পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

treff qe ক্রীচৈতন্ত্য ও ওড়িয়ণ জাতি Øግ› অর্থাৎ মহারাজ প্রতাপরুদ্রদেবের রাজত্বের ষষ্ঠ বর্ষে সেতুবন্ধ আক্রমণ করিল। বিদ্যানগর কেল্লা ভাঙিয়া ভূমিসাং করিয়া দিল। আবার মহারাজা প্রতাপরুত্রের রাজত্বের চতুর্দশ বৎসরে দেখা যায় যে গৌড় হইতে পাঠানের আক্রমণ করিল । রাজধানী কটকের নিকটে ছাউনি ফেলিল । সে সময় প্রতাপরুদ্র কটকে ছিলেন না, তিনি দক্ষিণে বিজয়নগরের সহিত সংগ্রামে গিয়াছিলেন। বিজয়নগর তখন প্রতাপরুদ্রের স্ত্রীপুত্রকে বন্দী করিয়ু লইয়া গিয়াছিল এবং লোকমুখে বন্দী পুত্রের নিধনবাৰ্ত্তাও পাইয়াছিলেন। ইহা ছাড়া গোদাবরীতীরস্থ বিদ্যানগর বিজয়নগরের অধিকৃত । সেই ভীষণ যুদ্ধে উড়িষ্যা রাজ্য একেবারে হৃভবল ও দুর্বল হইয়া পড়িয়াছিল । কন্যা সম্প্রদান করির প্রতাপরুদ্র বিজয়নগরের সঙ্গে সন্ধি করিয়া রাজ্যের কিয়দংশ উদ্ধার করিতে পারিয়াছিলেন । বিজয়নগরের সহিত যুদ্ধকালে রাজ্যের ভার দিয়া গিয়াছিলেন ভোই বিদ্যাধরের উপর। ভোই বিদ্যাধর ছিল বিশ্বাসঘাতক ও রাজ্যলোভী। গৌড় পতিশাহের ফৌজ যখন কটকে প্রবেশ করিল, বিদ্যাধর তথন সারজগড়ে থাকিল। পাঠানের ঐক্ষেত্রে ৬পুরীধামে প্রবেশ করিল, তৎপূৰ্ব্বে ঐই জগন্নাথকে নৌকাযোগে চিন্তহুদের নিকটে পৰ্ব্বভগুহায়ু লুকাইয়া রাখা হইয়াছিল। পাঠানের ঐমন্দিরে প্রবেশ করিয়া দেবদেবীমূৰ্ত্তি সব ভাঙিয়া চুরিয়া ফেলিল । বিদ্যাধর গৌড়ের পাতশাহের আশ্রয় গ্রহণ করিল। সংবাদ শুনিয়া ক্রোধে প্রতাপরুত্ৰ এক মাসের পথ দশ দিনে অতিক্রম করিয়ু অমিত বিক্রমে পাঠানদের আক্রমণ করিলেন । মাদলাপঞ্জী বলেন যে গড়মান্দারণ পৰ্য্যন্ত পাঠান-সৈগুদিগকে তাড়াইয়ু লইয় গিয়াছিলেন । শেষে ভোই বিদ্যাধরের বিশ্বাসঘাতকতায় প্রতাপরুদ্র অবরুদ্ধ হন । বিদ্যাধরের মধ্যস্থতায় গৌড় ও উড়িষ্যায় সন্ধি হয়। সেই সন্ধির মূলে প্রকৃত রাজ্যশাসনভার বিদ্যাধরের উপর অপিত হইল, এবং প্রতাপরুদ্র নামে মাত্র রাজা থাকিলেন । এই সময়ে প্রতাপরুদ্র শ্ৰীশ্ৰীনীলাচলনাথকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিয়া অধিকাংশ সময়ে পুরীধামে বাস করিতে লাগিলেন। মাঝে মাঝে কটকে যাহতেন । মানুষ দুরবস্থায় বা বিপদে পড়িলে ধর্মের শরণ লইয়া থাকে ইহা নূতন নহে। প্রতাপরুদ্রও তাই করিয়াছিলেন। প্রতাপরুত্রের মৃত্যুর পর তাহার পুত্রদিগকে নিহত করিয়া বিদ্যাধর ভোই-রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন । এইরূপে পর পর রাজবংশে হত্য, বিশ্বাসঘাতকতা, যড়যন্ত্র ও মুসলমান আক্রমণে সমগ্র ওড়িয়া জাতিকে একেবার নিষ্পেষিত করিয়া ফেলিল। তেলেঙ্গ মুকুন্দদেব একবার উড়িষ্যা রাজ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিতে প্রাসী হইয়াছিলেন, কিন্তু কালাপগড়ের প্রবল আক্রমণে এবং অন্তবিপ্লবে উড়িষ্যার রাজলক্ষ্মী অস্তহিত হইল । ইহা বৈষ্ণবধর্মের দোষ নয়— ইহা অদৃষ্টের বিকট পরিহাস । ঐচৈতন্ত উৎকলে বৈষ্ণবধর্থের নূতন প্রচারক ছিলেন না। তাহার সাক্ষী শ্রীমন্দির ও ঐবিগ্রহের সেবা ক্রীচৈতন্তের বন্থ শতাব্দীর পূৰ্ব্বে প্রচলিত ছিল । প্রতাপরুদ্র সিংহাসনে আরোহণ করিবার অব্যবহিত পরে উৎকীর্ণ শিলালিপিতে ঘোষণা করেন যে উনপঞ্চাশ জন বৈরাগী সাধু শ্ৰীমন্দিরে জয়দেবের গীতগোবিন্ হইতে গীত গাহিবেন—সেই সময় অপর লোক তাহাদের স্বরের অনুসরণ করিয়া যোগদান করিতে পারেন কিন্তু তাহাদের গাহিবার সময়ে কিংবা গীতের পূৰ্ব্বে কেহ গাহিতে পরিবেন না। স্বতরাং ঐচৈতন্তের আমলের পূৰ্ব্বে প্রতাপরুদ্র বৈষ্ণব ছিলেন। তাহা ছাড়া পঞ্চসখা বা পঞ্চশাখ বৈষ্ণবেরা ছিলেন— তাহাদের প্রভাব উড়িষ্যায় কিছু কম ছিল না। ঐইজগন্নাথচরিতামৃতে অাছে ওড়িয়া ভাগবত প্রণেতা পঞ্চশাখার অন্যতম শ্রীজগন্নাথদাস প্রতাপরুদ্র-মহিষীর গুরু ও উপদেষ্ট ছিলেন । স্বয়ং রাজা প্রতাপরুদ্র জগন্নাথদাসকে অনুরোধ করেন । ঐচৈতন্তের নীলাচলে বন্ধবর্ষ বাসের পরে তাহার জীবিত কালেই এই ঘটনা ঘটনাছিল। প্রতাপরুদ্র শুধু ঐচৈতন্তের ভক্ত ছিলেন না-ভংকালে জীবিত সকল মহাত্মাদেরই তিনি সমাদর, ভক্তি ও অর্চনা করিতেন । ধে উড়িষ্যার রাজ্যসীম ভাগীরথী-তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তাহা গৌড়-উড়িষ্যায় সন্ধিকালে রহিল না। গৌড়রাজ্য তখন বালেশ্বর পধ্যম্ভ বিস্তৃত হইয়াছিল। এই সন্ধিকালে প্রতাপরুদ্র ও চৈতন্তের মিলন হয় নাই এবং ঐচৈতন্যপ্রবর্ন্তিভ বৈষ্ণবধর্মও তখন উড়িষ্যায় প্রবেশ করে নাই । জাতির অধঃপতন হয় আত্মকলহে, স্বার্থপরতায়, অনৈক্যে এবং চরিত্রহীনতায় । অনবরত যুদ্ধবিগ্রহে কোনও জাতি উন্নত হইতে পারে না। উড়িষ্যার ভাগ্যে ভাহাই ঘটিয়াছিল। যদি বিজয়নগর ও উড়িষ্যা যুদ্ধবিদ্রোহে নিরক্ত না হইয়৷ মুসলমানদের বিরুদ্ধে সমবেতভাবে দণ্ডায়মান হইত, তবে শুধু উড়িষ্য কেন সমগ্ৰ দক্ষিণ-ভারত ও বাংলার ইতিহাস অঙ্গরূপ হইত। ইহা ঐতিহাসিক হাণ্টার সাহেবও ইঞ্জিড করিয়া গিয়াছেন । ঐচৈতন্যের প্রভাবে ওড়িয়া জাতি বৈষ্ণবধর্শ্বকে অবলম্বন করিয়াছিল বলিয়াই অন্যান্ত প্রদেশের অপেক্ষা উড়িষাম্বি ইসলাম-ধৰ্ম্মাবলম্বীর সংখ্যা সৰ্ব্বাপেক্ষা কম । তথায় সহজে কেহ ধৰ্ম্মান্তরগ্রহণ করে নাই এবং জোর করিয়া ধৰ্ম্মস্তির ঘটাইলেও তাহার। আবার বৈষ্ণবধর্শ্ব অবলম্বন করিতে পারিত। ইহা জাতির দৃঢ়তা রাখিতে কম সাহায্য করে না।