পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سbچسb প্রবাসা Nరి83 আশা বলিল, “আসল পয়েণ্টট বাদ দিয়ে যাচ্ছ কেন ?” প্রমীলা বলিল, “বাদ দেওয়াদেয়ি আর কি ? ঘরসংসার যখন করব, তখন ঘরের কৰ্ত্ত একটা থাকবে, সে ত জানা কথা।” মৃণাল বলিল, “আমার ভাই একটি ছোট স্বন্দর খড়ের চাল-দেওয়া ঘর, আর চারিদিকে খোলা মাঠ, এই ভাবতেই চমৎকার লাগে। কিন্তু কৰ্ত্তাটর্তার ভাবনা এখনও মনে আনতে পারি নে বাপু ।” ®প্রমীলা বলিল, “তা খড়ের ঘরে কি তুই একলা হাত পী ছড়িয়ে বসে থাকবি নাকি ? মৃত অনাহাই কথা, চিরকেলে খুকি এক তুই ।” এই সময় ঢং ঢং করিয়ু ঘণ্টা পড়িয়া যাওয়ায় বেড়ানো এবং গল্প দুই-ই শেষ হইয়া গেল । সত্যই মৃণাল ভাবিয়া ঠিক করিতে পারিত না যে ভবিষ্যৎ জীবনটা কি রকম হইলে তাহার পক্ষে সব চেয়ে সুখের হয়। শিক্ষা যতদূর পাওয়া সম্ভব সব সে পাইতে চায়,পঞ্জরও গলগ্ৰহ হইয় পরমুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতেও সে চায় না, কিন্তু চিরকাল চাকরী করিয়া কাটাইতেছে ভাবিতেও তাহার ভাল লাগে না। শহরে থাকিতে সে চায় না, পল্পীভবনেই ফিরিয়া যাইতে চায়। কিন্তু সেখানে কেমন ভাবে থাকিবে, কি কাজে দিন কাটিবে, তাহা এখনও তাহার মনে স্পষ্ট হইয় উঠে নাই। কিন্তু অদৃষ্টে তাহার কি আছে তাহ কেই বা বলিতে পারে ? মামা-মামী ত উচ্চশিক্ষার একাঙ্ক বিরোধী। বাবা যদিও তাহাকে পড়িতে পাঠাইয়াছেন, কিন্তু সেটা উচ্চশিক্ষার প্রতি অনুরাগবশতঃ নয়, অন্ত কোনও উদ্দেশুে । মেয়ের যদি বিবাহ তিনি না দিতে পারেন, তাহা হইলে সে একেবারে অসহায় ন হইয়া পড়ে, সেটা ত দেখিতে হইবে ? সেই জন্যই তাহাকে পড়িতে দেওয়া । বিবাহ দিতে পারিলে ত তিনি দিবারই যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন, এবং মামা-মামীও তাহাকে সাহাধ্যই করিবেন। ট্রেন হইতে নামিয়া মৃণালের মাথাটা কেমন যেন ধরিয়া উঠিয়াছিল। একবার স্নান করিতে পাইলে হইত। পাড়াগায়ে সে দিব্য শীত উপভোগ করিয়া আসিয়াছে, কলিকাতায় কিন্তু এখনও বিশেষ শীত পড়ে নাই। কিন্তু বোডিঙে ইচ্ছা করিতেছে বলিয়াই ত আর কিছু করিবার জো নাই ? কাজেই হাতমুখ ধুইয়া, কাপড় বদলাইয়া সে থাইতে চলিল। আয়োজন বাড়ীর চেয়ে এখানে বেশী, তবু খাইয়া মন উঠে না। প্রতি টেবিলে একজন করিয়া শিক্ষয়িত্রী মেয়েদের সঙ্গে খাইতে বসেন, কাজেই হাজার অসন্তোষ মনের মধ্যে জমা হইয়া থাকিলেও মুখ ফুটিয়া কিছু বলিবার উপায় নাই । ভাল লাগুক বা মন্দ লাগুক, সবকিছু মুখ বুজিয়া খাইয়া যাইতে হইবে। খাওয়া চুকিয়া গেল, তাহার পর একটা একটা করিয়া ঘণ্টা পড়িবে, আর পুতুলনীচের পুতুলের মত মেয়েদের তালে তালে হাত-পা নাড়িতে হইবে। একেবারে শুইবার ঘণ্টা পড়িলে তখন এই নাট্যের শেষ। কাল হইতে সমানে ক্লাস আরম্ভ হইবে, তখন আর এসব ভাবিবার অত সময় থাকিবে না । মামার বাড়ী হইতে ফিরিয়া আসিয়া প্রথম কয়ট দিন বড় বেশী খারাপ লাগে, তাহার পর এখানকার কৰ্ম্মস্রোতে সে ভাসিয়া চলে, মন লইয়া নাড়াচাড় । করিবার অত সময়ও সে পায় না। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গও তাহাকে খানিকট ভূলাইয়া রাখে । সামনে পরীক্ষা, তাহার ভাবনাও বড় কম নয় । এইবারে বাৎসরিক পরীক্ষায় পাস করিলে সে ম্যাটিক ক্লাসে উঠবে, তাহার পর ত মস্ত বড় পরীক্ষ। তাহা কি মৃণাল পাস করিতে পরিবে, কে জানে ? বয়স ত যথেষ্ট হইয়াছে, ফেল করিলে ছোট ছোট সব মেয়ের সঙ্গে পড়িতে হুইবে, সে এক মহা লজ্জার কথা । ম্যাটিকের পর বাবা তাহাকে পড়াইবেন কিনা কে জানে ? মামা-মামী ত এইতেই বিরক্ত । ষোল বছরের মেয়ে হইতে চলিল, এখনও বিবাহের নামগন্ধ নাই । দ্বিতীয়পক্ষে বিবাহ ত অনেকেই করে, কিন্তু এমন পর হইয়া কেহ যায় না। নিতান্ত কয়েকটা টাকা না দিলে নয়, তাই ফেলিয়া দিয়াই মৃণালের বাবা খালাস। মেয়ের কাছে বৎসরে একখানা চিঠিও লেখেন কি না সন্দেহ, বিজয়ার সময় হয়ত লেখেন । মল্পিক-মহাশয়ের কাছে কখনও কখনও একটা করিয়া পোষ্টকার্ড আসে, এই পৰ্য্যস্ত। মৃণাল জানে, তাহার অনেকগুলি ভাইবোন হইয়াছে,