পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե-ՓԵս প্রবাসী 。N○88 বৈরাগী অস্তরে কেমন এক রকম মধুর ঝঙ্কার তুলিয়া ভবিষ্যতের কত মনোরম ছবির পর ছবি স্মৃষ্টি করিয়া যায়। বংশীর যন্ত্রণাময় অস্বস্তিকর রোগশয্যা মুথ-স্বপ্নের শয্যায়ু পরিণত হয় । সেদিন নিমাই মাঠ হইতে ফিরিয়া আসিয়া খবর দিল, দত্তবাবুদের বিরাট জমিদারীর একমাত্র মালিক সহদেব দত্ত চন্দ্রাকরে মাছ ধরিতে আসিবে । আসিবে আসিবে বলিয়াও সহদেব দত্ত যদিও কোনো দিন আসে নাই—তাহা হইলেও বুলমীলতার প্রজার প্রত্যেকবারই তাহার আগমন আশা করিয়াছে। বহু রকম তাহাদের খুঁটিনাটি অনুযোগ— ৰেগুলা সেই অনাগত প্রভূর প্রতিনিধিবর্গের দ্বারা পূর্ণ হয় নাই সেগুলা সকলেই এই সংবাদে এক-একবার মনে মনে ঝালাইয়া লইয়া এবারেও প্রস্তুত হইয়া রহিল । এবার আসিয়া পোছলে হয়। নিমাইয়ের উৎসাহ দেখিয়া চন্দ্ৰলেখা বলিল-আসবে না আরও কিছু। মিথ্যে লাফালাফি । নিমাই উত্তেজিত হইয়া বলিল—কি যে বলিস্ ! ঠিক আসবে--তার কথা কখনও মিথ্যা হয় না। অমন লোক আর ত্রিভুবনে হয় না। চন্দ্রলেখ হাসিয়া বলিল-দাদা অত গুণগান করছ— বাবু শুনতে পেলে তোমাকে শেষকালে এখন বারো চকের নায়েব করে দেবে। তার পর আত্মগত হইয়া বলিল, তবু যদি তাকে চোখে দেখতে••• । এ অপমানে নিমাই রাগিয়া উঠিল । বলিয়া চলিল— দেখি নি কি রকম ! আলবৎ দেখেছি । লম্বা রকম স্বন্দর মত চেহারা–গোফ জোড়াটা দেখলেই ত মাথা ঘুরে যায়। তার পরেই নিমাই গোলমাল করিয়া ফেলিল । কতকগুলা মিথ্যা কথা বলিতে গিয়া, মনের মত অপরূপ করিতে গিয়া আকৃতি বর্ণনা একবার এক রকম বলিয়া পুনরায় তাহার উন্টাগুলা বলিয়া চন্দ্ৰলেখার উপরে ক্রুদ্ধ হইয়া লাফাইতে লাগিল। কিন্তু চন্দ্ৰলেখা সে-সমস্ত অগ্রাহ করিয়া নিজের কাজে চলিয়া গেলে পরাজিত নিমাই মুখ কালো করিয়া স্নান করিতে চলিয়া গেল । পরে কিন্তু চন্দ্রলেখ তাহার দুৰ্ব্বল মুহূর্তে নিমাইয়ের নিকট পরাজিত হইল। নিমাইয়ের কেমন রোক চাপিয়া গিয়াছিল—সে যে সহদেব দত্তকে দেখিয়াছে এ-কথা চন্দ্ৰলেখাকে স্বীকার করাইবেই। চন্দ্ৰলেখা স্বীকার করিল—মুগ্ধ হইয়া শুনিল সহদেব দত্ত সম্বন্ধে কলমীলতা গ্রামে প্রচলিত সমস্ত অপূৰ্ব্ব গল্প। তাহার রূপমুগ্ধ চক্ষে ফুটিয়া উঠিল অজ্ঞাত সহদেব দত্তের অপূৰ্ব্ব তরুণ মূৰ্ত্তি। অঙ্গের বর্ণ যাহার দুধ-আলতার রংকেও পরাজিত করিয়াছে, গভীর উদাস বৈরাগী দৃষ্টি যাহার সদানন্দে ঝলমল করিতেছে, কণ্ঠের স্বর যাহার গহন রাতের দূরাগত বঁাশীর স্বরের মত ঘর-ছাড়ানো মুগ্ধকর, স্বঠাম দেহে শক্তি যাহার অসীম তাহাকে চন্দ্ৰলেখার ভাল না লাগিয়ু পারে কি করিয়া ! চন্দ্ৰলেখা উৎসুক কণ্ঠে বলিল—সত্যি আসবেন দাদা ? নিমাই বিজয়গৰ্ব্বে বুক চিভাইয়া বলিল—আসবে বইকি রে । চন্দ্রাকরে কতদিন আজ মাছ ধরা হয় নি— মাছের গায়ে নীল পড়ে গেল । ওই ঈশানকোণের দিকটায়ু হজুরের জন্যে একটা মাচা বাধতে হবে—মাছ ওইখানটাতেই খাবে বোধ হয়। কিন্তু আসল কথা, গরীবের কুঁড়েঘরে ছজুরকে ওঠাব কি ক'রে ! চন্দ্রলেখা বিহবল হইয়া বলিল—কেন দাদা—তিনি ত কাছারিতে থাকবেন। —তাই কি হয় রে ! নিমাই গম্ভীর চালে হাসিয়া ৰলিল, জলবর্ষার দিন—মাছ ধরতে সন্ধ্যে ত হবেই। রাতে তিনি কি আর কাছারিতে ফিরবেন। কি তিনি আয়োজন হরু হইয়া গেল । চন্দ্রাকরের ঈশানকোণে মাচা বাধা হইয়া গিয়াছে । পুকুর-পাড়ের আগাছ-জঙ্গল অল্পে অল্পে পরিষ্কার হইয়া গেল ; সহদেব দত্ত এবার মাছ ধরিতে আসিবেই। সেদিন কে একজন যেন ছোট্ট একখানি ছিপ লইয়া চন্দ্রাকরের এক কোণে বসিয়া মাছ ধরিতেছিল–চন্দ্ৰলেখা দেখিতে পাইয়া ই ই করিয়া ছুটিয়া গেল, মাছ এমনি পাচ ভূতের হাতে গেলে বাবু কি পুকুর দেখতে আসবেন নাকি ! t