পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন সেদিন অবগু চন্দ্ৰলেখার ভারাক্রান্ত অবসরের ভয় ছিল না, কারণ গল্পের শ্রোতা শঙ্খমালা তখুনও দুয়ারে বসিয়া । চন্দ্ৰলেখাকে চুপচাপ বসিয়া থাকিতে দেখিয়া শস্থমালা বলিল—কই গো চন্দ্রদি—বলে গল্প ! চন্দ্ৰলেখা ভুলিয়া-ধাওয়া গল্পটা কিছুক্ষণ মনে করিবার চেষ্টা করিয়া অবশেষে হতাশ হইয়া বলিল—তুলে গেছি রে— মনে ত পড়ছে না। আজ থাকৃ—বরং চল বংশীদা’কে দেখে আসি—জলের জন্তে সকালে আজ মেতে পারি নি। জর হয়েছে—কেউ নেই দেখবার । চল তাকে দু-জনে দেখে আসি । বংশী ইহাদের প্রতিবেশী—অর্থাৎ এই সব প্রতিবেশীর সাড়া পাইতে হইলে গলা ফাটিয়া যাইবার উপক্রম। এত বড় কলমীলতা গ্রাম কিন্তু বড় জোর বিশ ঘর প্রজার বাস—সকলেরই বৃত্তি চাষ-আবাদ । ফাকে ফাকে ঘর— প্রতিবেশীর খোজ পাইতে হইলে রীতিমত কষ্ট স্বীকার করিতে হয় । নিমাইচরণের এক পুরুষ দত্তদের এই চন্দ্রাকর দীঘি চৌকি দিয়া দীঘির পাড়েই কাটাইয়া গিয়াছে—তাহাকেও কাটাহঁতে হইবে । চন্দ্রাকরে বছর বছর নতুন মাছ ছাড়া হয় এবং কয়েক বছর বাদ দিয়া দিয়া মাছ ধরা হয়—ইহাতে বেশ দু-পয়সা দ্বত্তর উপার্জন করে । কিন্তু পুকুরটা আবার এমনি ফাকা মাঠের মাঝখানে যে চৌকির ব্যবস্থা না করিলে পুকুরে একটা চাদ পুটিও থাকিবে না। কেহ যদি মাছের বদলে পুকুর চুরি করিয়া লইয়া যাইতে সমর্থ হয় তাহ। হইলে কাকপক্ষীতেও খবরটা পাইবে না। তাই পুকুর হইতে যাহাতে ষোল আনাই লাভ হয় তাহার ব্যবস্থা করিতে গিয়া নিমাইচরণের বাবাকে কিছু জমি-জায়গা দিয়া দীঘির পাড়েই ঘর তুলিয়া দেওয়া হইয়াছিল—এবং সে ব্যবস্থা এখনও আছে। চন্দ্ৰলেখা শস্থমালাকে বলিল-চল না যাই দু-জনে— কেমন ? বংশদ বেচারী” বংশীর জর হইয়াছে—দেখিবার তাহার কেহই নাই। নিঃসঙ্গ অবস্থায় একদিন সে এই গ্রামে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল এবং আর দশ জনের মত দত্তদের প্রজা হইয়া চাষ-আবার স্বরু করিয়াছিল। ইহা ছাড়া সে ছোটখাট বিদেশী রাজকুমার

  • ?cm

একটি দোকানও নিজের চালাঘরের এক পাশে স্বরু করিয়াছিল—বর্ষার প্রারম্ভে চাষের সময়টায় দোকান তাহার বন্ধ থাকিত। এ বৎসর চাষ ৪ তাহার বন্ধ ছিল— ম্যালেরিয়ায় তাহাকে কাবু করিয়া ফেলিয়াছে একেবারে । তাহার নিঃসঙ্গ মলিন রোগশয্যায় সে জরের ঘোরে পড়িয়া থাকিত—জর ছাড়িলে সামান্ত খুঁটিনাটি কাজকৰ্শ্বগুলি কোনো রকমে সাfরয় রাখিত পুনরায় আগামী . জ্বরের জন্য। কোনো কোনো দিন চন্দ্ৰলেখা আসিয়া তাহার সমস্ত অভাব-অভিযোগগুলি একে একে সারির দিয়া ধাইত । সেদিন বংশী যখন জরের ঘোরে পড়িয়ছিল তখন চন্দ্রলেখ শঙ্খমালাকে সঙ্গে লইয়া উপস্থিত হইল । বংশীর কোনো সাড়াশন্ধ ন পাইছ চন্দ্ৰলেখা অপ্রতিভ হইয়া বলিল—. বংশীদ। কি ঘুমিয়েছ ? বংশী রক্তবর্ণ দুইটা চক্ষু মেলিয়া বলিল—কে চন্দ্র ...উ. বডড শীত করছে রে --•একখানা কথা দিতে পারিস। একটাতে হচ্ছে না । ক্রমাগত কয়েক দিন জলের জন্য মাটির মেঝে স্যাৎ স্যাৎ করিতেছে । সেই ভিজা মেঝের ওপরেই একখানা পাটি পাতিয়া একথান। শতছিন্ন কম্বল গায়ে মুড়ি দিয়া বংশী জরের ঘোরে কঁাপিতেছে । এই লোকটা এই অবস্থায় ষে কত অসহায় তাহা ভাবিয়া চন্দ্ৰলেখার অন্তর ব্যথিত হইয়া উঠিল । ঘরের চার দিকে একবার চোখ বুলাইয়ু লইয়া বলিল-কই, কোনো কঁাথা ত দেখছি নে । বংশী অপ্রতিভ হইয়া বলিল—তাই ত - কাথা থাকবেই বা কোথা থেকে, কবেই বা আর সেলাই করলাম—জার ওসব কি আমি জানি ছাই। থাক্ তবে থাকৃ। বংশী কিছুক্ষণ হ হ করিয়া কঁাপিতে লাগিল । পুনরায় বলিল— আমাকে একটা কথা তোর সময়মত সেলাই ক’রে দিল, ত চন্দ্ৰ—য খরচ পড়বে আমি দেব । : এই বংশী লোকটা বড় অসহায়—এখন ত বটেই, তা ছাড়া যখন ভাল ছিল তখনও। অসহায় পুরুষের সাংসারিক নিবুদ্ধিতা দেখিয়া চন্দ্ৰলেখার নারীত্বের মায়া গোড়া হইতেই বংশীর উপরে সঞ্চারিত হইয়াছিল। এই বংশী যখন প্রথম আসিয়াছিল, এই জনবিরল কলমীলতা গ্রামে যখন প্রথম সংসার পাতিবার উদ্যোগ করিয়াছিল, তখন