পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b=RSe প্রবাসী ১৩৪৪ সঙ্গেই বেশ যেতে পারব, চেন রাস্ত ত? বাড়ীম্বর সব এক-ইটুি হয়ে আছে, আমি এতদিন ছিলাম না।” মৃণাল ভাবিল, সে ত মস্ত আয়েসী মানুষ, তাহার জন্য আবার ভাবনা । কিন্তু যাহার বাড়ী সেই যদি না রাখিতে চায় ত মৃণাল কি আর জোর করিয়া যাইবে ? বোর্ডিঙেই যাওয়া যাক। যদিও আজকার রান্ত্রিটা অস্তত: বাহিরে কাটাইতে পারিলে তাহার ভাল লাগিত। বলিল, “তা বেশ, আমাকে উনি দিয়েই আস্থন ।” – দুইখান গাড়ী ডাকা হইল। মৃণাল নিজের অল্পস্বল্প জিনিষপত্র লইয়া একখানাতে উঠিয়া বসিল । ষ্টেশনমাষ্টারের বোন নিজের ছেলেপিলে লটবহর লইয়া আরএকখানি অধিকার করিলেন । কুলীর চীৎকার, গাড়ীর ঘড়ঘড়ানি, ট্রাম-বাসের কোলাহলের ভিতর দিয়া গাড়ী চলিতে আরম্ভ করিল। কি দানবীয় মূৰ্ত্তি এই কলিকাতা শহরটার । মৃণালের যেন বিশ্বাস করিতে ইচ্ছা করে না যে আর কয়েকটা মাত্র ঘণ্টা আগে সেই হ্যামল গাছের ছায়ার কোলে সাজানো ছোট সুন্দ্রর "মখানিতে সে ছিল। যেন মায়ের কোলের মত স্কি, ভোরের আলোর মত মনোহর। তাহার কাছে কলিকাতা যেন মায়াবিনী রাক্ষসী। চোখ ভুলাইবার, মন জুলাইবার অসংখ্য উপকরণ তাহার কাছে, কিন্তু সে একবার এই মুখোস খুলিলে হয়, তখন সে সাক্ষাৎ মৃত্যুরূপিণী পিশাচী। এখানে থাকিতে থাকিতে মানুষ কেন পাথর হইয়া যায় না, তাই মৃণাল ভাবে । খানিকট হয় বই কি ? পাড়াগায়ের মানুষের মনে যতখানি স্নেহ-প্রীতি থাকে, এখানে ততটা সত্যই যেন থাকে না। অন্ততঃ মৃণালের তাহাই মনে হয়। মামার বাড়ী হইতে ষ্টেশনে আসিতে মৃণাল চোখকে এক মুহূৰ্ত্তের জন্ত বিশ্রাম দেয় নাই, সেই সহস্রবার-দেখা মাঠ, বন, নদী, খেলাঘরের মত সাজানো খড়ের ঘরগুলি, সব অতৃপ্ত চোথে দেখিতে দেখিতে আসিয়াছে। এখানে কিন্তু তাহার ইচ্ছা করিতে লাগিল, চোখ বুজিয়া রাস্তাগুল পার হইয়া যায়। কিন্তু চোখ সে চাহিয়াই রহিল। ভাল লাণ্ডক আর না-ই লাওক, এই কলকোলাহল, এই মানুষের জার বিবিধ রকমের গাড়ী-ঘোড়ার স্রোত, ইহার দিক্‌ হইতে মনও ফিরে না, চোখও ফিরে না । দুই দিন বাদেও যদি কোথা হইতে ঘুরিয়া এস তাহা হইলে মনে হয় কলিকাতা অনেকখানিই যেন অঙ্ক রকম হইয়া গিয়াছে। দোকানপাটের ত নিত্য পরিবর্তন হইতেছে । রাস্তাঘাট৪ থাকিয়া থাকিয় বদলাইয়া যায়। আর নূতন বাড়ীর ও সংখ্যাই করা যায় না, একটার পর একটা এমন দ্রুতবেগে গঙ্গাইয়া উঠিতে থাকে, যে, তাহাজের কল্যাণে দেখিতে দেখিতে সমস্ত জায়গাটারই চেহারা বদলাইয়া যায় । হাওড়া হইতে বোডিঙে পৌছাইতে মৃণালের প্রায় পুরা এক ঘণ্টাই কাটিয়া গেল। তাহার পর নিয়ম মত দরোয়ান আসিয়া গেট খুলিয়া দিল, কোন দিকে গাড়ী লইয়া যাইতে হুইবে তাহীও গাড়োয়ানকে দেখাইয়া দিল । মৃণালের সঙ্গীটি এইবার নামিয়া পড়িয়া বিদায় গ্রহণ করিয়া চলিয়া গেলেন । মেয়েরা দুই-চারজন কে আসিয়াছে দেখিবার জন্য ছুটিয়া আসিয়া দাড়াইল । মৃণালকে দেখিয়া দুইজন আবার চলিয়া গেল, মৃণাল অন্ত ক্লাসের মেয়ে, তাহার আসা-না-আসায় এই দুইজনের কিছু আসিয়া যায় না, আর দুইজন দাড়াইয়া রহিল, ইহারা তাহার বন্ধুর দলের । মৃণাল নামিয়া পড়িতেই একজন বলিল, “খুব সময়ে এসে পড়েছিস, এখনই খাবার ঘণ্ট। পড়বে। সারাটা দিন ট্রেনে ন-খেয়ে এসেছিল ত ? তোর নিয়ম আমার জানা আছে ।” মৃণাল একটু হাসিয়া তাহাজের সঙ্গে অগ্রসর হইয় চলিল, পিছনে বেয়ারা তাহার বাক্ষ-বিছানা বহন করিয়া আনিতে লাগিল । আবার সেই খাচায় বন্দী। আর সে মানুষ নয়, কলের পুতুলমাত্র। ঘন্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাহাকে উঠতে বসিতে হইবে, শুইতে হইবে, ঘুমাইতে হইবে। ইচ্ছামত, যখন যাহা খুশী যে মানুষ করিতে পারে, তাহা একেবারে ভুলিয়া যাইতে হইবে । কিন্তু এই জীবনেরও মূল্য আছে, এমন ভাবে কঠিন শাসনের অধীন হইয়া থাকারও প্রয়োজন আছে তাহা স্বীকার না-করিয়া মৃণাল থাকিতে পারে না। কিন্তু মন বুঝিতে চায় না, মৃণালের মন অন্ত মেয়েদের চেয়ে যেন একটু বেশী