পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় লক্ষ্য ছিল না । মালতীর ঘরে-তৈরি ছিটের ফ্রকের অবস্থাও তাহার চেয়ে কিছু উৎকৃষ্ট ছিল না, তবে সেট মা মধ্যে মধ্যে স্বানের সময় কাচিয়া দিতেন এই বা রক্ষা । কিন্তু স্কুলে কত রকম মেয়ে আসে, কত রকম তাহাদের বেশভূয। তাহারা মাথায় লাল, নীল, হলদে, কত রকম ফিতা বাধে, হাতে গোছা গোছা রেশমী কাচের চুড়ি পরে, ঝুটা মণিমুক্তার ব্রোচ, ইম্বারিং ও আংটিতে গা সাজাইয় আসে । শস্তায় আজকাল রং-বেরঙের কত রকম শাড়ী জাম পাওয়া যায়, তাহাঙ যথাসাধ্য জুটাইয়া পরে। সরযু, বিমল, মালতীষ্ট বা দেখিয়া না শিখিবে কেন ? হাদেরও ত মানুষের প্রাণ ? সুন্ধাবেল বাড়ী ফিরিয়াই বিমলা স্তর তুলিল, “কাল আমি ওই শাড়ী প'রে কিছুতে যাব না। সবাই নাক সিটকায়, ঘেন্না করে । কেন আমরা কি ভদর লোক না ? এক মাস এক কাপড় পরে যার কেন ?” ম! এধর-ওধার চাহিয়া বলিলেন, “চুপ কর, এখনি তোর ঠাকুরম শুনলে বক্‌বক্‌ ক’রে মরবে। কাল ভোরে আমি তেবে শাড়ী সোড দিয়ে কেচে দেব ।” বিমলা দুষ্ট, টাটু, ঘোড়ার মত ঘাড় বাকাইয়া বলিল, “কে৯ে দিলেও আমি পরব না। আমার একটা লাল কাবেরী শাড়ী চাই ।” ম। বেসরী মেয়েদের দুঃথ বুঝিতে পারেন, কিন্তু তাহার ক্ষমতাই বা কতখানি ? বলেন, “সে পূজোর সময় দেব এখন । যখন তখন কি আর আমরা অত শাড়ী কিনতে পারি ?” বিমলা কিছু বলিবার আগেই সমযু নাকিম্বরে গর্জন করিয় ওঠে, “রোজ রে'জ একটা তেলচিটে কাপড়ের পাড় দিয়ে চুল বঁধব কেন ? আমার লাল রিবন চাই।” ম। এইবারে চটিয়া বলিলেন, “দেব কোথা থেকে ? আমার মুণ্ডু থেকে ? দেখছ না আমি কেমন দিনরাত রিবন আর কাবেরী শাড়ী পরে আছি ?” মালতী তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিল, "তোমার গায়ে ত গাদ গাদা গয়না ? আমাদের তুমি কিছু দেও না ।” মা দুঃখের হাসি হাসিয়া বলিলেন, “খুব গাদা গাদ দেখেছিস বাছা । যা দু-এক টুকুরো আছে, তা তোমাদের শহুরে মেয়ে ^9:SS, তিন বোনকে পার করতে কোথায় ভেসে যাবে। এতেই কুলোত ত বৰ্ত্তে যেতাম। এখন ভিটেটুকু বজায় থাকে তাহলেই বাচি ।” মেয়েদের তখন বিবাহ বা ভিটের ভাবনা বিশেষ কিছু ছিল না। তাহারা সমানে নাকে র্কাদিতে লাগিল। ফল যে একেবারে কিছু ন হইল তাহী নহে। বিমলা মায়ের বহুকাল-পরিত্যক্ত একটা ছেড়া গরদের শাড়ীর ছেড়া অংশটুকু বাদ দিয়া পরিয়া ফেলিল। রেশমের কাপড় ত ? না-হয় একটা দিক ছেড়াই ছিল, সেটা কে বা দেখিতে আসিতেছে ? আনন্দের আতিশয্যে মেয়ে সেদিন থাইতেই ভুলিয়া গেল । সরযু কাদিয়া কাটিয়া কাকীমার কাছ হইতে সত্যকারের একটা রিবনষ্ট আদায় করিয়া ফেলিল। কাকমাটির খুব বেশীদিন বিবাহ হয় নাই, কাজেই নববধূর্জীবনের সম্পদ এখনও কিছু কিছু বাক্স-প্যাটরার ভিতব আবিষ্কার করা যায় । মালতীকে মা দুগাছ নুতন কাচের লাল টুকটুকে চুড়ি কিনিয়া শাস্ত করিয়া দিলেন । এই রকম যখন তখন চলে । কখনও বা হীরা চাহিয়৷ মেয়েরা জীীরা পায়, কখনও বা পায় শুধু চড় চাপড়, গালাগালি। যাহা হউক, দিন এক রকম তাহাদের কাটিয়া যায়, সব সময়েই যে দুঃখে কাটে তাহা নয়। বাহিরের উপকরণের অভাব তাহার অন্তরের কল্পনার সম্পদ দিয়া পর্ণ করিয়া তোলে। মা-বাপের স্নেহ যতটুকু পায় ততটুকুই তাহাদের কাছে অমূল্য । তাহা ছাড়া সঙ্গী-সাথীর অভাব নাই, বাঙালীপাড়া, সারাক্ষণই এবাড়ী ওবাড়ী ঘুরিয়া খেলা করিয়া বেড়ান যায়। কিন্তু এ-সুখই বা বাঙালীর মেয়ের জীবনে কতদিন থাকে ? সরযু বারো ছাড়াইয়া তেরোয় পা দিতে-না-দিতেই তাহার বাপ-মায়ের কান ঝালাপালা হইয়া গেল। ঘরেবাহিরে খোটার অবধি রহিল না। “ও মা, মেয়ে যে পেল্ল্য হয়ে উঠেছে গো ! বাপ-মায়ের গলা দিয়ে ভাত গলছে কি ক’রে ? সময়ে বিয়ে দিলে ষে ছেলের মা হত ! আমরা ত ও-বয়সে র্কাকে কোলে ছেলে নিয়ে স্বামীর ঘর করেছি।" এসব বাক্যবাণ ত নিমতই সরযুর মায়ের কানে বধিত হইতেছিল। জালার উপর তাহার আর-এক জালা, (,