পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&& কারণেই হউক, ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ ফরাসী ভারতে কনক্রিপশনের আইন প্রবর্তিত করেন নাই। যে চানননগর সেকালে কনক্রিপশনের ভয়ে অস্থির হইয়াছিল, সেই চন্দননগরই ১৯১৪ খ্ৰীষ্টাবো, ইউরোপীয় মহাসময়ে সৰ্ব্বাগ্রে স্বেচ্ছায় বাঙালী খুবকম্বলকে সৈনিকরুপে প্রেরণ করিয়াছিল। চন্দননগরের যুবকগণকে স্বেচ্ছায় সৈনিকবৃত্তি অবলম্বন করিতে দেখিয়া পণ্ডিচেরী, কারিকল, মাহে প্রভৃতি ফরাসী উপনিবেশের যুবকগণ যুদ্ধে অগ্রসর হইয়াছিল। ভাদুনের রণক্ষেত্রে বাঙালী গোলম্বাঙ্গ সেনার সাহস ও রণকৌশল দর্শন করিয়া এক জন প্রবীণ ফরাসী সেনাপতি তাহাজের অশেষ প্রশস বরিয়া বলিয়াছিলেন যে, ভাদুনের রণক্ষেত্রে ধৰি এক রেজিমেন্ট বাঙ্গালী গোলন্দাজ সেনা থাকিত তাহা হইলে বহু পূর্বেই দর্শণ সেনাকে ভাল্গুন পরিত্যাগ করিতে হইত। এখন যদি ফরাসী গবর্ণমেণ্ট থাকায় ফরাসী ভারতে বাধ্যতামূলক সমরশিক্ষার ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন, তাহা হইলে চন্দননগরের শত শত বাঙালী যুবা স্বেচ্ছায় সময়-বিদ্য শিক্ষায় অগ্রসর হইবে, তাহাতে কণামাত্র সন্দেহ নাই। পচিশ-fত্রশ বৎসরের মধ্যে চন্দননগরের যুবকসমাজের মনোভাবের এই প্রবর্তন বিস্ময়কর নহে কি ? আজকাল আমরা দেখিতে পাই, জলপ্লাবন, ছুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প প্রভৃতি দৈব রোধে বিপন্ন জনগণকে রক্ষা ও সাহায্য করিবার জন্ম ছাত্রসমাজই অগ্রণী হয়। দেশহিতকর কাধ্যে অর্থের প্রয়োজন হইলে, ছাত্রগণই সৰ্ব্বাগ্রে অর্থসংগ্রহে প্রবৃত্ত হয়। এরূপ কাৰ্য্য সেকালের ছাত্রসমাজে অজ্ঞাত, এমন কি ধারণারও অতীত ছিল। আমাদের বয়স যখন আট বৎসর কি নয় বৎসর, সেই সময়ে মাক্সাজে ভীষণ দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। সে-যুগে ব্ৰহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন মহাশয়ের প্রতিষ্ঠিত স্থলভ সমাচার ছাত্রসমাজের বিশেষ প্রিয় ছিল। সেই 'শ্বলঙ সমাচারে মাম্রাজ স্থর্তিক্ষের একখানি চিত্র প্রকাশিত হইয়াছিল এবং সকলকে আর্থিক সাহায্য প্রেরণ করিবার জন্য আবেদন করা হইয়াছিল। বোধ হয় সেই চিত্র দর্শন ও আবেদন পাঠ করিয়া আমাদের স্কুলের শিক্ষকদিগের হৃদয় বিচলিত হইয়াছিল, তাই তাহার এক দিন প্রত্যেক ক্লাসের ছাত্রদিগকে দুই আন ব। এক আনা করিয়া টাদ দিতে বলিয়াছিলেন । আমরাও প্রবাসী ১৩৪৪ চাদ দিয়াছিলাম। কিন্তু সেই দুর্ভিক্ষক্লিষ্টদিগকে সাহায্য করিবার জন্ম স্কুলের উচ্চতর শ্রেণীর বা কলেজের ছাত্রদিগকে লোকের দ্বারে স্বারে ঘুরিয়া পৃথক ভিক্ষা করিতে দেখি নাই। এই সকল ব্যাপারে যে সেকালের ছাত্রসমাজ অপেক্ষা একালের ছাত্রসমাজে কৰ্ত্তব্যজ্ঞান যথেষ্ট বৃদ্ধি পাইয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই। সেকালের ছাত্রদের তুলনায় একালের ছাত্রগণ অত্যধিক বিলাসী হইয়াছে। একালের ছাত্রগণ ফুটবল প্রভৃতি ক্রীড়ার জন্ত যৎপরোনাস্তি পরিশ্রম করিতে পারে বটে, কিন্তু সাংসারিক কার্ঘ্যে তাহারা অভ্যস্ত বাৰু হইয়৷ পড়িয়াছে। এখনও পল্লীগ্রামে অনেক খুলের ছাত্রসমাজে শহরের ছাত্রদের মত বিলাসিত প্রবেশ করে নাই সত্য, কিন্তু বালক ও যুবকগণ যেরূপ অনুকরণপ্রবণ, তাহাতে আর কিছু দিন পরে পল্লীগ্রামের ছাত্রসমাজেও বিলাসিত প্রবেশ করিখে সন্দেহ নাই। সকল দেশেই রাজধানীই বিলাসিতার কেন্দ্রস্থল। রাজধানীর ফ্যাশানই বঙ্কার জলের মত ধীরে ধীরে দেশের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হইয় পড়ে। কলিকাতার ছাত্রসমাজের অনুকরণ করে পল্লীগ্রাম অঞ্চলের ছাত্রগণ। স্বতরাং কলিকাতার ছাত্রসমাজের সকল বিষয়েই বিশেষ সাবধান হওয়া উচিত। আমরা বাল্যকালে, চন্দননগর গড়ের স্থলে পড়িতাম । গড়বাট নামক পরীতে ঐ স্কুলটি অবস্থিত বলিয়া লোকে সংক্ষেপত: উহাকে গড়ের স্কুল বলিত। ঐ স্থল আমাদের বাট হইতে অনুন দেড় মাইল বা তিন পোয় দূরে। । আমার বয়স যখন সাত বৎসর কি আট বৎসর তখন আমি ঐ স্কুলে প্রবেশ করি। আমাদের বাটীর নিকটে, ফরাসী মিশনারীদের "সেন্ট মেরিজ ইনষ্টিটিউশন" নামে আর একটি স্কুল ছিল কিন্তু তাহাতে ইংরেজী ও বাংলা শিক্ষার স্বব্যবস্থা ছিল না, ফরাসী শিক্ষার প্রতি মিশনীদের ঝোক ছিল বলিখা তথায় ফরাসী শিক্ষাটাই ভালরূপ হইত। ঐ স্কুলে ফরাসী-বিভাগে ছাত্রদের বেতন ছিল না, সেজন্য ঐ স্থলে ফরাণী-বিভাগে দরিদ্র ছাত্রগণই অধ্যয়ন কল্পিত। যাহারা বাংলা এবং ইংরেজী শিক্ষা প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে কfরতেন, তাহারা পুত্রদিগকে গড়ের স্কুলেই ভৰ্ত্তি করিয়া দিতেন। সেই জন্তু আমরা বাটীর কাছে সেণ্ট মেরিজ ইনষ্টিটিউশন