পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՊԵ-o ইহার ভাবাৰ্থ –রামপালের পরলোকগত দুনীতিপরায়ণ জ্যেষ্ঠভ্রাতার বাসনের নিমিতই পৃথিবীর রাত্রি আপতিত হইয়াছিল। রামপাল নিজ প্রভাবে উহা উন্মুলিত করিয়াছিলেন। আলোচ্য মতের স্বপক্ষে উক্ত ফুলকের অন্তর্গত অার একটি শ্লোক উদ্ধৃত হয় – রামে তু চিত্ৰকূট বিকটোপলপটলকুটিমকঠোরম্। ভূমিস্তৃক্তমাপতিতে তপস্থিলি মহাশয়েহসহনে ॥ ১।৩২ রামপালপক্ষে ইহার টাকা এইরূপ –‘চিত্রকূটং অদ্ভুতমায়ং শিলাকুটিমবং কর্কশং ভূভূতং মহীপালং তপস্বিনি অনুকম্পাহৰ্ত্তদশাপম্নে'। টীকাসম্মত ব্যাখ্যা অনুসারে এখানে মহীপালকে বলা হইয়াছে, তিনি অদ্ভুত মায়া স্বজন করিতে পারিতেন ও শিলাময় কুটিমের ( মেঝের ) মত কর্কশ ছিলেন । কুলকের আর একটি শ্লোক এইরূপ :– বজনস্থানবুহে ভূতনয়াত্রাণযুক্তদায়াদে । বিদ্যুশ্বিলাসচঞ্চলমায়ামৃগতৃষ্ণয়াস্তরিতে ॥ ১।৩৬ এখানে মহীপালকে ‘ভূতনয়াত্রাণযুক্ত’ আখ্যা দেওয়া হইয়াছে। মুদ্রিত গ্রন্থানুসারে টীকাকার ইহার ব্যাখ্যা করিতেছেন 'ভূতং সত্যং নয়ে নীতং তয়োর (রর ) ক্ষণে যুক্ত: প্রসক্ত: । ইহার তাৎপধ্য এইরূপ গৃহীত হইয়াছে, মহীপাল সত্য ও নীতির ‘অরক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। এই ত গেল এক পক্ষের মত ও যুক্তি। এই মত অনুসারে মহীপাল দুনীতিপরায়ণ ছিলেন, ছলপ্রয়োগে র্তাহার অদ্ভুত শক্তি ছিল, তিনি শিলাকুটিমের মত কর্কশ ছিলেন, তিনি সত্য ও নীতির অরক্ষণে সদাই ব্যাপৃত থাকিতেন। প্রতিপক্ষের মত ও যুক্তি ইহা হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পূৰ্ব্বোদ্ধভ কুলকের আদ্যশ্লোকে ‘অনীতিকারম্ভ রতে' শব্দের ব্যাখ্যায় টীকাকার যাহা বলিতেছেন তাহার তাৎপর্ঘ্য এইরূপ। মহীপাল বাড়গুণযুক্ত মন্ত্রীর উপদেশ অবহেলা করিলেন। কিরূপে করিলেন ? সম্মিলিত অনন্তসামস্তচক্রের চতুরঙ্গবলসমন্বিত সেনাদলের আক্রমণে তাহার পৈঙ্কগণ অতিশয় ভীত হইল । কেহ কেহ হস্তস্থিত অস্ত্র পরিত্যাগ করিল । কাহারও কাহারও বদ্ধ কুস্তল উন্মুক্ত হইল, কেহ কেহ পলায়নে উদ্যত হইল। যাহারা রহিল, তাহারা স্বেচ্ছায় অতিশয় ক্ষতি বরণ করিল। তথাপি মহীপাল শৌৰ্যবাঁধাগুণে সম্যক্ পরিপুষ্ট না হইয়াই সামস্তচক্রের চতুরঙ্গবলের সহিত কষ্টতর সমর জারম্ভ করিলেন প্রৰণসী ১৯৩৪৪ এবং তাহাতে নিমজ্জিত হইলেন। প্রতিপক্ষ বলিতেছেন, মহীপালের নীতিবিরুদ্ধ কাৰ্য ইহা ব্যতীত আর কিছুই নহে। তাহারা আরও বলেন ১২২ শ্লোকে উদ্ধৃত ‘দ্বনৰ্মভাকৃ শষের দ্বারা যুদ্ধ বিষয়ে মহীপালের এই অপরিণামদৰ্শিতাই স্বচিত হইতেছে এবং ১৩২ শ্লোকে ‘চিকূেট ও ‘বিকটোপলপটলকুটিমকঠোর নামক যে দুইটি বিশেষণ প্রযুক্ত হইয়াছে, তথায় “ভূমিকৃতের অর্থ মহীপাল নহে, ভূগর্ভস্থ কারাগার মাত্র। পরিশেষে তাহাদের ইহাই মত যে টীকার যথার্থ পাঠ ( ‘তয়োররক্ষণের পরিবর্কে ‘তয়োরক্ষণে) অনুসারে ১৩৬ শ্লোকের ভূতানয়াত্রাণযুক্তদায়া’ শব্দের ব্যাখ্যা করিতে হইবে, মহীপাল সত্য ও নীতির রক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। স্বতরাং প্রমাণিত হইল, মহীপাল নীতিজ্ঞ মন্ত্রীর উপদেশ লঙ্ঘন করিয়া পলায়নপর যৎসামান্য সৈঙ্কের সহিত প্রবল সামস্তচক্রসেনার সম্মুখীন হইয়াছিলেন, ইহাই ছিল তাহার নীতিবিরুদ্ধ কার্য । প্রকৃতপক্ষে তিনি সদাই সত্য ও নীতির রক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন । যে দুইটি বিরুদ্ধ মতের উল্লেখ করা গেল, তাহার যথাযথ বিচারের উপর নির্ভর করিতেছে দিব্যের চরিত্র সম্বন্ধে আমাদের যথার্থ ধারণা। যদি মহীপাল সত্য সত্যই এক জন দুর্নীতিপরায়ণ, ছলপ্রয়োগে অভ্যস্ত এবং সত্য ও নীতির লঙ্ঘনকারী রাজা হইয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহার অধিকার হইতে যিনি বরেন্দ্রীর উদ্ধার সাধন করিয়াছিলেন, তিনি ত মহাপুরুষ। অপর পক্ষে যদি ইহাই সত্য হয় যে মহীপাল সত্য ও নীতির পথ অনুসরণ করিতেই অভ্যস্ত ছিলেন এবং মাত্র এক অসমধুদ্ধে অবতীর্ণ হুইয়া তাহার ব্যতিক্রম করিয়াছিলেন, সে ক্ষেত্রে দিব্যের কার্ষ্য প্রশংসনীয় বলিয়া বিবেচিত নাও হইতে পারে। প্রতিপক্ষের অনুকূলে যে একটি যুক্তি আছে প্রথমে তাহারই উল্লেখ করিয়া বিচারে প্রবৃত্ত হওয়া যাউক । টীকাকার উপরে উদ্ধৃত ১.২২ শ্লোকে “ব্যসনাং' শব্দের ব্যাখ্যা করিতেছেন যুদ্ধব্যসনাং । স্বতরাং মহীপালের যুদ্ধব্যসন’ (অর্থাৎ যুদ্ধে অত্যধিক আসক্তি ) তাহার অধঃপতনের মূল কারণ, ইহা নিঃসন্দেহ। এই যুদ্ধব্যসনই তাহাকে নীতিজ্ঞ মুস্ত্রীর পরামর্শের বিরুদ্ধে বিশাল সামস্তচক্রের সস্থিত অসমৰ্পংগ্রামে প্রণোদিত করিয়াছিল,