পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অণষণঢ একদিনের জন্যেও অন্তত: সীমা !” সীমা হেসে বললে, “শ্রীরামপুরে যে পিণ্ডি খাইয়েছিলাম, তাই মনে ক’রে বুঝি ভয় পাচ্ছেন ? এখানে তার চেয়ে কিছু ভাল ব্যবস্থা করতে পারব । বরং চলুন আমাকে যদি কিছু সাহায্য করতে পারেন । কি বলেন ?” সীমার পরিহাসের মধ্যে স্নেহের স্পর্শটুকু পেয়ে নিখিল মনে মনে কৃতাৰ্থ বোধ করলে । কিন্তু এই সমুহ বিপদের সময় সীমার অসীম ঔদাসীন্যে অত্যস্ত বিচলিত হ’য়ে বললে, “সীম, আজ রক্ষা পেলে তোমার নিমন্ত্রণ আমার তোলা রইল। চল, দেখি কোন উপায় করা যায় কি না।” “বৃথা, নিখিলবাবু, চেষ্টার কোন রাস্ত নেই। আপনাকে ত বলেহছি যে আমাদের পালাবার উপায় একেবারে বন্ধ । ওসব কথা মিছে ভেবে কোন লাভ নেই আর । তার চেয়ে, আপনি ক্লাস্ত হয়েছেন, চলুন আপনাকে শুইয়ে দিই । আপনি একটু বিশ্রাম ক’রে নিন ততক্ষণ । খাবার হ'লে আপনাকে ডেকে তুলব না-হয় ।” বলে সীমা তাকে পাশের ধরে নিয়ে গেল । নিখিল সীমার মৃত্যুভয়হীন এই নিশ্চিন্ত দৃঢ়তার কাছে শেষে হার মানলে । মনে মনে প্রস্তুত হয়ে ভাবলে, আজ ওর সঙ্গে এক পরিণামের সৌভাগ্যই আমার জীবনের পরম সম্পদ হয়ে থাকুক। শাস্ত চিত্তে মৃত্যু সাক্ষী ক’রে আজ আমাদের মিলন ঘটুক। এমন প্রত্যক্ষ জীবস্ত সত্য সাক্ষ্য কার ভাগ্যে আর জুটেছে ! সীমা সযত্নে পরিপটি ক’রে বিছানা প্রস্তুত করলে । হাসতে হাসতে বললে, “আমাদের এনাকিষ্ট বলেই চিনে রেখেছেন ; তাই আমরা যে মেয়ের জাত সে-কথা আপনাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। আপনি শ্রান্ত, চিস্তাব্লিষ্ট, ক্ষুধাৰ্ত্ত হয়ে আমার কাছে এসেছেন, আর আমি কোন মুখে আপনার একটু সেবাযত্ন না করে বিদায় দেব বলুন ত । আমাদের বাইরের এই কদাকার রূপটাই আপনারা দেখেন, fভতরের মানুষটার উপর আপনাদের চোখ পড়ে না, না নিখিলবাবু ?” বলে সে নিখিলের দিকে আর না ফিরেই দ্রুত পদে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । পরিপূর্ণ পুলকে, গৰ্ব্বে, দুখে নিখিলের চোখ জলে مج بسبب ج 8 আমার অনুরোধ রাখ, _ ত্ৰিবেণী ; \ごWした。 ভীরে এল । সীমার স্নেহ-সংরচিত শুভ্ৰ শয্যায় তার ক্লাস্ত দেহ এলিয়ে দিয়ে নিখিল মুদ্রিত নেত্রে সীমার অন্তরবাসিনী স্নিগ্ধ সত্তাকে নিবিড়ভাবে হৃদয়ে অতুভব করতে লাগল। সম্মুখের বিপদ, পশ্চাতের বিবেকের তাড়না, সমস্ত জগতের বাস্তব অনুভূতি তার কাছে মিলিয়ে এল এবং পরম নিশ্চিন্ত ও সুনিশ্চিত এক রসান্তভূতিতে তার চিত্র পরিপূর্ণ হ’য়ে छेछब्न । 豪 粤 * দুশ্চিন্তা এবং সমস্ত দিনের ক্লাস্তিতে নিখিল ঘুমিয়ে পড়েছিল। রান্ন শেষ ক’রে সীমা যখন উঠল তখন রাত একটা বেজে গেছে । সে তাড়াতাড়ি স্বান সেরে গুচি হয়ে তার তত্ত্বদেহলতাটিকে একখানি কৌষেয় বস্ত্রে আবৃত ক’রে নিদ্রিত নিখিলের শয্যাপাশ্বে এসে দাড়াল । আঞ্জ যেন এই এক রাত্রের আনন্দে তার সমস্ত জীবন যৌবন তার নিখিল ভূবন নারীত্বের গৌরবে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঐ যে স্নেহশীল নিঃস্বার্থ মাহুষটি তারই রচিত শুভ্ৰ শয্যায় গুয়ে নিশ্চিন্তু আরামে ক্ষণকালের জন্যেও তার পরিবেশিত সেবা সম্ভোগ করতে পেরেছে, সীমার জীবনে এর চেয়ে পরিতৃপ্তির বস্তু যেন কিছুই সে মনে করতে পারে না। আজ সমস্ত জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই মৃত্যুসাগরের বিস্মৃতির ফুলে ওরা দুটিতে যেন একটি চিরস্মরণীয় স্নিগ্ধ কোমল শাস্তিনীড় রচনা করেছে। নিখিলের নিদ্রিত শ্রাস্ত মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে তার চোখ দিয়ে দুই বিন্দু অশ্র ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ল। সে অশ্রু আসন্ন বিরহজনিত শোকের, ন, পরিপূর্ণ আনন্দময় অনুভূতির, তা কে বলতে পারে । সাবধানে ময়ন মার্জন ক’রে গিয়ে সে নিখিলকে ডাকল । মিথিল চোখ খুলে দেখলে তার সামনে দাড়িয়ে সীমা—সদ্যস্নাত, শুচিবস্ত্রপরিহিত, স্বানসিক্ত মুক্তবেণী, শুভ্র, স্বন্দর, শুচিন্মিতা পূজারিণীর ছবির মত যেন। মনে হ’ল আজকের এই উৎসব-রজনীর জন্য যেন সে সমস্ত জীবন, জন্ম-জন্ম প্রতীক্ষা ক’রে ব’সে ছিল । সার্থক তার এক রাত্রির পরম রজনী। পরিপূর্ণ পুলকিত স্তব্ধ হৃদয়ে নীরবে উঠে সে সীমার রচিত আসনে গিয়ে বসল। যেন দেবতার আসনে ভক্তের অৰ্ঘ্য গ্রহণ করবার সৌভাগ্য তার। আহার শেষ হ’লে সীমা মৃদু হেসে বললে, “নিখিলবাৰু,