পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণঢ বানান-বিধি 8ミの আপাতত জানিয়ে রাখছি কেবল পদ্যে নয়, গদ্যেও আমি উচ্চারণ অনুগত করে কোনো, কখনো, যখনি, তখনি লিখব। এইখানে একটা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে যে, “কখনই আমি যাব না” এবং তখনি আমি গিয়েছিলেম এ দুই জায়গায় কি একি বানান থাকা সঙ্গত ? উপসংহারে এই কথাটি বলতে চাই বানানের বিধিপালনে আপাতত হয়তে মোটের উপরে আমরা “বাধ্যতামূলক” নীতি অনুসরণ করে একান্ত উচ্ছৃঙ্খলতা দমনে যোগ দেব। কিন্তু এই দ্বিধাগ্রস্ত মধ্যপথে ব্যাপারটা থামবে না। অচিরে এমন সাহসিকের সমাগম হবে যারা নিঃসঙ্কোচে বানানকে দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবেই উচ্চারণের সত্য রক্ষা করবেন। বানান সংস্কার ব্যাপারে বিশেষভাবে একটা বিষয়ে কতৃপক্ষেরা যে সাহস দেখিয়েছেন সেজন্যে আমি তাদের ভূরি ভূfর সাধুবাদ দিই। কী কারণে জানি নে, হয়ত উড়িষ্যার হাওয়া লেগে আধুনিক বাঙালী অকস্মাৎ মূর্ধণ্য নয়ের প্রতি অহৈতুক অতুরাগ প্রকাশ করছেন। আমি এমন চিঠি পাই যাতে লেখক শনিবার এবং শূন্য শব্দে মুধণ্য ন দিয়ে লেখেন । এটাতে ব্যাধির সংক্রামকতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। কনেল, গবন র, জনৰ্ণল প্রভৃতি বিদেশী শব্দে তারা দেবভাষার ণত্ববিধি প্রয়োগ করে তার শুদ্ধিতা সাধন করেন । তাতে বোপদেবের সম্মতি থাকতেও পারে। কিন্তু আজকাল যখন খবরের কাগজে দেখতে পাই কানপুরে মূর্ধণ্য ন চড়েচে তখন বোপদেবের মতে বৈয়াকরণিককে তো দায়ী করতে পারি নে। কানপুরের কান শব্দের দুটো ব্যুৎপত্তি থাকতে পারে, এক কৰ্ণ শব্দ থেকে। ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে রেফের সংসর্গে নয়ের মূর্ধণ্যত ঘটে। কর্ণ শব্দের 'র' গেলেই মূর্ধণ্যতার অস্তিত্বের কৈফিয়ৎ যায় চলে। কানপুরের কান শব্দ হয়তো কানাই শবের يقيا إلا البية 屿 '; } অপভ্রংশ। কৃষ্ণ থেকে কান ও কানাই শব্দের আগমন । কৃষ্ণ শব্দে ঋফলার পরে মূর্ধণ্য ষ, ও উভয়ের প্রভাবে শেষের ন মূর্ধণ্য হয়েছে । আধুনিক প্রাকৃত থেকে সেই ঋ ফলা হয়েছে উৎপাটিত । তখন থেকে বোধ করি ভারতের সকল ভাষা হতেই কানাই শব্দে মূধণ্যের আক্রমণের আশঙ্কা চলে গেছে । কিন্তু নতুন উপক্রমণিকা-পড়া বাঙালি হয়তো কোন দিন কানাই শবে মূর্ধণ্য ন চালিয়ে তৃপ্তিবোধ করবেন । এই রকম দুটো একটা শবদ তাদের চোখ এড়িয়ে গেছে । স্বর্ণের রেফইম অপভ্রংশ সোনায় তারা মৃধণ্য ন অণকড়িয়ে আছেন, অথচ শ্রবণের অপভ্রংশ শোনা তাদের মূর্ধণ্যপক্ষপাতী তীক্ষু দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে । ব্যাকরণের তর্ক থাক, ওটাতে চিরদিন আমার দুবল অধিকার । কৃষ্ণ শব্দের অপভ্রংশে কোনো প্রাকৃতে কাণ হ বা কাণ থাকতেও পারে, যদি থাকে সেখানে সেটা উচ্চারণের অতুগত । সেখানে কেবল লেখবার বেলা কাণহ এবং বলবার বেলা কানহ কখনই আদিষ্ট হয় নি। কিন্তু প্রাকৃত বাংলায় তো মূর্ধণ্য নয়ের সাড়া নেই কোথাও। মুদ্রাযন্ত্রকে দিয়ে সবই ছাপানো যায় কিন্তু রসনাকে দিয়ে তো সবই বলানো যায় না। কিন্তু যে মূর্ধণ্য নয়ের উচ্চারণ প্রাকৃত বাংলায় একেবারেই নেই, গায়ে পড়ে তার আনুগত্য স্বীকার করতে যাব কেন ? এই পাণ্ডিত্যের অভিমানে শিশুপালদের প্রতি যে অত্যাচার করা যায় সেটা মার্জনীয় নয়। প্রাকৃত বাংলায় মূর্ধণ্য নয়ের স্থান কোনো থানেই নেই এমন কথা যে-সাহসে কতৃপক্ষ ঘোষণা করতে পেরেছেন সেই সাহস এখনো আরো কত দূর তাদের ব্যবহার করতে হবে। এখনো শেষ হয় নি কাজ । * • আমি প্রাকুত বাংলা” শব্দটি ব্যবহার করে আসছি । সেদিন এর একটী পুরাতন নজির পেয়ে আশ্বস্ত হয়েছি বুলবুল নামক পত্রে ।