পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র হ’ত, আর তৃতীয়তঃ আমার পুরুষ-অভিভাবক না থাকায় বাড়ীতে আমার অবসর ছিল স্বপ্রচুর এবং ইচ্ছামত পাঠশালার বরাদ্দ থেকেও সময় কেটে অবসর বৃদ্ধি করবার মধ্যেও কোন বাধা ছিল না । ফলে ওরা যে আমায় শুধু দয়া করে কাজে লাগাত এমন নয়, আমি না হ’লে ওদের কাজ অচল হয়ে যেত। সবচেয়ে বেশী এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল চিঠি নিয়ে ; এক কথায় আমি এই সংসদটির ডাক-বিভাগের পূর্ণ চার্জে ছিলাম বলা চলে। খামটিকিট নিয়ে আসা, চিঠি ফেলে আসা, এমন কি প্রয়োজন-বিশেষে পোষ্ট আপিসে গিয়ে পিয়নের কাছ থেকে আগেভাগে চিঠি চেয়ে নিয়ে আসাঙ আমার কাজের সামিল ছিল ; আর পাচ-সাত জন নবোঢ়ার থাম, টিকিট, চিঠির সংখ্যার আন্দাজ ক'রে নিতে তোমাদের কোন কষ্ট হবে না নিশ্চয়ই। এ ছাড়া বাজার থেকে এটা-ওট-সেট এনে দেওয়াও ছিল,—চিঠির কাগজ, কালির বড়ি, মাথার কাটা, ফিতে, চিরুণী • আড়ালে ডেকে বলত~~পতি পরমগুরু!—লেখা দেখে চিরুণীটা নিবি শৈল, লক্ষ্মী ভাই...আর এদের সামনে যখন ব’কব— ও চিরুণী কেন মরতে নিয়ে এলি’ ব’লে, তখন চুপ করে থাকবি—থাকবি তো ?--দুটো পয়সা নিয়ে ডালপুরী আলুর দম কিনে খেও ধাও...ভাগিাস শৈল ছিল আমাদের ”. “এ ছাড়া সময়ের কাচা ফল, এবং সেগুলিকে তরুণীদের কাচা রসনার উপযোগী করবার নানা রকম মসলা আহরণ করাও আমার একটা বড় কাজ ছিল ---রাধানাথ, ও রকম নিঃশ্বাস ফেললে ষে ? হিংসে হচ্ছে ?” রাধানাথ বলিল, “না, হিংসে কিসের ? এই আমিও তো আজ তিন ঘণ্টা ধ’রে গিল্পীর ফর্দ মিলিয়ে মিলিয়ে মাসকাবারি কিনে নিয়ে এলাম—মসলা, তেল, ঔষুধ, বালি---গল্প চালাও।” “সেদিন ঠাকুরমার গল্পে নয়নতার কঙ্কাবতীর জায়গা দখল ক'রে মিলন-বিরহ, হাসি-কান্না, মান-অভিমানে সমস্ত গল্পটির মধ্যে একটা অপরূপ অভিনবত্ব ফুটিয়ে তুললে । রূপকথা আর সত্যের সে অদ্ভুত মিশ্রণ আমার আজ পৰ্যন্ত বেশ মনে আছে। সেদিন অরূপকুমারকে বিদায় দিতে কঙ্কাবতীর চোখে যখন মুক্তা ঝরল তখন আমার সমস্ত অন্তরাত্মা রেলের ধারের সেই বকুলতলাটিতে এসে অসহ বেদন-ব্যাকুলত নিয়ে ভোরের জন্ত প্রতীক্ষা করতে লাগল। “কিন্তু আশ্চর্য্যের কথা—অষপ্ত, এখন আর সেটাকে মোটেই আশ্চৰ্য্য বলে ধরি না--তার পরদিন সকাল গেল, দুপুর গেল, বিকেল গেল, সন্ধ্যা গেল, নয়নতারাদের বাড়ীর দিকে কোনমতেই পা তুলতে পারলাম না। কেমন যেন মনে বর্ষায় $లోు হ'তে লাগল, কালকের রাত্রের রূপকথাটা আমার চাৰি দিকে ছড়ান রয়েছে—ওদের সামনে গেলেই সব জানাজানি হয়ে যাবে। এখন লক্ষণ মিলিয়ে বুঝতে পারছি সেটা আর কিছু নয় ; নূতন ভালবাসার প্রথম সম্বোচ। “সেজবৌদি বললে—ই্যা শৈলঠাকুরপে, আজ সমস্ত দিন তুমি ও-মুখে হও নি যে ? নয়ন তোমায় খুঁজছিল। “রাত্রি ছিল, আমি লজটি ঢাকলাম, কিন্তু কথাটা চাপতে পারলাম না, বললাম—যাও, খুজছিল না আরও কিছু । “সেজবোঁদি বললেন-ওমা ! খুজছিল না 7 জামি মিছে বললাম ? তিন-চার বার খোজ করেছিল, কাল সকালে ধেও একবার । “বললাম—আমার ব’য়ে গেছে । “ব’য়ে গেছে ত ঘেও না, অামায়ু বলতে বলেছিল, বললাম।—ব’লে বৌদি চলে গেলেন । “সেদিন ঠাকুরমার ছিল একাদশী, গল্প হ’ল না,—জর্থাৎ তার আগের রাতে ষে আগুনটুকু জলেছিল তাতে আর ইন্ধন জোগাল না। পরের দিন অনেকটা সহজভাবে নয়নতারাজের বাড়ী গিয়ে উপস্থিত হলাম। সে তখন মেঝের উপুড় হয়ে চিঠি লিখছে। জিজ্ঞাসা করলাম—আমায় ডেকেছিলে নাকি-••কাল f “নয়নতারা মুখ তুলে বঁ-গালট কুঞ্চিত ক'রে বললে— ধা যাঃ, দায় পড়ে গেছে ডাকতে, উনি না হ’লে যেন দিন যাবে না । দুটো চিঠির কাগজ এনে উপকার করবেন, তা--- “ওদের চড়টা-আসটাও মাঝে মাঝে হজম করতে হয়েছে, কিন্তু সেদিন এই কথা দুটোতেই এমন রূঢ় আঘাত দিলে যে মনের দারুণ অভিমানে বই-প্লেট নিয়ে সেদিন পাঠশালায় চলে গেলাম,—মনে বৈরাগ্য উদয় হ’ল আর কি-জানই ত পাঠশালাটা হচ্ছে ছেলেবেলার বানপ্রস্থভূমি । সেখানে আগের দিন-চারেক অনুপস্থিত থাকবার জন্তে এবং সেদিনও দেরি হবার জন্তে বেশ একচেটি উত্তম-মধ্যম হ’ল। “এর ফলে বালা-মোহের কচি শিখাটি প্রায় নিৰ্বাপিত হয়েই এসেছিল, কিন্তু পাঠশালা থেকে ফেরবার পথে মূখন রেল পেরিয়েছি, পুকুরের এপারে চালচিত্রের বেড়ার কাছে দাড়িয়ে নয়নতারা ডাকলে । আমি প্রথমটা গোজ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম, তার পর নমুনতারা আর একবার ডাকতেই আগেকার দু-দিনের কথা, সকালের কথা, এবং পাঠশালের কথা একসঙ্গে সব মনে ছড়োছড়ি ক’রে এসে কি ক’রে জানি না, আমার চোখ ছুটে জলে ভরিয়ে দিলে। নয়নতার বেরিয়ে এসে আমার হাতদুটো ধরে আশ্চর্ঘ্য হয়ে বললেওম, তুই কাজছিল শৈল ? কেন রে, জাম্ব, চল ।