পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o8۔سوb প্রবাসী ১N€৪৪ শরীরে জর—বেশী শক্তি নেই, কল্যাণী আর কিছু বলল না। শুয়ে রইল চুপ করে। মা এসে বললেন-কেমন আছে বৌমা । নিজেই হাত দিয়ে দেখলেন গায়ে, ঈস্, এখনও ষে বেশ জর । তুই ডাক্তারকে আবার ডাক দেখি একবার । —কিছু হয় নি মা । মিছি মিছি ডাক্তার ডেকে এনো না, আমি এমনিই ভাল হয়ে উঠব । —তাত উঠবেই মা। তবু অস্বথটা বেড়ে না যায়—তুই যা স্বত্ব-শার দেখ, ভবানীপুরেও একবার স্বাস্— খবরটা দে । কল্যাণী ব্যস্ত হ’য়ে বললে—ন না, বাবাকে আবার কেন ? —না বৌমা, অমুখ-বিমুখে খবর না দিলে কি চলে । তুই যা সুকু, আর দেরি করিস নে । স্বকুমার ডাক্তারকে কল্‌ দিয়ে ভবানীপুর হয়ে ফিরে டிச : সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে স্থকুমারের কানে গেল, কল্যাণী দা গাইছে। বর্ষার কি একটা গান বোধ হয় হবে। স্বকুমার মনে মনে ভাবতে লাগল—এই অসুখ, এর মধ্যে আবার গান চলছে । নাঃ ! ঘরে ঢুকে দেখল—মিক্স বসে হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে, আর কল্যাণী বিছানার উপর উঠে বসে সুর করে তাকে গান শেখাচ্ছে, আজি বর্ষণ মুখরিত শ্রাবণ-রাতি। স্বকুমার এক ভয়ঙ্কর অঙ্গভঙ্গী করে উঠল—তোমার না অমুখ ? আর তুমি বসে গান গেয়ে যাচ্ছ। —বাঃ অমুখ হলে বুঝি গান গাইতে নেই। --বর্ধার গান ছাড়া বুঝি আর গান নেই—হকুমার বলতে লাগল, বৃষ্টির ভিতর কি পাও বলত ? কল্যাণী বর্ষাকে র্যতথানি ভালবাসে হুকুমার যেন ঠিক ততখানিই এড়িয়ে চলতে চায়—কিন্তু কল্যাণীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি ক’রে লাভ নেই। অগত্যা ধরল মিম্বকে—তুই কি হয়েছিস বল দেখি, পরে গান শিখলে হ’ত না। লেখা নেই, পড়া নেই, কিছু নেই, চব্বিশ ঘণ্টা কেবল টহল ! মেরে— মুখ কাচুমাচু করে মিহ বলল : বৌদিষ্ট ত ডেকে এনেছে। বললে আয়। গান শিখিয়ে দেব আয়। —আর অমনি ছুটে এলে, এমনি ডাকলে ত টিকিও দেখা যায় না— · —আমি গান শিখতে চাই নি, বৌদি আমায় জোর ক'রে শেখাচ্ছে । —জোর ক'রে শেখাচ্ছে! পাঞ্জি মেয়ে কোথাকার ! মাস মাস জলের মত টাকা যাচ্ছে—স্কুলের খরচ, আজ নীল শাড়ী, কাল ময়ুর-ক্টাকা হলুদে কাপড়—আর শিখে শিপে হচ্ছে এই---যা পড়গে, যা কল্যাণীর উপরে ঝালটা মিতুর উপর দিয়েই মিটল । কল্যাণী বলল—ওকি, তুমি ওকে বকছ কেন। আমিই ত ওকে ডেকে এনেছি। —পরে শেখালেও ত চলবে । —চলুক। তুমি ওকে বীকে না। এমনি ক'রে দুদিন কাটল । কল্যাণীর জর কমে নি। কিন্তু আগেকার চেয়ে ভাল । তৃতীয় দিনে সন্ধ্যা হ’তেই আবার চার দিক অন্ধকার ক'রে বৃষ্টি এল । আজকে যেন কল্যাণীকে আর কিছুতেই ধরে রাখা যাচ্ছে না। স্বকুমার শুনেছে, কল্যাণীর জন্ম হয়েছিল এমনি এক গাঢ় নিশীথ রাত্রিতে, সেদিন আকাশের বুকেও নেমে এসেছিল বিদ্যুতের প্রচণ্ড গতিবেগ-ঠিক আজকার মত ঘন কালে রাত্রির উত্তাল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যেই কল্যাণীর হয়েছিল জন্ম—নিজের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সে হারিয়েছিল তার প্রস্থতিকে । সমস্ত রাত্রি কল্যাণী একটুও ঘুমোল না। ওর মনের মধ্যে যেন নূতন দিনের সন্ধান জেগে উঠেছে। মাঝে মাঝে কেবল আপিন মনে গুনগুন করে গান গায় : গগনতল গিয়েছে মেঘে ভরি বাদল-জল পড়িছে করি করি এ ঘোর রাতে কিসের লাগি পরাণ-মন সহসা জাগি এমন কেন করিছে মরি মরি বাদল-জল পড়িছে করি করি—