ঘন করিতে যাইতেছিল। এই হুকুমটাই যদিও ন্যায়বিরুদ্ধ, তথাপি তাহ আইনসঙ্গত বলিয়া মানিয়া লইলেও, পুলিসের লাঠি চালান কোন মতেই সমর্থন করা যায় না । পুলিস পুজার্থীদিগকে গ্রেপ্তার করিতে পারিত। তাহা হইলে তাহাদের বিচার হইত এবং শেষ পর্যন্ত জানা যাইতে পারিত ম্যাজিষ্ট্রেটের হুকুম ভারতবর্ষের ইংরেজরুত আইন অনুসারেও ন্যায্য হইয়াছিল কি না । অসহযোগ আন্দোলনের সময় সম্পূর্ণ অহিংস ও শাস্ত হাজার হাজার সত্যা গ্রহীকে পুলিস প্রহার করিত। তাহ নিন্দনীয় হইলেও তাহার একটা কারণ এই ছিল, যে, জেলে আর জায়গা কুলাইতেছিল না! পুনার কৰ্ত্তারা কি অনুমান বা আশঙ্কা করিতেছেন, যে, পুলিস লাঠি না চালাইয়া গ্রেপ্তার করিলে জেলে মারুতিমন্দির সত্যাগ্রহীদের জন্য জায়গার অভাব হইবে ? কোনও ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের কোন ধৰ্ম্মাহুষ্ঠান শাস্ত ও সুনীতিসঙ্গত ভাবে করিলে অন্য যে ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের লোকেরা শাস্তিভঙ্গ করিবে বলিয়া আশঙ্ক সরকারী কৰ্ম্মচারীদের হয়, সেই শান্তিভঙ্গকর-মনোবৃত্তি-বিশিষ্ট সম্প্রদায়কেই নিবৃত্ত করা ও রাখা গবন্মেণ্টের উচিত। কোন নগরের, জেলার, প্রদেশের বা দেশের রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্মচারীদের বা কর্তৃপক্ষের শাস্তিভঙ্গোলুৰ্থদের প্রশ্রয়দাতা ও শাস্তশিষ্টদের “দমনকৰ্ত্ত" হওয়া শুধু ধে উচিত নয়, তাহা নহে, তাহা হওয়াতে বিপদ আছে । কারণ, অশাস্তদের দৃষ্টান্ত হইতে শাস্তরাও কালক্রমে অশাস্ত হইয় উঠিতে পারে । তাহা বাঞ্ছনীয় নহে । আমরা উপরের কথাগুলি লিখিবার পর আজ ২৮শে বৈশাখের দৈনিকে দেখিতেছি, পুনায় প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ও জননায়ক নরসিংহ চিস্তামন কেলকর মহাশয় মারুতি মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনি সহকারে পূজা করায় পুলিস তাহাকে গ্রেপ্তার করিয়াছে। তাহার পূৰ্ব্বে আরও অনেক প্রসিদ্ধ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ঐ কারণে ধৃত হইয়াছেন। কেলকার মহাশয় লোকমান্য বালগঙ্গাধর টিলকের প্রধান সহকারী ছিলেন । তিনি ৭০ বৎসরের অধিকবয়স্ক এবং সম্প্রতি সাৰ্ব্বজনিক কাৰ্য্যক্ষেত্র হইতে অবসর লইয়াছেন । কিন্তু পুনায় হিন্দুদের উপর নিষেধাজ্ঞাটা অত্যন্ত অন্যায় ও অপমানকর বোধ হওয়ায় এই কাজ কাহাকেও না জানাইয়া করিয়াছেন। না জানাষ্টয়া করিবার কারণ, জানাইলে বিশাল জনতা মন্দিরপথে তাহার অনুগামী হইত ও পুলিস হয়ত লাঠি চালাইয়া জনতা ভাঙিয়া দিত । কেলকর মহাশয় কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন নাই । --