পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

BSR প্রবাসী SNరి88 দিকে কৃষক নামক বাংলা মাসিক পত্র, বাগান সম্বন্ধে ইংরেজী কয়েকটা বই, ও ছুতার, কামার ইত্যাদির যন্ত্রপাতি সমেত মুচিকণ একটি কাঠের বাক্স । তাকের মাথায় কুমারটুলির গড়া একটি লক্ষ্মীমূৰ্ত্তির দুই পাশে দুইটি মাজ পিতলের ঘটিতে তাজা ফুল। নীচু টেবিলটায় শ্বেত পাথরের ছোট একটি রেকাবাঁতে মোটা মোটা অনেকগুলি বেলফুল । একটা সুচিত্রিত মাটির ছোট ঘটে অনেকগুলি কলম ও পেনসিল মুখ উচু করিয়া আছে আর একটা ংকর গোল কাঠের কোঁটায় নিব, রবার আলপিন ইত্যাদি ভর। দেয়ালে প্রকাও একখানি রেখাচিত্র-একটি গ্রাম্য বালিকা কোমরে কাপড় জড়াইয়ু থোড়ো ঘরের বাহিরের দেয়ালে আলপনা দিতেছে, চিত্রকরের নাম লেখা নাই । ঘরের একেবারে কোণে ছোট একটি কাঠের আলনায় দুই-চারিট সাদা জামা কাপড়। তপন সকালে উঠিয়া গাড়ীবারান্দায় ভোরের সূর্যোব আলোর দিকে চাহিয়া দাড়াইয়াছিল। ফুলের গন্ধে বাতাস ভারী হইয়| উঠিয়াছে, পার্থীর ডাকে ইহাকে আর কলিকাত শহর মনে হইতেছে না। তপনের ইচ্ছা করিতেছিল না যে এখান হইতে সরিয়া যায়। কিছু দিন হইতে তাহার মনটা কেন জানি না কাজে বসিতে চায় না । মনে হয় তাহার ওই গ্রামের ঈস্কুল, ওই ক্ষেত বাগান— এ ত তাহার জীবনে কই সত্য হইয় উঠে নাই । ছেলেবেল যেমন সে পুতুল লইয়া, খেলনা লইয়া থেলা করিত, বড় হইয়া তেমনি যেন মাতুষ, ক্ষেত, খামার লইয়া খেলা করিতেছে। পুরুষ বুঝি সারাজীবনই এমনি খেলা করে, নিত্য নূতন নূতন খেলা রচনা করিয়া তাহাকে বড় বড় নাম দিয়া আপনাকে ও পরকে ভোলায়। এই খেলার উন্মাদণই আশল ভtহণদের কাছে । কয়জনের কাছে কাজ সত্য হইয়া উঠিয়া জীবনের পরতে পরতে মিশিয়া যায় ? দৌড়ধাপের থেলায় প্রথম হইবার উন্মাদন ও বাহবা পাইবার নেশা যেমন ছেলেদের মাতাইয়া তুলে, আজ মনে হইতেছে তেমনি একটা বড় রকম বাহব পাইবার লোভেই যেন সে এ-খেলায় নামিয়াছিল। এখন ইচ্ছা করিতেছে এই পুরাতন খেলা ফেলিয়া দিয়া জীবনের আর এক দিকের আহবানের প্রতি সে তাহীর মনটা একটু দেয়। এই পার্থীর ডাক, এই ফুলের গন্ধ, এই বসন্ত সঙ্গীত গ্রামের মাটিতে বসিয়াও তাহার জীবনে কি এত দিন মিথ্যা ছিল না ? আজ কে যেন এই ইটকাঠে-গড় কঠিন কলিকাতার বুকে বসিয়াই বসন্তের সিংহদ্বার তাহার চোখের সম্মুখে খুলিয়া ধরিয়াছে। ফলশস্যশ্যামল পল্লীশ্ৰী তাহার ফলফুলপত্রের ডাল৷ তুলিয়া ধরিয়া এত দিন তাহাকে যাহা দেখাইতে পারে নাই, নগরীর একটি শুামাঙ্গিনী বালিকা তাহার স্নিগ্ধ রূপের ভিতর দিয়াই কেমন করিয়ু সে অনন্ত সৌন্দর্য্য তপনের দৃষ্টিপথে আনিয়া দিয়াছে। এই রূপের পসরা তাহাকে মাতাইয়া তুলিয়াছে। ইচ্ছা করে ইহারই ভিতর ডুবিয়া থাকিতে, কাজ-কাজ খেলায় তাই আর মন বসে • । ইচ্ছা করে মাতৃযের গড় এই ঘড়ির শাসনকে দিন কয়েকের জন্য উপেক্ষা করিয়া তাহার আনন্দ উপলব্ধির অতলে সব ভুলিয়া তলাইয়। যাইতে । কেন কাজের দিন fতনটা না বাজিলে কাজ ছাড়িয়া বা ৪য়। যাইবে না, কেন বিদায়বেলায় টং টং করিয়ু ঘড়ি বাজিলেই আর সঞ্চলের সঙ্গে সমতালে প! ফেলিয় তাহাকেও আপনার নিরাননা গুহকোণে ফিরিয়া আসিতে হইবে ? ভোরবেল। এই গন্ধবিধুর সমারণের মাঝখানে নীৰবে দাড়াহয় কল্পনায় তাঙ্গর চুলের মালার গন্ধটুকু অতুভব করিতে গেলে, সেই স্মিত্তহাস্ত্যজড়িত মুখখানি মনে করিতে গেলে কেন তাহার কাজ তাহ সহ করিবে না ? যে-বন্ধনে আপনাকে আপনি সে স্বেচ্ছায় বাধিয়াছে, তাহাই কেন তাহার প্রভু হইয় জীবনকে নিয়স্থিত করিবে ? কিন্তু মন বিদ্রোহ করিলে কি হয় । পৃথিবীতে কয়ট পুরুষ মনের ক্ষুধায় তাহার দৈনন্দিন কাজ ফেলিয়। চলিয়া যাইতে পারিয়াছে ? ইত যেন স্ত্রীলোকেরই ধৰ্ম্ম। পুরুষ চিরদিন স্ত্রীলোককে বলিয়াছে,-- প্রেমেই তোমার জীবন, আমার জীবনে উহা দিনাস্তের বিশ্রামস্থান মাত্র । নবযৌবনের এই উন্মাদন কাটিয়া গেলে তপনও কি তাঁহাই বলিবে না ? আজিকার এই কাজ যদি জীবনে সত্য না হয়, তাহা হইলে শিশুর খেলনার মত তাহা দূরে ফেলিয়া দিলেও নূতন একটা গড়িয়া তুলিতে কতক্ষণ ? প্রেম ভুলিয়া তখন তাহাতেই হয়ত সে ডুবিয়া যাইবে! তপন আপনাকে পুরুষধৰ্ম্ম বুঝাইতেছিল, কিন্তু ভোরের