পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سواجه سb --- প্রবাসী SN?88 সমস্ত জোগাড় করিয়া রাখিতে হইবে । বিশেষ করিয়া কিছু মহুয়া ফুল যেখান হইতেই হোক জোগাড় করিতে হুইবে—ন হইলে পিঠা সে কি দিয়া গড়িবে ! এমন সময় বংশীর আহবান আসে,–চন্দ্ৰলেখা !... চন্দ্ৰলেখার স্বপ্নবিলাস ছুটিয়া গেল । সে উঠিয়া বংশীর সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল । বলিল, আমাকে ডাকছিলে বংশীদা ? বংশী তাহার একাগ্র দৃষ্টি চন্দ্ৰলেখার মুখের উপরে স্থাপিত করিয়া বলিল, একটু ব’স ন!—সারাটা দিন কথা না বলতে পেয়ে মড়ার মত পড়ে আছি । —এখন কেমন আছ—বলিয়া চন্দ্রলেখ বসিল । তার পর বলিল, আমার এখন মরবার ফুরস্কং নাই বংশীদা—কথা বলব কি ! এক্ষুণি আবার হাটে যেতে হবে । দাদার ত কোনো দিকে কিছু খেয়াল নেই। তুমি ঘর-টরট। একটু দেখো—আমাকে একবার গাঙতুলসীর হাটে যেতে হবে । বংশী বলিল, জল-বর্ষার দিন—একলা কি ক’রে যাবি চন্দ্র ? রাত হয়ে যাবে মে ! চন্দ্ৰলেখা চিন্তিত হইয়া বলিল—সত্যিই । তা হ’লে যাব না—কি বল ? কাল বরং দাদাকে পাঁচখালির হাটে পাঠিয়ে দেব । বংশী আবার যেন অতীত দিনগুলার স্বর খুজিয়া পায় । ক্ষুধা না থাকিলেও সে তবু বলে, চন্দ্র, বড় খিদে পাচ্ছে রে । চন্দ্ৰলেখা হাসিয়া বলিল—তবু ভাল যে আজ চেয়ে খেলে। কিন্তু চন্দ্রলেখ ভুলিয়া গেল যে, আজ কয়দিন বংশী চাহিয়াই খাইতেছে। সেদিন চন্দ্ৰলেখাকে হঠাৎ দেখিবার ইচ্ছা হওয়ায় বিশেষ কিছু না মনে পড়ায় থানিকট তুন চাহিয়াই মুখ বিকৃত করিয়া কোনো রকমে থাইয়া ফেলিয়াছিল । সারা বিকালট বংশী স্বপ্নের মধ্য দিয়া কাটাইয়ু দিল । কিন্তু বংশীর ফিরিয়া-পাওয়া স্বর কাটিয়া গেল সন্ধ্যায় । বংশী তাহার নির্দিষ্ট ঘরে শুইয়া শুইয়া শুনিল—ওপাশের রান্নাঘরে চন্দ্রলেথ নিমাইকে বলিতেছে, ঘর ত আমাদের দুটি-বাৰু এলে থাকবেন কোথায় ! উত্তরে নিমাই মাথা চুলকাইতে চন্দ্রলেখ বলিল— বংশীদা’কে বরং তার নিজের ঘরে এবার যেতে বল—ত৷ হ’লে অার ভাবতে হবে না। - নিমাই তেমনি মাথা চুলকাইয়া বলিয়াছিল, বংশীকে বলি কি ক’রে ! চন্দ্রলেখা বলিয়াছিল, তা না হ’লে আর উপায় কি ! তা ছাড়া যে রোগ, থাকলে বাবুকেও ত ধরতে পারে। মা না দাদা—তুমি স্পষ্ট বলে দিও। বংশী সমস্ত শুনিয়া তখনই ঠিক করিয়াছিল, সেই রাত্রেই সে চলিয়া যায়। কিন্তু হইয়া উঠে নাই—নানা কথা ভাবিতে ভাবিতে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। সকালে উঠিয়া নিজেই সে নিমাইকে বলিল, আজকে আমি ঘরে ঘাই নিমাই— অস্থখটী ত অনেকট। সেরেই এসেছে—আর মিথ্যে থেকে লাভ কি ! চালাই । নিমাই অপ্রতিভ হইয়া কি যেন বলিতে যাইতেছিল— বংশী বাধা দিয়া বলিল, ন ন নিমাহ--ত ছাড়া বাবু আসবেন । আমাকেও ত কিছু একটা খাওয়ার জোগাড় করতে হবে—শুয়ে থাকলে ত আর চলবে না ভাই ! বংশী চলিয়া গেল । চন্দ্ৰলেখা একটু অপ্রতিভ হইল মাত্র—সাময়িক ভাবে । চাষ ত এবার গেলই–এবার দোকানটা সকাল গেল—বিকাল আসিল কিন্তু সহদেব দত্ত আসিল না । চন্দ্ৰলেখা না-আসার কারণ জিজ্ঞাসা করিতে যাইতে নিমাই বলিল, কাল বোধ হয় ঠিক আসবেন রে চন্দ্ৰ—তুষ্ট সব জোগাড়-যন্তর ক’রে রাখ । চন্দ্ৰলেখার এক দিনের আয়োজন ব্যর্থ হইল । তার পরদিনটাও প্রায় কাটিয়া যাইতে বসিল—অনাগত লোকটি তবু আসিল না। সারা কলমীলতা গ্রামের প্রজার কাজকৰ্ম্ম ছাড়িয়া বৃথাই হৈ-চৈ করিয়া বেড়াইতে লাগিল । তৃতীয় দিন ভোর হইবার সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্ৰলেখা ঘুম ভাঙিয়া উঠিয়া বসিল এবং তৎক্ষণাৎ তাহার মনে হইল—অনাগত লোকটি যেন আসিয়া গিয়াছে এবং তাহার তীব্র দৃষ্টি যেন আসিয়া পড়িয়াছে এই সদ্যজাগ্রত বিস্রস্তবসনা চন্দ্ৰলেখার উপরে । সঙ্গে সঙ্গে রক্তাভ সরমাভরণ চন্দ্ৰলেখার সারা দেহে তাহার উষ্ণ পরশ দিয়া গেল ।