পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ আছে, সেই অজান-অতিথির মুখ যেন চেনা যায়, যেন চেনা যায় না ; কিন্তু এই আধ-চেনার অন্তরাল হইতেও স্বধাকে সে ডাকিতেছে, স্বধা মাগল পাইতেছে না। ফুলের গন্ধের মত তাহার একটুখানি আভাস পাওয়া যায়, কিন্তু তাহাকে ধরা যায় না, তাই এই বেদনার স্বষ্টি । কোনদিন তাহাদের ছাদের সভায় ছেলের আসিয়া পড়িত। একটা মাদুরের পাশে আর একটা মাদুর পড়িত । আজ আর দাড়াহয়৷ সন্ধ্য। কাটানো চলিত না । হৈমন্তী সেতার ও কাব্যগ্রন্থ লইয়া আসিত, ছেলেদের হাতে এক এক খান নুতন ইউরোপীয় লভেল । সম্প্রতি যাহারা নোবেল প্রাঙ্গ জ পাইয়াছেন, তাহাদের রচনা কে কত বেশী পড়িয়াছে তাত লষ্টয় আলোচনা ও তর্ক লাগিয়া যাহত । মহেন্দ্র প্রমাণ করিত যে সে সকলের চেয়ে বেশী পৃড়িয়াছে এবং ঔপন্যাসিকদের আদি-অস্থ সব তাঙ্গব নথ-দপণে । একদিন নিখিল বলি, “তুমি কাটালগ দেখে কণ্টনেন্টাল অথরদের নাম মুখস্থ কব, আর মলাটের উপরের সিনপসিস পড়ে এসেই সকলের আগে বক্তৃতা শুরু কর । আমরা বোকা মানুষ সব বঙ্গট, প'ড়ে তার পরে কথা বলব ঠিক করি, তাই সৰ্ব্বদাই তোমার পিছনে পড়ে থাকি।” হৈমন্ত্রী বলিল, “আপনি ওরকম ক'রে ভদ্রলোককে চটাবেন না, শেষে টোলের পণ্ডিতদেব মত লড়াই লেগে যাবে ।” মহেন্দ্র এসব ঠাট্ৰ'-তামাসা মেটারলিঙ্ক ও গায়ে মাখিত না, সে ইবসেনের তুলনামূলক সমালোচনা এবং বার্ণার্ড শ ও অস্কার ওয়াইল্ডের রসবোধের মাপকাঠি লইয়া আরও দ্বিগুণ উৎসাহে কথং বসিতে থাকিত। থাকিয়৷ থাকিয়া সকলের অলক্ষ্যে আপনার চুলের পালিশে হাত বুলাতয় ও গলার চাদরট যথাস্থানে টানিয়া বসাইত । লহত নিখিল বলিল, “এমন সুন্দর সন্ধ্যাট বাজে রসচর্চায় ষ্ট না করে তরমুজের রস কি আমের রসের আস্বাদ নিলে চর কাঞ্জের হত ।” হৈমন্তীর হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল সে আতিথ্য ভুলিয়া গিয়াছে । স্থধাকে উপরে বসাইয়। সে নীচে ছুটিয়া গেল অমলখ-ঝোরণ కg সরবৎ আনিতে। কাঠের একটা পালিশ-করা ট্রের উপর বেঁটে মোট ছোট ছোট কাচের গেলাসে কোন দিন রক্তাভ তরমুজের সরবং, কোনদিন বা আমপোড়ার সোনালী সরবৎ লহয়। সে আধঘণ্টা থানিক পরে উঠিত । স্বল্পভাষিণী সুধা ছেলেদের মাঝখানে বসিয়৷ কি কথা বলিবে খুজিয়া পাইল না, সময়টা কাটাইয়া দিবার জন্তু তপনকে বলিল, “আপনাকে তত ক্ষণ একটা গান করতে হবে ।” তপন কথা কম বলিলেও গানে তাহার কণ্ঠ সহজেই সবাক হইয়া উঠিত । সে গান ধরিল, “ভাতখানি এ বাড়িয়ে অঞ্চল মাও গে আমার হাতে, ধ3ব তারে ভরব তারে রাগ ব তারে সাথে, এ অ"ধর যে পূর্ণ তোমায়ু সেই কথা বলিও মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশ থানি দি ও " নিখিল বলিল, “গানটি সুন্দর, কিন্তু বুদ্ধ কে ? দেবত, ন। মানবী ?” তপন বলিল, “আর পাব কোথা ? দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা ।” মহেন্দ্র বলিল, “তোমরা কি কবির ভাষায় ছাড়া কথা বলবে না ? নিজেদের ভাষা ভুলে গিয়েছ ? যদি কাব্যচর্চাই করতে চাও ত বই সামনে রয়েছে, খুলে আরম্ভ কর না। লোজ আধঘণ্টা পণ্ডলেও অনেক এগিয়ে যাওয়া যায়। ইচ্ছ করলে সংস্কৃত কাব্যও ধরতে পার । আমার ঐদিকেই ঝোক বেশী । আমাদের কবিবা সকলেই ত ঋণী সংস্কৃত কবিদের কাছে।” স্বধার মন এদিকে ধাইত নী, গানের স্বরের ভিতর তাহার মনটা ঘুরিয়া কি মুন্দর গলার স্বর তপনেব, যেন ঝরণার জলের মত ঝরিয়া পড়িতেছে, যেন চার লাইন গানের ভিতর মাহুষের প্রাণের সকল গভীরতম কামনার কথা উজাড় করিয়া ঢালিয়া দিতেছে । কিন্তু এ কি শুধু স্বকণ্ঠের মোহ, এ কি শুধু কবির বাণীর অপূৰ্ব্ব সৌন্দৰ্ঘ্য যাহা সন্ধ্যার অকাশকে এমন করিয় ভরিয়া তুলিয়াছে ? অস্তরের তীতে ষে কথার প্রতিধ্বনি ঝন্থত হইয়া উঠিতেছে, তাহার পিছনে কি প্রাণের আহবান নাই ? স্বধার এত কথা জানিবার কি প্রয়োজন তাহা সে নিজেই জানে না ভাল করিয়া, তবু ইচ্ছা করে জানিতে এই গানের ইত ।