পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bఆఫె প্রবাসী >ージ88 মধু পুনরায় হাসিয়া উত্তর দিল, “এঞ্জে ঠাকুর যে মোদের অন্তর্ধামিনী। তিনি সব বুঝতে পারে।” “কিন্তু তিনি কে – তাই যে জানি নে।” *গেলেই জানতে পারব, বাবু। তিনি না থাকলে গায়ে কেউ তিষ্ঠুতে পারতো ! কত নেকানিকি করে ডাক আপিস বসালে।” মধুর বাক্যস্রোতের মধ্যেই আমি সপরিবারে গে-যানে চাপিয়া বসিলাম এবং আশু বিপদের দায় হইতে রেহাই পাইয়া সেই ‘অন্তর্ধামিনী’ গাঙ্গুলী ঠাকুরের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানাইলাম। 鬱 壽 聽 গ্রামের প্রাস্ত সীমায় ছেগবেড়া দিয়া ঘেরা ছোট একথানি বাড়ী। বাড়ীতে খান তিন চার কুঠরি আছে, সব ক-থানিই খড়ের চালা । বাহিরের বড় ঘরখানিতে বসে পোষ্ট আপিস, ভিতরের ছোট কুঠরি দুখানি মাষ্টারের বাসগৃহ অর্থাৎ কোয়াটার। চাকরি লইয়া অবধি বহু বাসগৃহের আস্বাদ লওয়া গিয়াছে, সুতরাং চালা দেখিয়া বিশেষ চিন্তিত হইলাম না। র্যাহাকে অবসর দিতে আসিয়াছি তিনি বাহিরের বড় চালাথানিতে অর্থাৎ আপিস-ঘরে দড়ির খাটিয়ায় কাথা মুড়ি দিয়া পড়িয়া ছিলেন। ভাদ্র মাসে কাথামুড়ি দেওয়ার অর্থ মফস্বলবাসীদের বিশেষ করিয়া ব্যাখ্যা করিয়া দিতে হয় না। ভদ্রলোক মাসের প্রথম হইতেই ‘সিক’ রিপোট করার ফলে মাসকাবারে "রিলিফ আসিয়া পেীfছয়াছে । খাটিয়ার পাশে উচু টুলে ৰিনি বসিয়াছিলেন তিনিই আমাদের ‘অন্তর্যামিনী’ গাঙ্গুলী মহাশয় । বয়স ৪৫৪৬, চেহারার জৌলুঘ আছে । ফরসা এবং গোলগাল । স্থগত্বহেতু খৰ্ব্বাকৃতি। মাথায় টাক এবং মুখে হাসি ; লোকটি সৌম্যদর্শন ! আমাকে দেখিয়াই চিনিলেন এবং যুক্তকর ললাটে ঠেকাইয়া বলিলেন, “নমস্কার । পথে অনেক কষ্ট হয়েছে নিশ্চয়, কিন্তু উপায় কি বলুন ?” পরে গো-ধানের পানে চাহিয়া ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, *পরিবার নিয়েই এসেছেন । বেশ, বেশ । যান, ওদের বাড়ীর ভেতরে যেতে বলুন। এর কেউ নেই,—ব্যাচিলার কিনা। তাই দেখুন না, নিজে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিনরাত রুগীর পাশে ব’সে আছি । এদিকে আপিসের কাজ তাও আমায় করতে হয়। বিদেশবিভূই—জামরা না দেখলে কে দেখে বলুন " প্রথম দর্শনেই লোকটির উপর শ্রদ্ধা হইল। বিদেশে এত বড় সাহায্য ঈশ্বরের দয়া ছাড়া মেলে না। এই রুগ্ন লোকটির সেবা যত না হউক, পোষ্ট আপিসের কাজগুলি সারিয়া দিয়া উহার ভবিষ্যতের ভাবনাটুকু যে দূর করিয়া দিয়াছেন সেজন্য ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা চলে না। রোগ ছু-দিন পরে সারিয়া যাইবে, কিন্তু চাকরি গেলে ইহজীবনে সে-ধন আর মিলিবে না। নমস্কার করিতেই হাত ধরিয়া হাসিয়া বলিলেন, “থাক, ভায়া, থাক। ওরে বিলু, বিন্দু, বৌমাদের বাড়ীর ভেতর নিয়ে যা। হাতমুখ ধোবার জল তোলা আছে ত । ঘরদোর সব দেখিয়ে দে। আর দেখ, চট করে রাখু ঘোষকে খবর দে—সেরটাক দুধ এখনই চাই । ছোট ছেলে রয়েছে, দুধ না হ'লে ত চলবে না।” বিন্দু মেয়েদের ঘরদোর চিনাইয়া দিয়া দুধের খোজে গেল। গাঙ্গুলী আমাকে বলিলেন, “এক ঘণ্টা পরে আপিস খুলবে। তুমি ভাই হাত মুখ ধুয়ে কিছু জলটল থেয়ে এখানে এসে ব’স। আমি ততক্ষণে একে ষ্টেশনে পৌছে দেবার ব্যবস্থা করি । এই গাড়ীতে না গেলে ট্রেন ধরতে পারব না ।” রুগ্ন ব্যক্তি হাত নাড়িয়া বলিল, “চাঞ্জ বুঝিয়ে দিতে হবে ।” গাজুলী হাসিয়া বলিলেন, “চার্জ ! বলে আপনি বাচলে বাপের নাম ! এই যে ক-দিন বেস্থস হয়ে পড়েছিলে--- চোরডাকাতে সব লুটেপুটে নিলে কি করতে ? কাকে বুঝিয়ে দিতে চার্জ ? ভারি ত পাচ সিকের হিসেব, তার আবার বুঝিয়ে দেওয়া ? নাও, চটপট সহ কর, তুমিও সই কর ভায় । ফিরে এসে আমিই বুঝিয়ে দেব চার্জ-সিন্দুকের চাবি আমার কাছেই রইল।" গাজুলী মহাশয় রোগীকে লইয়া গাড়ীতে উঠিলেন, আমি এধার ওধার ঘুরিয়া ডাকঘরের সম্পত্তি দেখিতে লাগিলাম।