পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুগান্তর “বন > এককড়ির প্রপৌত্র, কড়ির পৌত্র, তিনকড়ির পুত্র বাবু পাঁচকড়ি পোদ্ধার স্বীয় পুত্র ছ’কড়িকে লইয়া একটু বিত্রত হইয়া পড়িয়াছিলেন । হরিণহাটি গ্রামে পাঁচকড়ি পোদারকে সকলেই যথেষ্ট খাতির বরিত। বস্তুত তিনি উক্ত গ্রামের মধ্যমণিস্বরূপ ছিলেন। সকল বিষয়ে তাঙ্গর মতটাই প্রামাণ্য বলিয়া স্বীকৃত হইত। সকল বিষয়ে মতামত প্রকাশ করিবার মত মানসিক স্থিতিস্থাপকতাও তাহার যথেষ্ট ছিল । যেকোন বিষয়ে--সঙ্গীত, সাহিত্য, চিত্রকলা, সিনেমা, বর্তমান সামাজিক অবস্থ, স্ত্রীশিক্ষা, পাটের দর, কয়ল-ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ, মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ-যে-কোন বিষয়ে স্বকীয় মতবাদ যখন তিনি তর্জনী আস্ফালন করিয়া জাহির করিতেন তখন হরিণহাটি গ্রামের সকলেই তাহা সানন্দে মানিয়া লইতেন এবং মানিয়া লইয়া নিজেদের ধন্য জ্ঞান কfরতেন । অন্য উপায় ছিল না। পাঁচকড়ি পোদ্ধার প্রচুর ধনসম্পত্তিশালী মহাজন এবং গ্রামের ইতর-ভদ্র প্রায় সকলেই তাহার খাতক । সুতরাং হরিণহাটি গ্রামে সঙ্গীত, সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী প্রভৃতি যে-কোন বিষয় সম্বন্ধে বাবু পাচকড়ি পোদারের মতামতই চূড়ান্ত ও অপ্রতিহত। ইহাতে যাহারা বিস্ময় বোধ করিতেছেন তাহদের কিছুকাল হরিণহাটি গ্রামে গিয়া বাস করিতে অনুরোধ করি। দেখিবেন জল না থাকিলে যেমন পুষ্করিণী অচল, পোদ্ধার মহাশয় না থাকিলে হরিণহাটি গ্রামও তেমনি অচল। পোদ্ধার মহাশয় তাহার সমস্ত ধনসম্ভার উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করাতে সারাজীবনটা ভরিয়া নানা প্রকার মতবাদ গঠন করিবার সুযোগ পাইয়াছিলেন এবং এই মতবাদগুলি লইয়া যেখানে-সেখানে {3 بجایی به ফুল যখন-তখন আম্ফালন করিয়া বেড়ানোটাই তাহার জীবনের প্রধান বিলাস ছিল । মতবাদগুলির বিস্তৃত আলোচনা এষ্ট গল্পের পক্ষে নিম্প্রয়োজন। সংক্ষেপে এইটুকু শুধু জানিয়া রাখুন বাবু পাঁচকড়ি পোদ্ধার যে-কোন প্রকার আধুনিকতার বিরুদ্ধবাদী। এমন কি, তিনি বোতামের বদলে ফিতা ব্যবহার করেন। ফিত-বাধা ফতুয়াই তাঙ্গর সাধারণ অঙ্গচ্ছদ। অদ্যাবধি কে তাহাকে জুতা পরিতে দেখে নাই । খড়মষ্ট চিরকাল করিয়া আসিতেছে। এ-হেন পাঁচকড়ি পোদ্ধার পুত্র ছ’কড়ির নিকট ঘাঁ থাইলেন। কনিষ্ঠ পুত্ৰ সাতকড়ি মারা যাওয়ার পর হইতে মাদর দিয়া দিয়া গৃহিণী ছ’কড়ির মাথাটি এমন ভাবে খাইয়াছেন যে পুত্রটি মুগুইন কেতুর ন্যায় মস্তিক হইয়া উঠিয়াছে। যখনই সে কলিকাতায় পড়াশোনা করিতে যায় দূরদর্শী পোদ্ধার মহাশয় তখনই আপত্তি করিয়াছিলেন। বি-এ, এম-এ, পাস করিয়া দশটা মুণ্ড, বিশটা হাত কিছুই গঙ্গাইবে না। তর্কের খাতিরে যদি ধরাই যায় যে গঙ্গাইবে— তাহাতেই বা কি ? এই বাজারে অতগুলো বাড়তি হাত ও মুণ্ড লইয়া হইবে কি! কিন্তু গৃহিণী শুনিলেন না এবং মেয়েমানুষের বুদ্ধিতে পড়িয়া তিনিও মত দিয়া ফেলিলেন —এখন নাও-ছেলে 'লভে পড়িয়াছে ! তাহার চরণ রক্ষা R ছেলে যে 'লভে পড়িয়াছে এ-কথাটা প্রথমত পোদার মহাশয় বুঝিতেই পারেন নাই। তাহার প্রিয় বয়স্ত মাধব কুণ্ডুর সাহায্য লইয়। তবে তিনি পুত্রের পত্রের প্রকৃত তাৎপৰ্য্য হৃদয়ঙ্গম করিয়াছেন। ঘটনাটি এইরূপ : একদা পাচকড়ি পোদ্ধার চিন্তা করিয়া দেখিলেন যে