পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভার অলখ-বে।ণরণ రి:S কোন অঙ্কথাচরণ নাই, কোন মাতুব কি জীবের অমঙ্গল কামনা নাই, তাহা এক মুহূর্তে তাঁহারই মনের কাছে এমন অপরাধ হইয়া উঠিল কেন ? কেন ইহা হইতে মুক্তির উপায় সে খুজিয়া পাইতেছে না ? শৈশবের স্বপ্নে একদিন যেমন সে তলাইয়া গিয়াছিল, তাহার এ যৌবন-স্বপ্নেও সে তেমনই করিয়া ডুবিয়া যাইবে বলিয়া কত মায়ায়, কত সাধে, কত রহস্তে ইহাকে সে অপূৰ্ব্ব করিয়া গড়িয়া তুলিতেছিল। এই প্রথম ধাপের পর হয়ত কত দীর্ঘ দিনের দীর্ঘ পথ পড়িয়াছিল বিস্ময়ে আনন্দে ও সৌন্দধ্যে অপরূপ । কিন্তু মরীচিকার মত কোথায় মিলাইয়া যাইতেছে সে স্বল্প কাননেন ছায়া ? তপনের মনে স্বধা কি হৈমন্তী কাহারও সম্বন্ধে কোনও চিন্তা উঠিয়াছে কি না, জীবনে সঙ্গীর কোন প্রয়োজন কি আহবান সে অনুভব করিয়াছে কি না মৃধা কিছুই জানে না । হইতে পারে সে এ-বিষয়ে কিছু ভাবে না, যদিও স্বধার সেকথা বিশ্বাস হয় না। তবে যাহার ধ্রুব প্রমাণ সে কিছু পায় নষ্ট তাহ বিশ্বাস করিতে চেষ্টা করাই ভাল ৷ হইতে পারে মহেঞ্জের মত সেও ওই উপকথার রাজ-কস্তাটিকে দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া ভালবাসিয়াছে । স্বধা তাহা জানিবার জন্ত ব্যগ্রতা দেখাইবে না। আপনি যখন তাহা স্বধার নিকট প্রকাশ হুইবে তখন ত সে জানিতেই পরিবে । ভোরবেলা কখন বিছানা ছাড়িয়া হৈমন্তী চলিয়া গিয়াছিল, ভোরের সামান্য একটু ঘুমের মধ্যে স্বধী তাহা জানিতে পারে নাই। সকালে বিছানা হইতে উঠিয় এই সব চিন্তায় ঘরের বাহির হইতে তাহার দেরী হইয়া গিয়াছিল। তাড়াতাড়ি তৈয়ারী হইয়া লইয়া সে বাহির হইয়া পড়িল । হয়ত নীচে কাজকৰ্ম্ম স্বরু হইয়া গিয়াছে, কত লোকজন আসিয়া পড়িয়াছে। হয়ত তপন নিখিলরাও আসিয়া কাজে লাগিয়াছে । সে সকলের চেয়ে দেরী করিয়া নীচে নামিলে লোকের কাছে বলিবে কি ? সকলেই কাজে ব্যস্ত দেখা গেল। কিন্তু আজ কেহ কাহারও সঙ্গে কথা বলিতেছে না। হৈমন্তী তরকারি কোটায় মোটেই অভ্যন্ত নয় । হয় লেখপড়ার কাজ, নহয় ঘর সাজানো, এই দুইটার একটাতেই তাহার হাতযশ বেশী। কথা ছিল বাসরঘর সাজাইবার ভার সে লইবে, তাহার কথামতই ছেলেরা ঘর সাজাইবে । কিন্তু অকস্মাৎ সকালে উঠিয়া সে বলিল, “আমার অত হুড়োহুড়ির কাজ ভাল লাগছে না। আমি এক জায়গায় ব'সে তরকারি কুটি। স্নেহ এসেছে, ওর বেশ টেষ্ট আছে, ওই ঘর সাজাতে সাহায্য করতে পারবে ।” অগত্যা তপন স্নেহলতার সাহায্যেই ঘর সাজাইতে লাগিয়াছে ৷ যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সারিয়া সে চলিয়া যাইবে । আজ এ-বাড়ী বেশীক্ষণ সে থাকিবে না, সুরেশের বাড়ীতে বরযাত্রীর আদর-অভ্যর্থনার কাজেও তাহার প্রয়োজন আছে । সেখানে কাজ করিবার মানুষ বিশেষ কেহই নাই । এত দিন সকলে মিলিয়া মেয়ের বাড়ীর কাজে মাতিয়াছিল, একটা জিন অন্ততঃ কিছুক্ষণ বরের বাড়ীর কাজও করা দরকার। বিবাহ ব্যাপারে কঙ্কার স্থান যতই উপরে হউক, বরের অস্তত: সভা জাকাইয়া একবার আসার জায়োজন ত আছে । সভায় চেয়ার সাজানে ও কাপে ট পাতার কাজে নিখিলের খুব যে প্রয়োজন ছিল তাহা নয়, কিন্তু সে গিয়া জুটিয়াছে সেইখানে । ষত মুটের মাথা হইতে চেয়ার নামাইয়া ও কাপেটের রোল খুলিয়া সে ঘৰ্ম্মাক্ত হইয়া উঠিয়াছে। হৈমন্ত্রীদের গ্রামের আত্মীয় আর দুই-তিনটি ছেলে তাহার সহিত কাজে মাতিয়াছে ; মাকুযগুলি একেবারেই অচেনা বলিয়া নিধিলের সঙ্কুচিত ভাবট। অনেকখানিই এখানে কাটিয়া গিয়াচে । মহেন্দ্র গিয়া স্বরু করিয়াছে আহারের ঠাই করার কাজ। ছাত জুড়িয়া আসন পাত, ফুটা গেলাস বাছিয়া ফেল, ছোট ছেলেমেয়ের ছেড়ান্তাকড়ায় করিয়া সব পাতা মুছিয়াছে কিনা তদারক করা, এই সব মান কাজ। এখানে বেশীর ভাগই কুচোকাচার দল। স্বধা আর সকলের অপেক্ষা মহেন্দ্রকেই আজ বেশী নিরাপদ মনে করিয়া এইখানেই গিয়া জুটিল । কিছুক্ষণ দুই জনেই নীরবে কাজ করিল। তার পর মহেন্দ্ৰই নীরবতী ভজ করিয়া বলিল, “আপনাদের সভায় আমিই ছিলাম হংস মধ্যে বকে ধৰা, এবার ত আমি চললাম, আপনারা নিষ্কণ্টক হবেন।" স্বধা বলিল, “এরি মধ্যে আপনি আবার কোথায় চললেন ?”