পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰেণৰণ পুত্রবধু মান ভীত মুখে স্বমুখে দাড়াইয়াছিল। ব্যাপার হইয়াছিল, নীচ জাতীয় ঝিয়ের মাজিয়া-আনা বাসন আর একবার ভাল করিয়া জল ঢালিয়া ঘরে তোলা হয়। ছোট বৌটি সেই কাজেই রত ছিল । কিন্তু সেজখুড়ীমার কেমন করিয়া মনে হইয়াছে যে, যথোপযুক্তরূপে জল ঢালা হয় নাই, অতএব জাতজন্ম সবই গিয়াছে। তুচ্ছ একটা ব্যাপার লইয়া কি তুমুল কলরব, শান্তিভঙ্গ, মনঃকষ্ট ! জীবনের সকল মাধুর্ঘ্য অবমানিত হইয়া ফিরিয়া গিয়াছে । - 8 স্নান করিয়া আসিল্প লীলা পান সাজিতে বাসিয়াছিল। বড়বে পাশে বলিয়া জাতি দিয়া স্বপারি কাটিা স্তুপাকার করিতেছিলেন। একটুখানি হাসিয়া কহিলেন, “এত দিন পরে বোধ করি বিমলার বিয়ের ফুল ফুটুল। শুনছি কোন এক জায়গা থেকে নাকি দেখতে এসেছে । তারা কাল রাত্রির ট্রেনে এসেছে । গরুর গাড়ী ক'রে এখানে পৌছতে সেই যাকে বলে গিয়ে রাত এগারটা । আজ সকালে বুঝি কলে দেখান হবে ।” লীল উৎসুক হইয়া উঠিয়া কহিল, “তাই নাকি ? আচ্ছা কেমন জায়গায় সম্বন্ধ হচ্ছে দিদি ?” “নেহাৎ মন্দ নয়। পারটি ম্যাটিকুলেশন পর্যাপ্ত পড়েছে । গায়ে জমীজমা আছে । মোটা ভাত-কাপড়ের কষ্ট নেই । তবুও কি খাই কম ! একটি হাজার টাকা পণ নেবে। ত৷ ছাড় অল্পস্বল্প গয়নাগাটি, বিয়ের খরচ। কত জায়গায় খুঁজে দেখলে । এর চেয়ে কমে কি আর মেয়ের বিয়ে হয় - পাড়ার কৌতুহলী মেঘের দল, যাহার কোনদিন গ্রামের একপ্রাস্তে বিমল্লাদের গৃহে পদার্পণ করে না, আজ একেবারে দলে দলে ভাঙিয়া পড়িয়ছিল । লীলাও গেল । পাশের ঘর হইতে দেখিল, সঙ্গরের তক্তপোহের উপর একটি পরিষ্কার চাদর পাতা । বর তাহার এক জন বন্ধুকে লইয়৷ দেখিতে আসিয়াছে। বিমল! একখানি সাদাসিদে ধোস্থান কালোপাড়ের কাপড় পরিয়৷ পিতার সহিত গেল। মতান্ত বাহুল্যবজিত বেশ । অলঙ্কার বা প্রসাধন কিংবা জর্জেট বেলারসীর একান্তই অভাব । তথাপি ঐ বেশেই তাহাকে কি চমৎকার মানাইয়াছে। শাস্ত মুখচ্ছবিতে একটি আত্মসমাহিত ভাব। কপালের সিলুদ-বিন্দুটি জল জল করিতেছে। কলে-দেখা ו"ס6 জীবনের দুঃখদৈন্যকে জানিয়া শুনিয়া বরণ করিয়া লইয়াও ঐ সিঁদুরের টিপটি যেন একটি রক্তগোলাপ হইয় ফুটিয়া আছে। বরের বন্ধু কলিকাতার ছেলে, গ্রাজুয়েট । আজকালকার অত্যন্ত নব্য এবং চতুর যুবক । সমস্ত জিনিষের বাজারদর যাচাই করিয়া বাজাহয় লইতে পারে। তাই বিশেষ নিৰ্ব্বদ্ধ করিয়া তাহাকে এ ব্যাপারে আন । বন্ধুটি একটা সিগারেট ধরাইয়া কহিল, ”আচ্ছ আপনি ক'রকম সেলাই জানেন । এম্ব্ৰয়ডারি, কাশ্মীরী ষ্টিচ ?. পিক্‌টোগ্রাফ ? --আচ্ছা বলুন দেখি মাছের কোপ্ত কেমন ক’রে রাধে । মুড়ি ভজিতে জানেন । রাধাবাড়া বাটন-বাটা এসব ভাতের ক্ষেন কেমন ক’রে ঝরান্থ বলুন দেখি ।---আচ্ছ গান ? গান কি এম্রাজ বাজিয়ে করেন, না হাৰ্ম্মোনিয়াম ?” বিমলা বিশেষ কোন কথার জবাব না দিয়া স্মিতযুখে নমস্কার করিয়া উঠিয়া আসিবার সমস্থ কহিল, “সাধারণ অল্প আয়ের অধিকাংশ বাঙালী গৃহস্থঘর চালাতে গেলে যা ষা শিখতে হয় সেইটুকু মাত্র শিখেছি। তার বেশী জানি নে ৷” শোনা গেল, কস্ত পছন্দ হইয়াছে । বরের বন্ধু রায়ু দিয়াছেন, আভ্যন্ত সেকেলে, যদিও চেহারা মন্দ নয়। কিন্তু স্বয়ং পাত্র বলিয়াছেন, “ষাদের দু’খানা হালের জমিতে সংসার চালাতে হয় তাদের স্ত্রী এস্রাজ বাজিয়ে গান গায়, না হার্শ্বোনিয়ামের সঙ্গে গাম্ব, এ-কথাটা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ৷” লীলার মনটা খুং ৰুং করিতেছিল। কিন্তু সেদিন দুপুরবেলা যথানিয়মিত সেলাই শিখিতে জাসিয়া বিমলা একটু হাসিয়া কহিল, “তুমি কেন মিখ্যে দুঃখ পাচ্ছ মালীম। ভেবে দেখ বাংলা দেশের নিরানব্বই জন মেন্থের ত এমনই ক’রে অৰ্দ্ধসচ্ছল সংসারে কায়ক্লেশে দিন কেটে যায় । আমি তাদেরই এক জন—একথা ভাবতে আমার মনে কোন কষ্ট নেই। কিন্তু এই মনে ক’রে কেবল আমার হাসি পাচ্ছে যে, বাংল-দেশে কনে-দেখা বস্তুটা কি রকম প্রহসনের ব্যাপার ! মেয়েটিকে যাচাই করতে এলে জহরি এক নিঃশ্বাসে প্রশ্ন করবেন, তুমি শেলী, কীটপ্‌, বাস্করণ পড়েছ -“তুমি ঘটে দিতে পার । অথচ এর হাস্যকরত, নিষ্ফলতা আর অসঙ্গতির দিকটা তাদের চোখে পড়ে না ।"