পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গণতন্ত্রের স্বরূপ ঐযতীন্দ্রকুমার মজুমদ র, এম-এ, পিএইচ-ডি, বার-এট-ল বর্তমান যুগে গণতান্ত্রিক শাসনপ্রণালী উদ্ভাবনের জনক ইংলণ্ডকেই বলা হইয়া থাকে। এই গণতান্ত্রিক শাসনপ্রণালী মূৰ্ব হইয়াছে পালামেন্টর শাসনতন্ত্রে। এরূপ শাসনতন্ত্রের উদ্ভাবন এক দিনে বা হঠাৎ হয় নাই, বহু কালের বিরোধ-বিসম্বাদের পর ইহার পত্তন সম্ভব হইয়াছিল। উক্ত বিরোধ-বিসম্বাদের ফলে এরূপ এক উদার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত শাসনতন্ত্রের উদ্ভাবন এতকাল সভ্য জগতের প্রশংসা ও আদর লাভ করিয়া আসিয়াছে । ইংলণ্ডের আদর্শে ও অতুপ্রেরণায় ইউরোপের বহু দেশও অতুরূপ শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করিতে চেষ্টাম্বিত ও অনেকাংশে সফলও হইয়াছিলেন, এবং যেখানে ইহা প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে নাই, সেখানেও ইহার আদর্শ দৃষ্টির বহিভূত হইয়া যায় নাই । কথিত হইয়াছে, এরপ গণতন্ত্র শাসনপ্রণালীই ইউরোপকে সভ্যতার এক উচ্চ স্তরে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। কিন্তু ইহার এক প্রতিক্রিয়া এক্ষণে উপস্থিত। বিগত মহাযুদ্ধের সময় রুষ বিদ্রোহের পর যে কমুনিজম মাথা তুলিয়া উঠিয়াছে তাহাই উক্ত শাসনতন্ত্রের প্রধান শত্র ও সমালোচক বলা যায়। রুষ বিদ্রোহের প্রধান নেতা ও কমুনিজমের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা লেনিন উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করিলেন যে, ইংলণ্ড প্রভৃতি দেশে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত তাহা প্রকৃত গণতন্ত্র নহে, উহা এক নিছক ক্যাপিটালিষ্টতন্ত্র, শ্রমিকদের শোষণের এক বিরাট যড়যন্ত্র মাত্র। প্রকৃত গণতন্ত্র যদি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত কfরতে হয় ত তাহা একমাত্র সম্ভব উক্ত তথাকথিত গণতন্ত্রকে উচ্ছেদ করিয়া, এবং তাহা কমুনিজমের দ্বারাই একমাত্র সম্ভব। এই জন্ত গোড় হইতেই কমুনিষ্টদের অভিযান হইয়াছে উক্ত গণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে। লেনিনের মৃত্যুর পর তাহার শিষ্যেরাও এক্ষণে উক্ত ভাবেরই প্রতিধ্বনি করিতেছেন, তাহারা বর্তমান গণতন্ত্রের দোষ দেখাইয়া যতদূর সম্ভব প্রচার করিতেছেন যে ইহার মধ্যে ভাল কিছুই নাই । বর্তমান গণতন্ত্রের যেরূপ এক দার্শনিক ভিত্তি আছে কমুনিষ্টরাও নিজেদের মতকে সম্মানাহঁ করিবার জন্য উহা যে কেবল এক অর্থনীতিক তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন তাহী নহে, উহাকে এক দার্শনিক ভিত্তির উপরও প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছে। কমুনিষ্ট দর্শন ঘোর জড়বাদমূলক। রাশিয়ায় জারদের শাসনকালে যেরূপ অনাচার-অত্যাচার হইত ও নিম্নশ্রেণীর লোকেরা যে ভাবে নিপীড়িত হইত তাহাতে উক্ত জার-শাসনের ধ্বংসে অনেকেই যে কেবল আনন্দিত হইয়াছিলেন তাহা নহে, ইহা পৃথিবীর বহু লোকেরই সহানুভূতি লাভ করিয়াছিল। কমু্যনিষ্টর নিপীড়িতদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টাম্বিত ও বদ্ধপরিকর, এই বলিয়া প্রচার করায় বহু লোকের ইহার প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়া কিছু আশ্চর্য্যের বিষয় ছিল না। র্তাহারা আরও প্রচার করিলেন যে, কেবল নিজ দেশে নহে, কমু্যনিষ্টর জগতের সর্বত্রই নিপীড়িত ও অধঃপতিতদের উদ্ধারে চেষ্টাম্বিত ও সহানুভূতিসম্পন্ন । বিগত মহাযুদ্ধের অবসানে বহু দেশেরই ক্লিষ্ট মানবের অন্তরে উহার দ্বারা নব আশার উদ্রেক হওয়া আশ্চর্য্যের বিষয় ছিল না । এই জন্য ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশেই কমুনিজম ভিত্তি গাড়িতে আরম্ভ করিয়াছিল। কিন্তু কমুনিষ্টদের প্রোগ্রাম প্রধানত: সংগ্ৰামমূলক হওয়ায় এই নিপীড়িত ও অধঃপতিতদের উদ্ধার সৰ্ব্বত্রই এক মহা সংগ্রাম ও বিরোধ বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে জাগ্ৰত করিয়া তুলে । ইহাতে সৰ্ব্বত্রই যেরূপ অনাচারঅত্যাচার ঘটিতে থাকে তাহাতে বমুনিজমের ঘোর শত্রুতা জাগ্রত হইতে কালবিলম্ব ঘটে না। ইহাই এক্ষণে ফ্যাসিজম্‌ বা নাৎসিজমের মধ্যে ওতপ্রোত, এবং এই দুই দলের মধ্যে এক্ষণে যেরূপ ভীষণ শক্রতা ও সংগ্রাম চলিতেছে তাহা দেখিলে সকলেরই আতঙ্ক হয় ইহার ফলে বা জগতের সভ্যতা বিনাশপ্রাপ্ত হয় । যাহা হউক, এ-বিষয়ের আলোচনা এখানে আমাদের