পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রশৰণ ত্ৰিবেণী (Sh সে নিজেকে অনুপ্রাণিত ক’রে রাখতে চায়। বিধবার নিশ্চেষ্ট পুজা তার নয়, কুমারীর কমনীয় কামনাকেও সে জীবনে চায় না ; সাধকের ধ্যানলোকে সে তার দয়িতের জীনসভার কৰ্ম্মসহচরী। যেখানে তার চেষ্টা বাসনায় কলুষিত নয়, মোহে অবিবেকী নয় এবং শচীন্দ্রের স্কুল সত্ত যেখানে তার স্বতঃস্ফূর্ত অজেয় আত্মাকে খণ্ডিত করে ল ৷ এই দুই মাসের মধ্যেই সে নারীজগতের নানা মজলপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজের যোগস্থত্র স্থাপনের চেষ্টা করেছে । ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে সে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট উৎসাহ ও প্রতিশ্রুতি পেয়েছে । তার ইচ্ছা যে নান। কেন্দ্রে নিজে উপস্থিত হয়ে কৰ্ম্মী নারীকুলের যোগ স্থাপন সহযোগে এক বিরাট ভারতের সকল 2f পরিচয় ও সঙ্গে সে করবে । প্রত্যক্ষ সঙ্গে নারীমঙ্গল প্রতিষ্ঠানে সকলকে অ9প্রাণিত ক’রে শচীন্দ্রের কল্যাণে অর্থের অনটন তার ছিল না। তার অনুপস্থিতিতে কমলাপুরীর কাধ্যপরিচালনের সুবন্দোবস্তু সে ক'রে রেখেছিল । কাল প্রত্যুষে কলকাতায় যাবে বলে স্থির ক'রে সে আদেশ fদয়েছিল লঞ্চ প্রস্তুত রাখতে । তার নিখিল-ভারত ভ্রমণের ভূমিকাস্বরূপ কলকাতার কয়েকটি বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সে পরিচিত হতে চায়। সমস্ত কাজকম্মের অবসানে সকলের তুলবে। নিত্যকার অভ্যাসমত সে বারানায় তার আসনটিতে এসে বসন্স । কাল যে বিরাট উদ্বেগু নিয়ে সে সম্পূর্ণ অপরিচিত জগতের মধ্যে নিৰ্বাঞ্চব হয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তার নি:সঙ্গ একাকীত্বের গুরুভার অজ্ঞাতসারে তার চিত্তকে অধিকার ক'রেছিল ; এবং চিত্তের গোপন অন্তরালে প্রচ্ছন্নরূপে, তার সমস্ত স্বশাসিত সাধনার আদর্শকে পরিহাস করে, কখন ধে শচীন্দ্রের বিরহবেদন ধীরে ধীরে অন্তরের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে তা সে লক্ষ্যও করে নি । লওনে পীড়িত শচীন্দ্রের সেই অসহায় রোগতাপিত মূৰ্ত্তি, ইউরোপের নানা দেশ ভ্রমণের অবসরে পরস্পরের ঘনিষ্ঠতার রসায়নে নুতন জীবনে পরস্পরকে সঞ্জীবিত ক'রে তোলার সেই স্নবর্ণমণ্ডিত দিনগুলির ইতিহাস, কমলাপুরীতে দ্বিধাবিচলিত শচন্দ্রের আত্মসমর্পণের করুণ কোমল রহস্ত, সমস্তই তার চিত্তে গভীর বিবৃহতপ্ত অশ্রুসজল বেদনায় আজ প্রতিফলিত হয়ে উঠেছে। নিৰ্মীলিত নেত্রের বারিধারা আর ফুলের বাধা মানে না ; অসহায় আকুল চিত্ত তার প্রেমাম্পদের আকাঙ্ক্ষাকেও নিবারণ ক"ন্তর রাখতে পারে না । নিরুপায়ু অনাথের মত সে নিজের শোকের কবলে নিজেকে বিসর্জন দিলে । .* এমনি শাসনমুক্ত, শিথিলগ্রন্থি, বেদনাবিধুর চিত্তে অশ্রুবিগলিত মুদ্রিত নয়নে সে শচীন্দ্রকে তার নিজের সমগ্র চেতনা দিয়ে অনুভব করবার আবেশে স্থির হয়ে পড়ে রইল । রাত্রি পূর্ণিমা । সমস্ত জলস্থল আকাশ জ্যোৎস্নার প্লাবনে যেন জোয়ারের সমুদ্রের মত উন্ধেল । ওপারের চাষীগ্রামের মুগুদীপ পর্ণকুটীয় থেকে রোমস্থলম্বথাবিষ্ট গাভীর কণ্ঠলগ্ন মৃদু ঘন্টাধ্বনি যেন দূর স্বপ্নালোকের রাগিণী বহন ক'রে আনছে । কিন্তু বহির্জগতের এই অতুপম সুন্দর রসশ্রোত পাৰ্ব্বতীর গভীর বেদনার উলে অাজ নিলীন । সহসা পদশকে ১কিত হয়ে সে উঠে বসল। সামনে শচীন্দ্র-বিস্রস্ত কেশবেশ, উদভ্ৰান্ত মূৰ্ত্তি, খলিত চরণ। এ কি স্বপ্ন ? চোখকে যেন বিশ্বাস করা যায় না। শাস্ত্রে বলে যে, একান্ত ধ্যানপরায়ণ একাগ্রচিত্তে আরাধনা করলে, দেবতা মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করে সম্মুখে আবিভূত হন । এ কি তার হৃদয়বাসী দয়িতের বিগ্রহমুক্তি ? এ সময় এ ভাবে : এ কি সম্ভব! কিন্তু এ কি বিধ্বস্ত, ক্লাস্ত, পীড়িত মূৰ্ত্তি শচীন্দ্রের ? এই শচীন্দ্র । ষাকে কমলার সাহচৰ্য্যমুখে পরিতৃপ্ত কল্পনা ক’রে সে মনে মনে সাম্ভনী লাভ করবার প্রয়াস পেয়েছে ; যার আগুকাম, মুখতৃপ্ত আননের হাস্তোজ্জল প্রভা দেখার আশায় সে তার প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে অপেক্ষ ক'রে আছে—এ ত সে নয় । শ্রণ্ডিতে অবসাদে শচীন্দ্ৰ যেন জার দাড়াতে পারছে না-এখনি শ্লথ ভগ্ন ছিন্নমূল হয়ে পড়ে যাবে। পাৰ্ব্বতী তার এই ঝঞ্জাহত মুঠি দেখে স্থানকাল তুলে রপ্তপদে উঠে তার দিকে এগিয়ে গেল। দুই বাস্থ প্রসারিত করে শচীন্দ্র তার শিখিলমূল কম্পমান দেহকে পাৰ্ব্বতীর