পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

❖ግ8 বাধায় তাহাকে একচুল অগ্রসর হইতে দিবে না। ফড়িং ব। প্রজাপতিকে কোন রকমে একবার কায়দায় পাইলে দলে দলে আসিয়া আক্রমণ করে ; কিন্তু তাহদের তুলনায় অত বড় একটা প্রাণীর সঙ্গে তাহারা প্রথমে বড়-একটা কৃতকাৰ্য্য হইতে ন। পারিলেও হতাশ হইয়৷ পিছু হটে না ; একটিই হউক কি দুই-তিনটিই হউক লেজে বা পায়ে কামড়াইয়। ধরিয়া থাকে । ফড়িং এই অবস্থায় যন্ত্রণায় অস্থির হইয়। ক্রমাগত ছুটাছুটি করিতে করিতে অবশেষে ক্লাস্ত হইয়। প্রাণত্যাগ করে । ইহাদের এই উগ্র প্রকৃতির সুযোগ লইয়। কোন কোন মাকড়সা শক্রকে ফাকি দিবার জন্ত তাহীদের আকুতির স্থবহু অন্ধুকরণ করিয়াছে । এ পর্য্যস্ত যত দূর জানা গিয়াছে তাহাতে দেখা যায় তিন জাতীয় বিভিন্ন ভ্ৰাম্যমান মাকড়সা এই নালসো-পিপড়েকে অমুকরণ করিয়া থাকে । ইহাদের মধ্যে ‘প্ল্যাটালিয়ডল্‌’ নামক এক জাতীয় মাকড়সার অমুকরণ-শক্তি সম্পূর্ণ নিখুত । নালুসো-পিপড়ে ও প্ল্যাটালিয়ডস্ মাকড়সার গায়ের রঙে কোনই পার্থক্য বুঝিতে পারা যায় না ; উভয়ের রংই ইটের রঙের মত লাল । একমাত্র গলদেশ ব্যতীত উভয়ের দৈহিক গঠনে সম্পূর্ণ সাদৃশু বিদ্যমান । কিন্তু পিপীলিকা ও মাকড়সার পা ও চক্ষুর সংখ্য সমান নহে । পিপীলিকা প্রভূতি কীটপতঙ্গের তিন জোড় পা ও এক জোড়া চোখ থাকে । মাকড়সাদের কিন্তু চার জোড়ী পা ও সাধারণতঃ চার জোড়। করিয়া চোখ থাকে । পিপড়ে-মাকড়সাদের মস্তকের উপর চারটি এবং সম্মুখ ভাগে চারটি চোখ আছে । সম্মুখের এই চারটি চোখের মধ্যের দুইটি সৰ্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ এবং সম্পূর্ণ গোলাকার এবং মনে হয় যেন মোটরের হেড-লাইটের মত জ্বলিতেছে । এই চোখ দুইটার রং প্রায়ই বদলাইতে দেখা যায় । কখনও উজ্জল নীল, কখনও ঈষৎ লাল, কখনও বা কালে বলিয়া মনে হয় । পোকামাকড় প্রভৃতি শিকারেরা এই উজ্জ্বল চোখ দুইটার সামনে পড়িলে যেন ভয়ে অভিভূত হইয়া পড়ে। মাকড়সা ও পিপীলিকাদের মধ্যে চক্ষু ও পায়ের সংখ্যার পার্থক্য থাকিলেও মাকড়সারা অতি অদ্ভুত কৌশলে পিপীলিকার সহিত সামঞ্জস্য রক্ষা করিয়া চলে । পিপীলিকার মাথার উপর এক জোড়া করিয়৷ গুড় থাকে ; কিন্তু মাকড়সাদের ঐরূপ কোল শুড় নাই, পিপীলিকার। সৰ্ব্বদাই শুড় নাড়িয়া নাড়িয়া চলে এবং এই শুড় সুস্পষ্টরূপে দৃষ্টিগোচর হয় । শুড় দেখিয়া সহজেই অঙ্গান্ত কীটপতঙ্গ হইতে পিপড়েকে চিনিয়া লইতে পারা যায় । অনুকরণকারী মাকড়সার অতি সরল ও সংক্ষিপ্ত উপায়ে এই শু ড়ের ব্যবস্থা করিয়া লইয়াছে । চলিবার সময় সম্মুখের ছুইখানা পা সৰ্ব্বদাই তাহারা পিপড়ের শু ড়ের মত মাথার উপর তুলিয়া ধরিয়া নাড়াইতে থাকে । একে তে পিপড়ের গায়ের রং শু আকৃতির সঙ্গে ইহাদের কোনই তফাৎ নাই, তাঙ্গাতে শু ড়ের মত করিয়া ঠ্যাং দুইটাকে নাড়াইতে থাকিলে শত্রু মিত্র কাহারও সাধ্য মাই যে সহজে এই অমুকরণকারী মাকড়সাকে চিনিয় উঠতে পারে । লাল-পিপড়েরা যেখানে চলাফের করে অথবা ষে-গাছে বাস ৰাধে তাহার আশেপাশেই এবং অনেক সময় এক প্রকার তাহাদের দলে মিশিয়াই এই প্ল্যাটালিয়ডসূ' মাকড়দার ঘোরাফের কম্বিয়া থাকে। কাজেই সাধারণতঃ লোকে ইহাদিগকে পিপীলিকা প্রবাসী ఫిY988 বলিয়াই মনে করিয়৷ থাকে । কিন্তু ইহাদের কতকগুলি চালচলন পিপড়েদের হইতে স্বতন্ত্ৰ । ইহার স্বেরূপ স্ক্রতবেগে চলাফের করিতে পারে নালসো-পিপড়ের সেরূপ পারে না। সাধারণত: আস্তে আস্তে ঘোরাঘুরি করিতে করিতে হঠাৎ কোন কিছু আবছাগোছ দেখিলেই তৎক্ষণাৎ ঘুরিয়া দাড়ায় এবং বিপদ বুঝিলে চক্ষের নিমেষে ছুটিয়া পলায় অথবা পাতার আড়ালে আত্মগোপন করিয়া থাকে, কিন্তু নালসো-পিপড়েরা সেরূপ কিছুই করে না। অনেক সময় ইহাদের গতিবিধি দেখিয়া লোকে অবাক হইয় ভাবে--দুই-একটা নাল সো-পিপড়ের এরূপ অদ্ভুত গতিবিধি কেন ? তাহার। বুঝিতেই পারে না যে, ইঙ্গার মোটেই পিঁপড়ে নয় । চলিতে চলিতে আবার সময় সময় ঘাড় ৰাকাইয়৷ এদিক-ওদিক দেখিয় লয়, নেহাৎ কেহ আমুসরণ করিলে একাত্ত হয়রাণ হইয়। পাতা অথবা ডালের গায়ে সুতা আটকাইয়া নীচে বুলিয়া পড়ে । স্ত্রী প্ল্যাটালিয়ডসূ মাকড়সার আকৃতি পরিণত ও অপরিণত উভয় বয়সেই ঠিক লালসো-পিপড়ের অনুরূপ ; কিন্তু পুরুষ-মাকড়সা অপরিণত বয়সে ঠিক স্ত্রী-মাকড়সার মত হইলেও শেষবার থেলিস পরিত্যাগের পর সম্পূর্ণ বিপরীত মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করে । প্রায় ছয় বার খোলস পরিত্যাগের পর ইহারা পরিণতবয়স্ক হইয় থাকে । পঞ্চমবার খোলস বদলাইবার পরও স্ত্রী ও পুরুষ মাকড়সার মধ্যে কিছুই পার্থক্য দেথা যায় মা ; সবাইকে স্ত্রী-মাকড়সা বলিয়াই মনে হয় । ষষ্ঠবার খোলস পবিত্যাগের সময় স্ত্রীরূপী পুরুষ-মাকড়সার হঠাৎ একটা অদ্ভুত পরিবর্তন দেখিতে পাওয়া যায় । এই সময় মাকড়সা কিছু সুত বুনিয় তাহার উপর চুপ করিয়া বসিয়া থাকে । তার পর স্ত্রীরূপী পুরুষ-মাকড়সার মস্তকের দিকের শক্ত খোলসটি যেন কজাওয়াল ঢাকনার মত উঠিয় আসে । তাহার মধ্য হইতে প্রায় ৫৭ মিনিটের মধ্যেই একটা ডবল মালসো-পিপড়ের মত অদ্ভুত বিকটাকার প্রাণী বাহির হইয়। আসে। প্রত্যক্ষ না করিলে ইত বিশ্বাস করিতেই প্রবৃত্তি হয় না যে এরূপ একটা ডবল সাইঞ্জের প্রাণী, মুগুরের মত এক জোড়া লম্ব ঠাট লইয়। এই ছোট খোলসটার মধ্য হইতে বাহির হইয়। আসিতে পারে । ব্যাপারটা এমনই অদ্ভুত ধে আরব্যোপম্যাসের সেই কলসীর দৈত্যের কথাই স্মরণ করাষ্টয়া দেয় । ছোট ছোট বিষ-দাত দুইটির মধ্য হইতে বাহির হইয় আসে প্রকাণ্ড মুগুরের মত দুইটি যন্ত্র । কুমীরের লম্ব। ঠোঁটের দুই দিকের দাতের মত এই মুগুরের প্রত্যেকটিতে লম্বালম্বি দুই সারি করিয়া দাত থাকে । মুগুরের মাথায় বাকানো লম্বী লম্ব দুইটি স্বfচক । এই বৃহং হুচিক ছুইটিকে মুগুরের থ'জে ভাঙ্গ করিয়া রাখে। কাহাকেও আক্রমণ করিবার সময় এই বিরাট ঠোট কুইটিকে পাশাপাশি ভাবে ই করিয়৷ অগ্রসর হয়, বড় করিয়া দেখিলে এই বিরাট মুখগহবরটি দেখিয়া অতি বড় সাহসী ব্যক্তিরও হৃদয় কম্পিত হয় । পূৰ্ব্বেষ্ট বলিয়াছি—পুরুষ-মাকড়সার সর্বশেষবার থেলিস পরিত্যাগ করিয়া এই লব কলেবর ধারণ করিতে ৫৭ মিনিটের বেণী সময় লাগে না । এইরূপ অভিনব আকৃতি পায়ণ করিবার পর পুরুষ-মাকড়সা প্রায় এক ঘণ্ট। দেড় ঘণ্টাকাল চুপ করিয়া বসিয়া থাকে। ইতিমধ্যে শরীর ক্রমশঃ শক্ত হইয় গায়ের রং গাঢ়