পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

でラt了 অম্ভরীনের পত্র ঃ ভারত-শিল্পের অনুশীলন ఆ94& গুঞ্জ করা যায় ৪ দশ পায়ে যতটা পাড়া বেড়ান যায়, তা দি পাবনাম, তবে হয়ত কতকটা আকাঙ্ক্ষা মিটত । হাঙ্গ বিধাতার কাছে কোনও দিন দেবত হওয়ার প্রার্থন। কfর নি। কিন্তু নাছোঁড়বান্দা বিধাতা সেক্ট বরই দিয়ে দিলেন । এখন জলে জল ঢেলে দেবতার পূজা চলছে— হিন্দুর পূজার বিলিত নমুনা ! কি আর করা যায়, বলুন। দেবতা হ'লেও আপনাকে আশীৰ্ব্বাদ করতে পারি, তেমন সঙ্গতি কঙ্কুস বিধাতা কিছু দেন নি। সাত বছরের গুরুপুত্রের প। বাড়িয়ে চরণামৃত দেবার মত খৃষ্টতাও এখন পৰ্য্যস্ত জন্মায় নি। তবে যে সাধনায় আপনি প্রবৃত্ত তাতে পূর্ণ সিদ্ধি লাভ করুন—আপনার সিদ্ধিতে আমার বাংলা দেশের মুখ উজ্জল হোক-এ প্রার্থনা একাস্ত মনপ্রাণেই করি । ইতি— নিবেদক শ্ৰীমনোরঞ্জন গুপ্ত সবিনয় নিবেদন, আপনার সুদীর্ঘ পত্র পেয়ে বড়ই আনন্দিত হয়েছি । আমি আপনাকে ব্যক্তিগত অভিনন্দন জানিয়েছি তার জগু আপনি প্রতিবাদ করেছেন । আমি 'ভক্তি’কে ও ‘ভক্ত’কে বড় আসন দিতে চাই । ভগবানের চেয়ে ভগবানের ভক্ত বড় । তা ছাড়া ভারতবর্ষে ভারত-শিল্পের ভক্ত সংখ্যায় এত কম (সমস্ত ভারতে ৬ জনের বেশী আছে কিনা আমি জানি না ), ষে, নূতন ভক্তের সন্ধান পেলে আমরা আনন্দে আত্মহারা হই । নবীন উপাসককে অভিনন্দন জানাতে হয়ত মাত্রাঞ্জান হারাই । আমাদের মন্দিরে উপাসকরা বড় আসতে চান না। আমরা উদগ্রীব হয়ে নূতন ভক্তের আশায় বসে আছি । নূতন ভক্ত ও নূতন উপাসক আমাদের বড় আদরের মানুষ, আমাদের সম্মানের বস্তু। ভারতের শ্রেষ্ঠ সাধনার মন্দিরে নূতন উপাসকের সন্মান ও সমাদরের মালা-চন্দনের বহর কত হবে—তার বিচারক নৃতন উপাসকরা নন, যারা তাকে স্বাগত" করবে তাহার বিচারের ভার তাদের উপরই দিতে হবে। গৃহস্থের চোখে, প্রত্যেক অতিথির যথাযোগ্য মূল্য আছে,—এই মূল্য-বিচারের অধিকার অতিথির নয়, গৃহস্থের । ভারতের শিল্প-সমুদ্ধে আমার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে আমি বিনয়ের ‘ভণিতা” করি নি। অতি-বিনয় দাম্ভিকতার নামাঞ্চর । সুতরাং অতি-বিনয়টা পাপ । যে কোনও বিষয়ে—জ্ঞানের রাজ্যে যে যতটা এগিয়ে যায়—জ্ঞানের বিস্তৃত পরিধি হৃদয়ঙ্গম করে সে ততটা বুঝতে পারে,— তার নিজের জ্ঞানের পরিধিটি কত স্বল্প, কত ক্ষুদ্র । ধে যত এগতে পাবুে তবু আত্মগরিম তত ছোট হয়ে আসে । এই জ্ঞানসমুদ্রের বিশালতার আঘাতে আমাদের অহঙ্কার সঙ্কুচিত হয়,—এই অহঙ্কারের সঙ্কোচ বিনয়ের ‘ভণিতা" নয়, নিজের শক্তি ও জ্ঞান সম্বন্ধে নিষ্ঠুর সত্যবোধ । ভগবানের আশীৰ্ব্বাদে, 'বিশ্বরূপ দেখতে পেলে, অৰ্জুনের মত আমরা আমাদের ক্ষুদ্রতা, স্বল্পতা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারি । ভারতের কলাশিল্পের নিদর্শন, ভারতের নানা স্থানে, আপনি প্রাচীন পুরাকীৰ্ত্তির অবশেষে অনেক চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। ধারা বেশী বয়সে দেখতে আরম্ভ করেন, চোখের ‘মর্চে ছাড়াতে অনেক দিন লাগে । অল্প বয়সে যখন মাচুষের রূপ-রস-বোধশক্তি প্রখর ও স্বতীক্ষ থাকে, তখন শিল্পবস্তুর অস্তরের সৌন্দর্ষ্য অতি সহজে প্রত্যক্ষ করা যায়। বেশী বয়সে, রূপবোধ-শক্তির প্রয়োগের অভাবে, আমাদের ঐ শক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়—দৃষ্টিশক্তির উপর ‘ছানি পড়ে। কেতাবী বিদ্যার চাপে আমাদের রস-বুদ্ধি শুষ্ক হ’তে থাকে। বেশী বয়সে এই শুষ্ক শক্তিকে সরস ও মঞ্জরিত করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তবে চেষ্টার অসাধ্য কাজ নেই । ক্রমাগত ছবি দেখতে দেখতে ছবি দেখবার তৃতীয় চক্ষু একদিন খুলে যায়। যুক্তিতর্কের বাধা আপনি খসে পড়ে । যুক্তিতর্কের চাবি দিয়ে, অর্থাৎ প্রবন্ধ ও পুথি পড়ে, আর্টের দুয়ার খোলা যায় না, আর্টের স্বরূপ নির্ণয় করা যায় না। যুক্তির পথে তাকে পাওয়া যায় না,–ভক্তির পথে, দৃষ্টির পথে সে দেখা দেয় । একটি প্যাকেটে রেঞ্জিীি ক'রে কয়েকখানি ভাল প্রতিলিপি পাঠাচ্ছি। চেষ্টা ক’রে দেখুন যদি এদের মধ্যে কিছু রস পান। আত্যন্তিক ভক্তির চক্ষে কোনও জিনিষই রুদ্ধ বা অবরুদ্ধ থাকে না । ভক্তের ভগবান । আপনি ভক্ত, শিল্পের ভগবান আপনার করতলগত । আমর। মন্দিরের চারি ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছি ভগবানের দর্শন এখনও মেলে নি । আপনি যেদিন ভারতের শিল্পের দেবতার সাক্ষাং পাবেন—অনুগ্রহ ক'রে একবার পিছন ফিরে পথের সন্ধানটা বলে দেবেন—আমরা আপনার পথ অনুসরণ করব । বিনীত শ্ৰীঅৰ্ধেক্ৰকুমার গঙ্গোপাধ্যায় ৯ জুলাই ১৯৩৭