পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রেণবণ অজানা নেই, আমাকে ধগু হবার একটা স্বধোগ দাও, পৃথিবীর এক অজ্ঞাত কোণে চল আমরা পালিয়ে যাই ? কয়েক মিনিটের ছেদ । ‘পরশু ঠিক এমনি সময়ে এস, অশোকা বললে, ‘মাঝখানে একটা দিন আমাকে ভাবতে দাও।” ওদের মধ্যে তাই স্থির হ’ল । কয়েক মিনিট পরে দেখা গেল কল্যাণকুমারের টু-সাঁটার ফিরে যাচ্ছে ; মাঝখানে একটা মাত্র দিন ! তরুণ অধ্যাপক আদিত্যনাথকে দেখা গেল নির্জন দ্বিপ্রহরে জষ্টিস্ কে. সি. গাজুলীর বাড়ীতে প্রবেশ করছে। সিদ্ধের চাদর তার মাটিতে লুটচ্ছে । দ্বিতলের একটি কক্ষের রুদ্ধ দরজায় আদিত্যনাথ মুদু করাঘাত করল ; কোন শব্দ নেই । তিমতলা থেকে গ্রামোফোনে গানের শব্দ শোনা যাচ্ছে । এক জন ভৃত্য বারান্দ অতিক্রম করছিল। বহু উৎসব এবং উল্লাস উপলক্ষে এ-বাড়ীতে আদিত্যনাথের উপস্থিতি সে লক্ষ্য করেঢ়ে । আদিত্যনাখ বন্ধ দরজাস্থ পুনরায় করাঘাত করল । ভেতরে অস্পষ্ট শব্দ শোনা গেল, দরজা খুলল। আদিত্যনাথকে দেখে অশোকার মুখে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল এক টুকরো হাসি । পিঠের ওপর দিয়ে রঙীন শাড়ীখানা মেঝেতে লুটচ্ছে ; চোখে তার তখনও ঘুমের আবেশ । "এস নী ভেতরে। অশোক আদিত্যনাথকে আহবান করল । আদিত্যনাখের চশমার কাচে স্বর্ষ্যের আলো চিক্‌ চিক্‌ ক'রে উঠল । অশোকার শয়নকক্ষ ; ওর পড়াশুনো এবং অলস সময় ক্ষেপণ করবার ঘর স্বতন্ত্র । এ-ঘরে অতিথির কোন আসন নেই। ‘ব’স না বিছানায় অশোকা বললে, ‘এমন অসময়ে ? "fকছু মনে কর নি ত সঙ্কুচিত কণ্ঠে আদিত্যনাথ বললে, "এমন সময়ে এসেছি ? "এসে যখন পড়েছ তখন আর উপায় নেই, শিথিল হাস্যে অশোকা বললে । গেীয় অঙ্গ তার লুটিয়ে পড়ল শয্যায়। "দেখলাম, মাগরিক জীবনে তোমার ক্লাম্ভি এসেছে, আদিত্যনাথ আর সময়ের অপব্যবহার না-ক'রে বললে, Woo-br এক ষে ছিল নারী, ও নগরী @\●● ‘অবিশ্রাম আনন্দের হৈচৈ আর তোমার ভাল লাগছে না। আদিত্যনাথের শাস্ত নম্র কথাগুলো হাওয়ায় কাপতে লাগল Cરી ! ‘বাস্তবিক আর ভাল লাগে না, নিস্তেজ কণ্ঠে অশোক! বললে, ‘দিনরাত পাট, পিকনিক, টিপ, ডান্স, কি বিত্ৰ এখানকার জীবন। এখান থেকে পালাতে পারলে বঁচিতাম ।” 'চল না আমাদের দেশে !’ আদিত্যনাথ হঠাৎ খুশীর স্বরে বললে, যাবে ? নদীর ধারে গাছপালার ছায়ায় আমাদের বাড়ী, ধোয়, ধুলো নেই, মোটরের শব্দ নেই, গ্রামোফোন নেই । শুধু নদীর ছলছল শৰ ; প্রকাও গাছগুলোর সে সে। গজ্জন । চল যাই সেখানে আমার ঘরের লক্ষ্মী হবে । শহরের এই তামাটে রং, এর পৈশাচিক উল্লাসের কবল থেকে চল আমি তোমাকে নিয়ে ঘাই । আমারও ত অভাব নেই কিছু ; অধ্যাপন থেকে বিশ্রাম নেওয়া ধাক ; তোমাকে কাছে পেলে পৃথিবী অনেক মহৎ জিনিষ আমার কাছে পেতে পারে হয়ত ! চল আমরা ধান্ত ।" কম্বেক মিনিটের ছেদ । দ্বিপ্রহরে নিজ্জন এই ঘরের মধ্যে আদিত্যনাথের কথাগুলো শক-সমূদ্র অতিক্রম করেছে বটে, কিন্তু এখনও তারা ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। অশোক উঠে বসল। বললে, ‘বুঝেছি তোমার কথা, আমি জানি, পল্লীগ্রামের নিঃসঙ্গতায় তুমি আমাকে জাগিয়ে রাখবে, কিন্তু আজ আমাকে দিয়ে কিছু স্বীকার করিয়ে নিও ন। একটা দিন আমায়ু ভাববার সময় দাও ; পরশু এস এমনি সময়ে, বলব তোমাকে । এস নিশ্চয়।” কবরী তার জালুলায়িত হ’ল । সদ্ধা অতিক্রান্ত । জটিস কে. সি গাজুলীর প্রাসাদোপম অট্টালিকার সামনে প্রকাও একখানা লাল-রঙের গাড়ী অপেক্ষা করছি । হুইলের ওপর হাত রেখে গাড়ীর মধ্যে উপবিষ্ট এক তরুণ। ফুটবোর্ডে পা রেখে কুমারী অশোকা তার সঙ্গে কথা বলছিল ; মৃদু অম্পট জালাপ, অশোক মাঝে মাঝে রূপালী কণ্ঠে হেসে উঠছিল ; কলকাতার নিজম এক রাস্তা। মাঝে মাঝে ছু-একখানা মোটর অতিক্রম করছিল।