পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষাE - কলিকাতা হিন্দু অনাথ-অর্ণগ্রম ও হিন্দুর বিবাহ-সমস্যা ゞつ°)へ○ পত্রিকায় একটি ঘটনার বিবরণ বাহির হইয়াছিল, যে, ৭•॥৮০ টাক মাহিনার চাকুর্যে কোন কায়স্থ ভদ্রলোকের উপরি উপরি চারটি কন্যার পর পঞ্চম কন্যা জন্মগ্রহণ করিলে মেয়েটিকে গোপনে হাড়িী ধাত্রীকে দিয়া দেওয়া হইয়াছিল এবং মেয়েটি মারা গিয়াছে এই কথা প্রকাশ করা হইয়াছিল । পরে সত্য ঘটনা প্রকাশ পায়। হিন্দু পরিবারে কন্যা জন্মগ্রহণ ব্যাপারটিই যে দুঃখের, বিবাহ-সমস্যা তাহার একটি বিশেষ কারণ। হিন্দু সমাজে এই বিবাহ-সমস্যা এত গুরুতর আকার ধারণ করিয়াছে যে ইহার ফলে সমাজ দিন দিনই অবনতির দিকে অগ্রসর হইতেছে । স্নেহলতার স্যায় অনেক কুমারী সমস্যা-পূরণের অন্য উপায় না পাইয়া আত্মহত্যা করিয়াছে ও করিতেছে । অপর পক্ষে আবার কেহ কেহ গৃহত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছে । ইহাও একরূপ আত্মহত্যা ছাড়া আর কি ? যে-সমাজে কন্যার বিবাহের দায়ে কঙ্কাকে হাড়িনীর নিকট বিলাইয়া দিতে হয়, সেসমাজে হিন্দুত্বের গৰ্ব্ব করিবার কি আছে ? আরও একটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করিতেছি । মফস্বলে ডাকাতির সম্বন্ধে অতুসন্ধান করিবার জন্ত পুলিস একটি মুসলমান গ্রামে যায় এবং তথায় এক মুসলমানের গৃহ হইতে একটি অল্পবয়স্ক হিন্দু যুবতীকে উদ্ধার তাহার পরিচয় লইয়া জানা যায় যে, সে কোন সম্রাস্তবংশীয়া কায়স্থ-কন্যা । তাহার পিতার অবস্থা এখন আর পূর্বের মত নাই, এজন্য বিবাহের বয়স হইলেও কন্যার বিবাহ দিতে পারেন নাই । এই বিবাহ লইয়া ভtহার পিতা ও মাতাতে প্রায়ই কথাকাটাকাটি হইত। একদিন কন্যা শুনিতে পাইল, তাহার বিবাহ লইয়া অপর ঘরে পিতা ও মাতার মধ্যে বিতর্ক হইতেছে । পিতা ক্রুদ্ধ হইয়া মাতাকে বলিতেছেন, “মেয়ের বিবাহ শুধু-হাতে হয় না, তাতে টাকা চাই । মেয়ের বিয়ে দিয়ে সৰ্ব্বস্বাস্ত হয়ে সপরিবারে উপোস ক'রে কি আমায় মরতে বল ? তা আমি পারব না, এতে মেয়ের বিয়ে হোক আর নাই হোক।” এই কথা শুনিয় তাহার মনে এত দুঃখ, ঘৃণা ও অভিমান হইল যে, সে সেই রাত্রে বাড়ী ছাড়িয়া বাহির হইল এবং অবশেষে এক মুসলমানের হাতে পড়িল । করে । মেয়েরা অবশ্ব ইচ্ছা করিয়া কুমারী থাকে না, অথচ বিবাহ না হওয়ার অপরাধে তাহদের ঘরে বাহিরে লাঞ্ছনা নির্যাতন ও নিন্দার সীমা থাকে না। পল্লীর মন্দ ছেলেরা এই সুযোগে যথাসাধ্য উৎপাত করিবার চেষ্টা করে, ও প্রতিবেশীগণ নিন্দ রটনা করিবার জন্যই উৎসুক হন। এমন অবস্থা অসহ্য হইলে যদি সে আত্মহত্যা করে তাহাতেও তাহার নিন্দ, এবং ঘরের বাহির হইয় গেলে তে কথাই নাই । এখানে বিশেষ করিয়া কায়স্থ-সমাজের কথাই বসিলাম । ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সমাজের অবস্থাও যে ইহা অপেক্ষা ভাল তাহ নয় । অামার হাতে একটি ছাপানে আবেদনপত্র আসিয়াছে, তাহা হইতে কয়েক লাইন এথানে উদ্ধৃত করিতেছি, সবিনয়াবেদন, একটি দু:স্ত ধৰ্ম্মনিষ্ঠ সন্ত্রান্ত ব্ৰাহ্মণের কন্যাদায় হইতে উদ্ধারের জন্য আপনার সাহায্যপ্রার্থী হুইতেছি । এই ব্রাহ্মণ আমাদের এবং কলিকাতার শিক্ষিত-সমাজের বিশেষ পরিচিত । কায়ক্লেশে সংসারযাত্র নির্থবাহ ব্যতীত তিনি কন্যাদায় হইতে উদ্ধারের কোলক্ট পন্থা এতদিন স্থির করিতে পারেন নাই বলিয়। একেবারে হতাশ হইয় পণ্ডিয়াছেন, ইত্যাদি ।

  • অনাথ আশ্রমে পাঠাইলে মেয়ের বিবাহের দায় হইতে মুক্তি পাওয়া যাইবে,” এ রূপ চিন্তা কোন অভিভাবকের মনে উদয় হয় কিনা আমরা তাহা জানি না ; কিন্তু যেখানে সদ্যোজাত কন্যাকে হাড়িনীর হাতে দিয়া পিতা দায়মুক্ত হন ( অবশু, মাতার এ-ব্যাপারে কোন কত্রীত্ব ছিল না ), সে-সমাজে এরূপ ঘটাও অসম্ভব নয় ।

রাস্তায় কুড়াইয়া-পাওয়া কতকগুলি মেয়ে আলোচ্য অনাথআশ্রমে আছে । তাহাদের মধ্যে একটি মেয়ের ইতিহাস হইতে জানিলাম, যখন তাহার বয়স অনুমান ছয় বৎসর তখন সে একটি বাটি ও একটি পয়সা লইয়া দোকানে গুড় কিনিতে আসিয়া পথ হারাষ্ট্ৰয় ফেলে। পুলিস তাহাকে অসহায় অবস্থায় ঘুরিতে দেখিয়া থানায় লইয়া যায়, কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই ষে কোনও অভিভাবক তাহার অতুসন্ধান করিতে আসিল না। অগত্য তাহাকে অনাথ-আশ্রমে পাঠানো হইল। পথে-কুড়াইয়া-পাওয়া মেয়েদের অনেকের ইতিহাস হইতে ইহাই বুঝা যায়, যে, এই সব শিশুর প্রতি তাহাজের অভিভাবকগণের