পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণঢ সেই শীতে বিনষ্ট হইল। বনের বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে বনবুক্ষত্রিত বানরজাতি আশ্রযুহীন হইয়া জীবনসংগ্রামে আত্মরক্ষার নূতন উপায় উদ্ভাবন করিতে বাধ্য হইল। এত দিন তাহারা গাছে গাছে বিচরণ করিয়া জীবনধারণ করিতেছিল । এখন নূতন অবস্থায় বৃক্ষশাখা ছাড়িয়া তাহাদের সমতলভূমিতে বাস করিতে হইল। প্রকৃতিদেবীর এই লীলার নিগুঢ় তত্ত্ব ক্রমশ প্রকাশিত হইতে লাগিল । চতুষ্পদ বানরকে তখন সমতলভূমির উপর বিচরণ ও বসবাসের উপায়স্বরূপ দ্বিপদ হইবার জন্য চেষ্ট৷ করিতে হইল । সেই চেষ্টার ফলেই দ্বিপদ মানুষ জগতে প্রথম আবিভূত হয়। স্বতরাং, হিমালয়ের অত্যুখনি শুধু একটি ভৌগোলিক ঘটনা নয়। উহার সঙ্গে মাতুষের অচ্যুত্থান ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। হিমালয় শুধু যে ভারতবর্ষকে পূর্ণাবয়ব করিল তাহ! নহে, তাহার ভৌগোলিক রূপ ও পরিণতি সম্পাদনের সঙ্গে হিমালয় মাতুষ ও মানুষের সভ্যতাকেও স্বষ্টি করিয়াছে । সুতরাং ভারতবর্ষই যখন মানুষের প্রথম জন্মস্থান বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে, তখন মাতুর্যের প্রথম সভ্যত যে ভারতভূমিকে আশ্রয় করিয়াই আবিভূত হইয়াছিল তাহ নিঃসন্দেহ *

  • উপরিউক্ত সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে নিম্নে কয়েকটি বিশেষজ্ঞ বৈজ্ঞানিকের

টক্তি উদ্ধত হইল (1) “Man nnd the Hiinalayas arose simultancously, towards the end of the Miocene Period. over a million years ago.” [Barcll (2) “As the land arose, the temperature would be lowered and some of the apes, the ancestors of man, who had lived in warm forests, would be trapped to the north of the raised area.” |Sir Arthur Smith Woodward| (3) “As the forests shrank and plains, the ancestors of man had to face living on the ground. previously gave place to If they had remained arboreal, or semiarboreal like the apes, there might never have been Man.” [Thomson and (leddes| (4) “The common ancestors of anthropoid apes and men probably occupied northern India during the Miocene Period.” [Elliot Smith] (5) “We have to go to the region north and south of the Himalayas to find peoples whose facial characteristics best resemble those of Cro-Magnon men, While their stature and bodily build are best displayed by the Sikhs,” [Professor Lull} ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত।

  • 3な

কিন্তু উত্তর-ভারতই যে মানবজাতির প্রথম লীলাক্ষেত্র ও সভ্যতার উৎপত্তিস্থান তাহার আরও প্রমাণ অন্য আর এক শ্রেণীর বৈজ্ঞানিকগণ উদ্ভাবন করিয়াছেন । উদ্ভিদবিদ্যার একটি শাখাবিজ্ঞান সম্প্রতি প্রচলিত হইয়াছে । এই নব বিজ্ঞানের উদ্বেগু উদ্ভিদের উৎপত্তিস্থান নির্ণয় করা । ইংরেজীতে ইহার নাম প্ল্যান্ট জেনেটিক্স। সোভিয়েট রুশিয়ার কতিপয় বৈজ্ঞানিক এই বিদ্যার বিশেষ অনুশীলন করিতেছেন। ইহাদের নেতার নাম ভেভিলফ (Wavilow) । ইহার দেখাইয়াছেন যে মানবের ইতিহাসে যতগুলি প্রধান প্রধান সভ্যতা আবিভূত হইয়াছে প্রত্যেক সভ্যতাই কৃষিকৰ্ম্ম এবং কোন একটি বিশেষ উদ্ভিদকে অবলম্বন করিয়! গড়িয়া উঠিয়াছে। প্রত্যেক সভ্যতাই ভূমিজ ও উদ্ভিদমূলক। সভ্যত ভাবের দ্বারা অতৃপ্রাণিত কিন্তু তাহণকে মাটির আশ্রয় লইতে হইবে আত্মপ্রকাশের জন্য । ভাবের সহিত ভবের মিলনেই সভ্যতা প্রস্থত হয় । ইহা একটি স্থির সিদ্ধান্ত যে ইউরোপের সভ্যতা গমের কর্ষণ করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে, আর আমেরিকা তার বদলে ভুটা বা গোধূম (maize) অবলম্বন করিয়াছে, চীনদেশ ও দক্ষিণ-ভারত ব্রীহি-যব-ধান্য প্রভৃতির আশ্রয় লইয়াছে । এই সকল অন্নোপায়ের মধ্যে গমষ্ট সৰ্ব্বাপেক্ষা বলপ্রদ। রাসায়নিকগণ প্রমাণ করিয়াছেন যে গোধুম খাদ্য হিসাবে তত ভাল নয়, কারণ ইহাতে স্বাস্থ্যের প্রধান উপকরণ ভিটামিন পাওয়া যায় না। সেই জন্য গোধূম-প্রস্থত-খাদ্যজীবী জাতি সাধারণত: পেলাগ্রা নামক চৰ্ম্মরোগে আক্রান্ত হয় এবং অপেক্ষাকৃত নিস্তেজ হইয়া সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে সমর্থ হইতে পারে না । খাদ্য হিসাবে গমই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ । ইউরোপীয়ু সভ্যতার সর্বাপেক্ষা উন্নতি গমের উপর প্রতিষ্ঠিত। ভেভিলফ প্রমুখ রুশের বৈজ্ঞানিকগণ সেই গমের উৎপত্তিস্থান অনেক অসুসন্ধান করিয়া আবিষ্কার করিয়াছেন। ইহ আফগানিস্থান ও পঞ্জাব প্রদেশের উচ্চভূমিতে । এই সঙ্গে তাহারা আরও দেখাইয়াছেন যে মিশরের সভ্যতাও গমের উপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু সেই গম ভারতীয় ও ইউরোপী গমের মত নয়। উহা ভিন্ন জাতীয় গম । উহার উৎপত্তিস্থান আবিসনিয়া। উহাকে বলে হার্ড হুইট, আর শ্রেষ্ঠ ভারতীয় গমের নাম ব্রেড-হুইট। সুতরাং এই সমস্ত বৈজ্ঞানিকের গবেষণা দ্বারা নিঃসন্দেহে নিৰ্দ্ধারিত হইয়াছে