পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অণষণঢ় গভর্ণমেণ্ট কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানের সহিত সংশ্লিষ্ট নহেন এরূপ কোন ভদ্রলোক বর্তৃক প্রেরিত মেয়ে এই আশ্রমে খুবই কম। যে কয়টি মেয়ে এরূপ ভাবে প্রেরিত হইয়। আশ্রমে আশ্রয় পাইয়াছে তাহীদের তালিকা এই : ১৮৯৬ খ্ৰীষ্টাব্দে সরোঞ্জিনী নামে একটি সাত বৎসর বয়স্ক কায়ন্থের মেয়ে সাতক্ষীরা হইতে শ্ৰীনীরোদচন্দ্র ঘোষ কত্ত্বক প্রেরিত হয়। ১৯০২ খ্রীষ্টাব্দে বুকুমকুমারী নামে একটি ১১ বৎসরের ব্রাহ্মণের মেরে আশ্রমে আসে । প্রেরকের নাম ঐদীননাথ মজুমদার। ১৯০৫ খ্ৰীষ্টাব্দে দেশবিখ্যাত স্বগীয় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৭ ও ১ বৎসরের ছুটি ব্ৰাহ্মণ- কস্তাকে আশ্রমে পাঠান । ইহাদের নাম শৈলবাল দেবী ও বিদ্যুৎলত দেবী ; ১৯২৩ খ্ৰীষ্টাব্দে পাৰ্ব্বতীবালা সরকার নামে সা৬ে চারি বৎসরের একটি কায়স্থ কস্ত আশ্রমে আসে । ইহাকে দেরাদুল হইতে রায় সাহেব ঈশানচন্দ্র দেব পাঠাইয়াছিলেন । • ১৯৩২ খ্ৰীষ্টাব্দে ডাঃ কুমারী যামিনী সনের প্রতিপালিত দুটি মেয়েকে প্তাহার মৃত্যুর পর আশ্রমে পাঠানে হয়। ইহাদের নাম অরুণ গুপ্ত ও উম গুপ্ত ; বয়স যখাক্রমে দশ ও এগার । গায় যামিনী সেন হাসপাতাল হইতে এই অনাথ বালিক দুটিকে গৃহে অনিয়া কম্ভ-নির্বিশেষে পালন করেন এবং যত দিন ন মেয়ে দুটির বিবাহ হয় তত দিন তাহার মাসিক ১৫ টাকা করিয়া বৃত্তি পাইবে, উাহার উইলে এইরূপ ব্যবস্থা করিয়া যান । ৪৫ বৎসর এই আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে । জনসাধারণের পক্ষ হইতে এই দীর্ঘকালে মাত্র সাতটি মেয়েকে আশ্রমে গ্রহণ করা হইয়াছে । ইহার কারণ ঠিক বুঝা যায় না। হয়ত হিন্দু সমাজে অনাথ বালিকাকে আশ্রমে পাঠাইবার মত উদ্যোগী লোকের অভাব আছে, অথবা আশ্রম-কর্তৃপক্ষ গভর্ণমেণ্টের তরফ হইতে যে-সকল মেয়ে আসে সেই সকল মেয়েকে আশ্রয় দিয়া আর অধিক মেয়েকে স্থান দিতে সমর্থ হন নাই, এই দুই কারণই হইতে পারে । হিন্দু সমাজের এই বিবাহ-সমস্যা সম্বন্ধে অনাথ-আশ্রমের কর্তৃপক্ষগণ কিরূপ ব্যবস্থা করিয়াছেন তাহাই পাঠকদিগের সম্মুখে উপস্থিত করিতেছি । প্রথমত, হিন্দু সমাজের জাতিভেদ, আবার এক জাতির মধ্যেও শ্রেণীভেদ, করণীয় ও অকরুণীয়ের বিচার, এই গুলিতে বিবাহের গণ্ডী বিশেষভাবে সংকীর্ণসীমাবদ্ধ হইয়াছে । দ্বিতীয়ত, উচ্চ জাতির মধ্যে বৈদিক ব্রাহ্মণ ব্যতীত সৰ্ব্বত্রই প্রায় বরপণ প্রচলিত, এবং নিম্নজাতির মধ্যে অধিকাংশ স্থলে কন্যাপণ দিয়া বধূকে গৃহে আনিতে হয়, এই দুই কারণে বিবাহ-সমস্যা অধিকতর জটিল হইয়াছে। অনাথ-আশ্রম কলিকত। হিন্দু অনাথ-আশ্রিম ও হিন্দুর বিবাহ-সমস্যা ৩৭৫ জনসাধারণের আশ্রম বলিয়৷ ইহার কর্তৃপক্ষ প্রথম প্রথম সামাজিক প্রথানুসারে জাতিভেদ বজায় রাখিয়া বিবাহ দিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। নিম্নশ্রেণীর মধ্যে যেখানে কন্যাপণ আছে সেরূপ মেয়ের স্বজাতীয় পাত্রে বিবাহ দেওয়া কতক পরিমাণে সম্ভব হইয়াছিল ; কারণ এরূপ স্থলে বরপক্ষ বিনা-পণে কন্যা পাইল, আবার লেখাপড়-জানা মেয়েও পাইল, কাজেই বিবাহে তাহদের আপত্তি হয় নাই । ক্রমশ: কর্তৃপক্ষ যখন দেখিলেন জাতিভেদ রাখিতে গেলে মেয়েদের বিবাহ হয় না, তখন র্তাহারা উচ্চজাতীয়া কন্যাদের নিম্নজাতীয় পাত্রের সহিতও বিবাহ দিতে লাগিলেন । পত্রি-নিৰ্ব্বাচনে পাত্রের আর্থিক সঙ্গতির দিকেই তাহারা বিশেষ লক্ষ্য রাখিতে লাগিলেন, পাত্র যেন বিবাহ করিয়া ভাবী পত্নীর ও সন্তানদের ভরণপোষণ করিতে পারে । ক্রমশ: বাংলা দেশে এরূপ পাত্র সংগ্ৰহ করিতে পারাও আশ্রমের কর্তৃপক্ষগণের পক্ষে কঠিন হইয় উঠিল । এদিকে বিবাহ না হওয়াতে বিবাহযোগ্য মেয়েদের মধ্যে অশান্তি ও বিদ্রোহের ভাব দেখা যাইতে লাগিল । দু-তিনটি মেয়ে বাড়ীর ড্রেনের নদীমার জল বাহির হইবার পথ খুঁড়িয়া বড় করিয়া তাহার ভিতর দিয়া পলাইয়া গেল। ইহার পর ড়েন এমন শক্ত করিয়া গাথা হইল যাহাতে আর ভাঙা না যায়। আশ্রমের প্রাচীরের উপর হইতে পাশের বাড়ীর প্রাচীরের উপর তক্ত ফেলিয়া একটি মেয়ে তাহারই উপল্প দিয়া পসাইল । তাহার পর আশ্রমের প্রাচীর উচ্চ করা হয়। আর একটি মেয়ে কার্নিসের উপর দিয়া পলাইবার চেষ্ট করে, ইংার ফলে বাড়ীর চারি দিকের কানিস ভাঙিয়া ফেলা হয় । মেয়েদের লোহার গরাদ দিয়া তৈরি দরজাওয়াল আলাদা বাড়ীতে পরিদশিকার অধীনে রাখা হইল । সেখানে গিয়া দু-এক জন মেয়ে বিবাহ-ব্যাপার লইয়। অনশন আরম্ভ করিল। এই ঘটনায় আশ্রমের কর্তৃপক্ষ বাধ্য হইয় পুলিসে থবর দেন । মেয়েদের যদি বরের অভাবে বিবাহ না হয় তবে তাহাদের সম্বন্ধে আর কি ব্যবস্থা কর! যাইভে পারে, আশ্রমকর্তৃপক্ষ অতঃপর সেই সম্বন্ধে বিবেচনা করিতে লাগিলেন । ছেলেদের বিভাগে অনেক উচ্চবর্ণের মেধাবী বালক