পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগষণঢ় অলখ-ঝেণরণ 8రిసె মহেন্দ্র তখনও আপন মনেই কথা বলিতে বলিতে চলিল । সে বলিল, “আমি বেশ বুঝতে পারছি যে তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছ । আমার সঙ্গে তোমার সখ্য, সেটা একটা কথার কথা মাত্র । আলাপী সবাইকেই ত লোকে বন্ধু বলে। কিন্তু তোমার মন চলেছে অন্য দিকে, না ? তুমি কি জান যে আজ চার পাচ বৎসর ধরে এই চিন্তাই আমার মনে দুবারাত্রি অস্কুরের মত ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে ? এত দিন বলবার অবস্থায় আসে নি, আজ দিন এসেছে মনে ক’রে তোমায় এ কথা বললাম। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য তুমি তার ওজন একটুও বুঝতে পারলে ন। মমতার একটু চিহ্নও তোমার মধ্যে দেখলাম না।" হৈমন্তী বলিল, “আপনি বিশ্বাস করুন, মহেন্দ্র-দ, আমি তপিনাকে আঘাত দেবার জন্তে ইচ্ছা ক'রে কোন চেষ্টা কfর নি । আপনি আর আমি সিড়ির ভিন্ন ভিন্ন ধাপে রয়েছি, কাজেই এ জিনিষকে এক ভাবে দেখে এক উত্তর দেওয়া ত দু-জনের পক্ষে সম্ভব নয়।" মহেন্দু বলিল, "এবারেও ত সেই একই উত্তর । আমার প্রশ্নের ত জবাব দিলে না।” হৈমন্তী বলিল, “আজ আমাকে আর পীড়ন করবেন না, লক্ষ্মীটি। একদিন আমি উত্তর দেব, তবে কবে তা বলতে পারি না ।” মহেন্দ্রর কথা ফুরাইতে চাহিতেছিল না। সে বলিল, “তুমি কি জবাব দেবে আমি কি বুঝি নি, হৈমন্ত ? আজ যে কঠিন কথাটা আমার মুখের উপর বলতে তোমার বাধছে, সেই কথাটাই একদিন হাল্ক করে আমায় জানিয়ে দিতে চাও, তা আমি বুঝেছি। তোমরা কথা বলতে জান, নিষ্ঠুর আঘাতকেও নরম কথায় মুড়ে সামনে এনে ধরবে ; কিন্তু আমি মূখ, আমার মনের শ্রেষ্ঠ কথাটাও তোমায় সাজিয়ে বলতে পারলাম কই ? যা বলতে চেয়েছিলাম, মনে হচ্ছে তার কিছুই বলতে পারি নি, মনের যেখানটা তোমায় দেখাতে চেয়েছিলাম তোমার দৃষ্টিই সেখানে আনতে পারলাম না। হয়ত আমারই মূর্খতায় তুমি আমায় কিছুই বুঝলে না। হৈমন্তী, যদি জানতে কত কাল ধরে কত কথা এই বোবা মনের ভিতর জমা হয়ে মাথা খুড়ছে, তাহলে হয়ত এতখানি কঠিন হতে না।” তুমি হৈমন্তী আর কথা বলিবার চেষ্টা করিল না। সে আরক্ত মুখ নত করিয়াই কোন রকমে মুহূৰ্ত্তগুলা গুনিয়া সময় কাটাইতেছিল। মহেন্দ্রের প্রতি তাহার একটা টান ছিল, তাই নিজে মহেন্দ্রের কষ্টের কারণ হইতে তাহার মনে একটা অপরাধ বোধ হয় খোচা দিতেছিল। বাড়ীতে নামিয়াই যেন মুক্তির নিশ্বাস ফেলিয়া হৈমন্তী তাহার বেগুনফুলি রঙের মাস্তাজী শাড়ীর উপর কোমরে একটা ফরসা তোয়ালে জড়াইয়া রান্নাঘর হঠতে এক ট্রে থাবার ও সরবৎ আনিয়া বসিবার ঘরে হাজির করিল। মহেন্দ্রকে থাইতে ডাকিয়া কোনও সদুত্তর পাওয়া গেল না। সে আজ গহন বিষয়ে মস্ত বিশেষজ্ঞের মত মিলিকে নানা কথা বুঝাইতে বসিয়াছে । নিপিল বলিল, “আমরা সেই কথন থেকে বসে বসে হাত চালাfচ্ছ, আমাদের আপনি এক গেলাস সরবৎ দিতে পারলেন না, সবার আগে দিতে গেলেন মহেন্দ্রকে । সে ত প্রচুর হাওয়া খেয়ে এল এইমাত্র।” মহেন্দ্র আজ ঠাট্টার জবাব দিল না । বাঙালীর গায়ের রঙে মুক্ত যে মানায় মা এই বিষয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে সে মিলিকে বক্তৃতা শুনাইতে লাগিল । মিলি বলিল, “না মানায়, ন মানাক, আপনার বেীকে ন-হয় আপনি একটা ও মুক্তো পরতে দেবেন না। আমরা কালো রঙেই প্রাণে যা সখ আছে পরে নেব ।” হৈমন্তী একট। সরবতের গেলাস আনিয়া মহেন্দ্রর হাতের ভিতর গুজিয়া দিল । মহেন্দ্র ফিরাইয়। দিতে ধাইতে ছিল, নিখিল বলিল, “আর কনিষ্ট বা এত আদরধত্ব পাবে, এখন বেশী চাল দেপিণ্ড না ! বেশ কাটছে এই দিনগুলো ! একান্নবৰ্ত্তী পরিবারের মত, রোজ একসঙ্গে খাওয়-দাওয়', কাজ, গল্পগাছা, ঝগড়াঝাটি সব নিয়ে জিনিষটা জমেছে ভাল । দুঃখ এই যে, দিন ফুরিয়ে এল।” মহেন্দ্র এতক্ষণে ফিরিয়া তাকাইয়া বলিল, “তুমি কার সঙ্গে একাম্নে থেতে চাও বল না, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা ক’রে দেখব কিছু করা যায় কি না। পরোপকার কখনও করি নি, তোমরা মহৎ লোক, তোমাদের উপকার করলে আমারও পুণ্য হবে কিছু।” মিলি বলিল, “আপনার হাস্তে আমুচিস্তার ভার অর্পণ