পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$3** о প্রবাসী $N933 কবি বলিলেন, “আচ্ছ, আমাদের গ্রামের চেয়ে বাংলা দেশের গ্রাম কি দেখতে স্বন্দর ?” আমি কহিলাম—“বাস্তবিক চমৎকার আপনাদের গ্রাম, আর তার চেয়ে চমৎকার এই সরল উৎসাহী লোকগুলি ।” বাড়ী পৌছাইতে রাত্রি বারোটা হইল । ঐযুক্ত বৈকুণ্ঠ রাও-এর সহিত আলাপ হইল—একট। টি-পাটিতে। চমৎকার বাংলা বলিতে পারেন । রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থাবলী অন্ধভাষায় অনুবাদ করিতেছেন । ভারি অমায়িক ভদ্রলোক । অতিশয় মিহি হাসিয়া কহিলেন, “বাংলা লিটারেচারের মত—উছ—ওরকম পরিপূর্ণ— আমাদের তেলেগু লিটারেচারে কি-ই বা আর আছে---” কবি কহিলেন, “কেন আমাদেরও ত সাহিত্য গড়ে উঠছে। কত নতুন নতুন লেখক হচ্ছেন। কত আর্টিষ্ট—“ --আচ্ছ, প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের পেই উপন্যাসটার নাম কি ? কম্বুম-ভরণী—সিন্দুর-কেট ?--সিন্দুর-কেট – আমরা কস্কুম-ভরণী নাম দিয়া উহা অন্ধ ভাষায় অনুবাদ করিয়াছি । চমৎকার বই ! আচ্ছা, অবনীন্দ্রনাথ কি রবীন্দ্রনাথের ভাই, না ভাইপে ? অার স্তার আশুতোষ না কি— এমনি করিয়া অন্ধ দেশে আমার দিন কাটিতেছে । এমনি করিয়া অন্ধ-জাতির সহিত পরিচয় নিবিড়তর হইতেছে । কোন দিন মিনিষ্টারের টি-পার্টিতে নিমন্ত্রণ পাইতেছি । লটি সাহেবের একজন মন্ত্রী,—র্তাহার সম্মনাথ শহরবাসিগণ এই টি-পার্ট দিতেছেন। সমাজের উচ্চতম স্তরের ব্যক্তিগণ এইখানে আজ সম্মিলিত হইবেন। মাননীয় নিমন্ত্রিতগণ একে একে আসিতেছেন । ইংরেজী, অন্ধ আর মুসলমানী—এই সব সজ্জার যত রকম সংমিশ্রণ হইতে পারে,—তাহার সব কয়টাই দেখিতেছি । এক জন ব্যাস্কার মোটর ড্রাইভ করিয়া আসিলেন । আর একজন রাও-সাহেব টম্-টম্ ষ্টাকাইয়া আসিলেন। তিনি হাতে একগাছি হাণ্টার লইয়ু যখন লাফাইয়া নামিলেন,—তুমি দেখিলে নিশ্চয়ই হাসিয়া ফেলিতে ; কিন্তু আমি একটুও হাসি নাই। শপথ করিয়া বলিতেছি—একটুও হাসি নাই ! মাঝখানের সাদা চাদর পাতা টেবিলটায়ু মাননীয় মন্ত্রী মহাশয় বসিয়াছেন । মাথায় জরির পাড়-দেওয়া চমৎকার পাগড়ী,—আর কানে সোনার রিং । তাহার পাশে উপবিষ্ট একটি অতিশয় সুন্দরী মালয়ালী বালিকার সহিত হাসিয়া হাসিয়া কথা কহিতেছেন। তাহাতে র্তাহার কানের সোনার রিং দুলিতেছে। চা ‘সার্ত’ করিয়া গেল। ছোট ছোট শালপাতার ঠোঙায় দুইটি করিয়া ভালমুট আর দুইটি করিয়া চাপা কলা দিয়াছে । কান-বাহির-করা পিতলের গেলাসে করিয়া বয়রা কফি লইয়া যাইতেছে —“এ বাণ্ডিকফি-ই—?” কোনদিন মঙ্গল-গিরির মন্দির দেখিতে যাই । দূর মোটে আট মাইল । কিন্তু মিটার-গেজ ট্রেনে সময় লাগে এক ঘণ্টারও উপর। ষ্টেশনের ধারেই একটি পাহাড় ;– তাহার পাদদেশে একটি মন্দির । চারি দিকে চারিটি বৃহৎ গোপুরম্; তাহাদের মাঝখানে ছোট মন্দির । পাহাড়ের গায়ে পাচ-শ’ ধাপ সিডি উঠিয়া আর একটি মন্দির । নীচেকার মন্দিরটির গোপুরম চারিটি এগারেী-তলা । দেওয়ালে অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি রহিয়াছে। নৃসিংহ-মূৰ্ত্তি, আর গরুড়-মুৰ্ত্তি দেখিতেছি।...এখানে একটা সোনার হনুমান-মুৰ্ত্তি রহিয়াছে। বীরত্বব্যঞ্জক প্রকাও মূৰ্ত্তি। গর্ভগৃহের ভিতর অন্ধকার । কিছু দেখা যাইতেছে না। একটি তম্বঙ্গী বালিক। মেঝের উপর সটান পড়িয়। রহিয়াছে । বোধ হয় সে দেবমন্দিরে হত্যা দিয়াছে । আমরা একটা গোপুরমে উঠিলাম। এগারে তলায় উঠিয়া পরিশ্রাস্ত হইয়া থোলা বাতায়নের ধারে বসিলাম । প্রায় দেড় শত ফুট উপরে উঠিয়াছি। এখান হইতে বহু দূরের পাহাড় দেখা যাইতেছে। পাণ্ড কহিলেন, এখান হইতে সমুদ্র দেখা যায়। ও—ই যেখানে দূরে মাঠ আব আকাশ মিশিয়া ধৃ ধূ করিতেছে—ওই খানেই সমূদ্র । পাণ্ডাজী বলিতেছেন, কিছুদিন আগেও এখানে প্রত্যহ বহু যাত্রীসমাগম হইত। ধৰ্ম্মপ্রাণ নরনারীগণের আনীত অৰ্ঘ্যভারে মন্দির ভরিয়া উঠিত। দেবতা ফুলের তলায় হারাষ্টয়া যাইতেন। আমার চোখের উপর হইতে একখানা পর্দা সরিয়া যায়।. প্রশস্ত রাজপথের উপর দিয়া অগণ্য নরনারী চলিয়াছে পথের দুই ধারে বিবিধ অৰ্ঘ্য সাজাইয়া বিপণিশ্রেণী, আর তাহার মাঝখান দিয়া বিশ্বাসী ভক্তিমান নরনারী অসীম আগ্রহে চলিয়াছে। স্বকুমার তত্ত্বজী বালিকা, গৌরাঙ্গী স্বাস্থ্যবর্তী যুবতী এবং প্রৌঢ় দলে দলে চলিয়াছে। তাহাদের পরিধানে বিচিত্র বর্ণের রঙীন শাড়ী,—অঙ্গে সুবর্ণ আভরণ--- ঠিক ছবির মত দেখাইতেছে। উহাদের সকলেই অবগুণ্ঠনহীন মাথায় ফুল পরিয়াছে। উহারা দেবতার নিৰ্ম্মাল্যের মত পবিত্র এবং সুন্দর ।