3 سو tعS প্রৰণসী SNP33 রাধানাথ বুঝিল সেদিন নয়নতারাকে যেমন বর্ষায় পাইয়াছিল আজ ঠিক সেই ভাবে পাইয়াছে শৈলেনকে । শৈলেনের গল্প আর বাহিরের বর্ষ বোধ হয় তাহাদের ভিতরের গষ্ঠাংশ৪ কিছু কিছু তরল করিয়া জানিয়াছিল, তাহারা শৈলেনের মৌনতায় আর বাধা দিল না । একটু পরে যেন একটা অতল তরলতা হইতে ভাসিয়া উঠিয়া শৈলেন বলিল, “হ্যা, কি বলছিলাম ? ঠিক, ঈর্ধার কথা। ধখন আমার ভাল-লাগার খাদ মরে গিয়ে সেটা ভালবাসায় দাড়াল, সেই বরাবর থেকে একটি নির্দোষ, নিরীহ লোক আমার শক্ৰ হ’য়ে দাড়াল,—সাক্ষাৎ ভাবে আমার কাছে কোন অপরাধ না ক’রেও । এই লোকটি নয়নতারার স্বামী অক্ষয় । “অক্ষয়ের পরোক্ষ অপরাধ এই যে সে নয়নতারাকে বিবাহ করেছে। ঘটনাটি প্রায় এক বৎসরের পুরনো, কিন্তু এত দিন এতে ক্ষতিবৃদ্ধি ছিল না, কেন-না, অক্ষয় এত দিন একটি নিধিত্ন নেপথ্যে অবস্থান করছিল। বর্ষায় সেদিন নয়নতারার যে নূতনতর আলো ফুটে উঠল সেই আলোতে হঠাৎ অক্ষয় দুনিরীক্ষ্য ভাবে উজ্জল হয়ে উঠল। অনেক কথা, যা কখনও ভাবিও নি, তা শুধু ভাবনার নয়, একেবারে দুর্ভাবনার বিষয় হয়ে উঠল। নয়নতারা আমায় খুবই ভালবাসে—আমার জন্তে নারকেল-নাডু চুরি করে রাখে, ছেড়া কাপড়ের রুমাল তৈরি করে তাতে রেশমের ফুল তুলে দেয়, ঘুড়ির, ডালপুরির পয়সা জোগায়, গুরুমশাইয়ের বেতের দাগ পড়লে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে রুচিকর ভাষায় গুরুমশাইয়ের আদ্যশ্রাদ্ধের ব্যবস্থা করেছে—জীবনের অমূল্য সম্পদ এসব ; কিন্তু তার সামান্য একটি চিঠি পাবার কি পাঠাবার আগ্রহ আজ হঠাৎ এসবকে ষেন নিম্প্রভ, অকিঞ্চিৎকর ক'রে দিলে। সে আগ্রহটা আমার প্রতি তার সাক্ষাৎ আচরণের কাছে সামান্যই একটা ব্যাপার— কে পৃথিবীর কোন এক কোণে পড়ে আছে, তার সঙ্গে দুটো অক্ষরের সম্বন্ধ, কিন্তু এটাও আমার অসহ হয়ে উঠতে লাগল। ষোল জানার মধ্যে সাড়ে পনর আনা আমিই পাচ্ছি, কিন্তু ওদিকে যে ঐ ছুটে পয়সা যাচ্ছে ওটুকু বরদাস্ত করা—ধতই দিন যেতে লাগল—ততই আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠতে লাগল। “ঠিক এই সময় একটি ব্যাপার ঘটল স্থা অবস্থাটিকে ঘনীভূত করে তুললে । “একদিন স্বধার একটা খুব জরুরি চিঠি ডাকে দিতে যাচ্ছি। ষ্টেশনটা ছাড়িয়েছি, এমন সময় ষ্টেশনের গেট দিয়ে অক্ষয় বেরিয়ে এল । সেই ট্রেনে নেমেছে। চুল উস্কযুদ্ধ, মুখ শুকনো। আমায় দেখেই থমকে দাড়িয়ে বললে— এই যে শৈলেনভায়া !—মানে—ইয়ে—এরা সব কেমন আছে বলতে পার ? “তখন ‘এরা'-র মানে আমি বুঝি, না বুঝাই অস্বাভাবিক, বললাম—ভাল আছে । “অক্ষয়ের মুখটা যেন অনেকটা পরিষ্কার হ’ল । আমার হাতটা ধ’রে জিজ্ঞাসা করলে—পথি পেয়েছে ?—কবে পেলে –ষ্ঠা ? “আমি বিন্মিত হয়ে চুপ ক’রে রইলাম, তার পর বললাম—কই, তার তো অসুখই করে নি ।
- —অস্কখ করে নি! তবে ? —ব'লে অক্ষয়ও খানিকট আশ্চৰ্য্য হয়ে আমার মুখের দিকে চাইলে, আন্তে আস্তে চোথ ঘুরিয়ে কি ভাবলে, তার পর তার মুখটা হাসিতে উজ্জল হয়ে উঠল । বললে, দেখ কাগু ! আচ্ছা তো !-•• তুমি বুঝি চিঠি ফেলতে যাচ্ছ —কোন দময়ন্তীর ।
- নয়নতারাকে লেখা পত্রে অক্ষয় আমার সম্বন্ধে প্রায়ই উল্লেখ করত—“হংসদূত ব’লে, তা নিয়ে চিঠি পড়বার সময় চর্চা হ’ত । সুতরাং দময়ন্তী কথাটার অর্থ বুঝতে আমার অস্ববিধে হ’ল না । বললাম—স্বধাজিদির ।
- ঐ তো লেটার-বক্স,—যাও ফেলে দিয়ে এস। এক
সঙ্গে যাওয়া যাবেথ’ন । "ভালবাস যখন জমে আসছে, তার মধ্যে অক্ষয়ের এসে পড়াটা আমার মোটেই প্রীতিকর হয় নি। কিন্তু ফিরে আসতে আসতে যখন গুনলাম নয়নতারার এই মিথ্যাচরণের জন্যে তাকে কি নাকালটা ভোগ করেই চলে আসতে হয়েছে তখন আমার মনটা খুবই খুনী হয়ে উঠল। বেচারা আপিস থেকে বাড়ীও যেতে পারে নি ; যখন ষ্টেশনে, তখন ফাষ্ট বেল হয়ে গেছে, ছুটতে ছুটতে শানবাধান প্লাটফৰ্ম্মে পিছলে পড়ে গিয়ে হাটুটা গেছে কেটে, হাতটা গেছে ছ'ড়ে ; কাপড়ে রক্তের দাগ দেখিয়ে বললে—এই দেখ কাওটা ।