পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

نویه আণশ্বিন হৈমন্তী তাহার সেই দক্ষিণের বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসিয়া পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের অলস গতির দিকে চাহিয়াছিল। এই মেঘ যুগে যুগে কত বিরহীর কাতর দৃষ্টি ও নীরব প্রার্থনা বহন করিয়া লইয়া ফিরিয়াছে, কিন্তু যাহার নিকট পৌছাইয়৷ দিবার কথা তাহাকে কি কোনও দিন কোন ইসারা করিতে পারিয়াছে ? হৈমন্তীর মন উড়ন্ত মেঘের পিছনে পিছনে ভাসিয়া চলিয়াছিল, কিন্তু কে তাহাদের পথ বলিয়া দিবে, কে তাহাদের ভাষায়ু মুখর করিয়া তুলিবে ? এই বাস্তব জগতের কঠিন লেখনীর কালে আঁচড়েই তাহার হৃদয়ের বেদনাকে রূপ দিতে হইল । সে কালির আঁচড়ে মনের ব্যাকুলতার এক কণাও কি ফুটিল ? হৈমন্তী কি যে লিখিল, তাহ তাহার কিছুই মনে রহিল না। মনে হইল আপনাকে সে প্রকাশ করিয়া ফেলিয়াছে, এতখানি না বলিলেও চলিত । কিন্তু কতটুকু বলিলে, কি প্রশ্ন করিলে তপন হৈমন্তীর প্রাথিত উত্তরটি দিবে, কতটুকু না বলিলেই ভাল দেখাইবে তাহ হৈমন্তী ঠিক করিতে পারিতেছিল না। সে দ্বিতীয়বার চিঠিখান পড়িলও না, উত্তেজনার বশে যাহা লিখিল তাহাই খামে বন্ধ করিয়! ডাকে দিয়া যেন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাচিল । আর দুইটা দিন কাটিলে যাহা হউক কিছু একটা জবাব ত সে পাইবে । মন এমন করিয়া আর ভাসিয়া বেড়াহতে পারে না, সে একটা স্পষ্ট সত্য আঁকুড়াইয়ু ধরিতে চায়। তাহার ঈপ্সিত স্বর্গ তাহার হাতের মুঠির ভিতর আসিয়াছে, কি আকাশকুহুম শূন্তে মিলাইয়া গিয়াছে তাহ সে জানিতে চায়। নিষ্ঠুর সত্যকে সন্থ করিবার শক্তির অভাবে মিথ্যার মায়াকে বহুদিন ধরিয়া চোখের সম্মুখে ঝুলাইয়া রাখিতে প্রাণ ব্যাকুল হয় বটে, কিন্তু যাহা ছলনা তাহার উপর ভিত্তি করিয়া জীবনকে গড়িতে কি পারা যাইবে ? তা ছাড়া হৈমস্তীর মনে আশা জাগিয়াছে, নিষ্ঠুর সত্য তাহাকে শুনিতে হইবে না, মধুর সত্যই সে শুনিবে। দু-দিন আগে-পিছের ব্যাপার ছাড়া আর বেশী কিছু সন্দেহকে সে মনে আমল দিবে না। চিঠি চলিয়া গেল, হৈমস্তা দিন ঘণ্টা প্রহর গুণিতে লাগিল । কলিকাতার চিঠি কলিকাতাতে দুই-চার ঘন্টাতেও পৌছায় আবার একদিন পরেও যায়। ঠিক যে অলখ-ঝেণরণ b~\\లి কথন পৌছিবে বলা শক্ত হইলেও তৃতীয় দিনে একটা জবাবের আশা কর! যাইতে পারে। ডাক-পিয়নের ময়লা থাকি পোষাক আর পাগড়ীট যতবার পথের ধারে দেখা দিত ততবারই হৈমন্তী জানালার ধারে আসিয়া দেখিত মানুষটা তাহাদের বাড়ীতে আসে কি না। ডাকঘর হইতে বাহির হইবার আন্দাজ কত মিনিট পরে যে তাঁহাদের রাপ্তার মোড়ে ওই ময়লা পাগড়ীটা দেখা যায় তাহা TV. দিনেই হৈমন্তীর মুখস্থ হইয় গেল। ডাকবাক্সে চিঠি মাঝে মাঝে পড়িল বটে, কিন্তু তাহা হৈমন্তীর চিঠি নয়। উৎকণ্ঠাপূর্ণ নিঃসঙ্গ বিষন্ন দিন কাটিছে চাহে ন, এক একটা ঘণ্টা যেন এক একটা যুগ, বুকের উপর দিয়া ভারী কাটার শৃঙ্খল টানিয়া টানিয়া চলিয়াছে। চিঠি লিথিয়াই উৎকণ্ঠ যেন দশ গুণ বাড়িয়া গিয়াছে। উত্তরের S আছে বলিয়াই নিরাশা এমন করিয়া মনকে পীড়ন করিতে পারিতেছে, চিঠি না লিখিলে এমন করিয়া প্রত্যেকটি মুহূৰ্ত্ত গুণিয়া প্রতীক্ষা করিবার প্রয়োজন ত থাকিত না । এক বৎসরে যতখানি আকুলতা মনের উপর ছড়াইয়া থার্কিত, - তাহা যেন দুই দিনে নিরেট ঠাসা হইয়া ব টন করিতেছে । হৈমন্তী কাহাকে জিজ্ঞাসা করিবে ? অার একথানা চিঠি সে লিখিতে পারবে না। নিখিলকে ডারিয়া খোজ করিতে বলা তাহার পক্ষে অসম্ভব । সুধ! এথানে নাই, থাকিলেও হয়ত কিছুহ করিতে পারিত না । কিছু প্রশ্ন করা যেখানে চলিবে না সেই মিলিদের বাড়ী এক যাওয়া যায়, যদি কথায় কথায় কোন কথা বাহির হইয়া পড়ে । সুরেশ ও মিলি দুই জনেই বাড়ীতে ছিল । হৈমন্তী নিজেকে যথাসাধ্য সংযত ও স্বাভাবিক করিবার চেষ্টা করিয়া চিঠি লিখিবার দিন চার পাচ পরে সেদিন তাহাদের বাড়ীতে সন্ধ্যায় গিয়া উপস্থিত হইল। স্বরেশ ছুটিয়া নামিয়া আসিয়া বলিল, “গরীবের বাড়ী এত শীগগির তোমাদের পদধূলি আবার পড়বে তা আশা করি নি ।” হৈমন্তী বলিল, “জ্যাঠাইমা না-হয় দেশেই চলে গেছেন। তাই বলে মিলিদির সঙ্গে আমাদেরও কি সম্পর্ক চুকে গিয়েছে ? একবারটিও ত আপনার আর ও রাস্ত। মাড়াবেন না। কাজেই আমি না এসে আর করি কি ?” । মিলি সিড়ি দিয়া নামিতে নামিতে বলিল, “ন রে না,