পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] সত্তর বৎসর 3న ধরিয়াছিলাম বলিয়া মনে পড়ে না। ফেঁচুগঞ্জের কথা খুব মনে আছে । আর বিশেষ মনে আছে এইজন্ম যে, এই মাছ-ধরার বাতিকেই তখন আমার লেখাপড়ার বিশেষ ব্যাঘাত ঘটিত। প্রাতঃকালে বাবা যতক্ষণ বাসায় থাকিতেন ততক্ষণ র্তাহার ভয়ে হয় নামৃত মুখস্থ না হয় লেখা মকৃশ করিতে হইত। তবে মনটা পড়িয়া থাকিত সেই খালের ঘাটে। বাবা কাছারী চলিরা গেলেই আমিও ছিপ লইয়া খালের ধারে যাইয়া বসিতাম। বাবা বাড়ী ফিরিবার সময় হইলেই আমিও বাড়ী আসিয়া শাস্তশিষ্ট হইয়া লেখা মকৃশ করিতে চেষ্টা করিতাম । বাবা ভাবিতেন যে, সারাদিনই আমি লেখাপড়া করিয়াছি । স্বতরাং মুখ-হাত ধুইয়। আমাকে সঙ্গে লইয় তিনি নিজে মাছ ধরিতে যাইতেন । অন্য কি মাছ ধরিতাম মনে নাই, তবে প্রায়ই যে এইরূপে নদী বা খাল হইতে থলুই ভরিয়া পাব দা মাছ লইয়৷ আসিতাম ইহা মনে পড়ে। ফেঁচুগঞ্জের স্মৃতির মধ্যে পিতা পুত্রে মিলিয়! এই মাছ ধরবার স্মৃতিটা সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রীতিকর যলিয়। এই দীর্ঘকাল ধরিয়া এমন উজ্জল হইয়া আছে । ফেঁচুগঞ্জে বোধহয় বাবা পাচছয় মাস মাত্র ছিলেন। কেঁচুগঞ্জের কাজ স্থায়ী ছিল না। সেখানকার স্থায়ী মুন্সেফ ছুটী হইতে ফিরিয়া আসিলে, বাবা লোভ অবসর লইয়। চিরদিনের মত মুন্সেফার ছাড়িয়া শ্রীহটে যাইয়া জেলার আদালতে ওকালতী আরম্ভ করিলেন । যতদূর মনে পড়ে, বোধ হয় ১৮৬৬ সালের মাঝামাঝি বা শেষভাগে বাবার সঙ্গে ফেঁচুগঞ্জ হইতে শ্ৰীহট্টে গিয়াছিলাম । খানেই আমার সমগ্র বাল্যজীবন অতিবাহিত হয়। সে স্মৃতি জড়িত হইয়া শ্ৰীহট্ট আমার জন্মভূমি না হইলেও এখনও পবিত্র তীর্থভূমি হইয়া আছে । હાફ শ্রীহট্ট সহরে ( > ) বাবার এক মাতুল, রাজমোহন মুন্সী, সে-সময়ে শ্রীহট্টের জজ আদালতে ওকালতী করিতেন। আমরা প্রথমে শ্রীহটে যাইয়া তাহার বাসাতেই উঠি । তারপর বাবা নূতন বাস করিয়া সেখানে উঠিয়া যান। আমরা শ্ৰীহট্টে যাইবার কিছুদিন পরেই রাজমোহন মুন্সী মহাশয়ের পরলোক হয় । সে-কথা এখনও আমরা বিশেষ ভাবে মনে আছে। জ্যেষ্টদিগের মুখে শুনিয়াছি যে, তাহার বাহিরের বৈঠকখানা-ঘরে ফরাসের পাশে যে-সকল বাংলা নজীর জড় করা ছিল, তাহার মৃত্যুর পরে তাহারি ভিতরে কয়েকথান হাজার টাকার নোট পাওয়া যায়। সেকালে লোকের ধনসম্পত্তি রক্ষা করা যে কত কঠিন ছিল, চোর-ডাকাতের উপদ্রব কত বেশী ছিল, এই ঘটনাতেই তাহfর প্রমাণ হয়। টাকাকড়ি লোকে সচরাচর সিন্দুকেই রাথিত । চোরডাকাতের। সেইখানেই গৃহস্থের টাকাকড়ির খোজ করিত। স্বচতুর মুন্সী মহাশয় এমন জায়গায় তাহার সঞ্চিত নগদ সম্পত্তি লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন, যেখানে চোর-ডাকাতের চক্ষু পড়িবার কোনই সম্ভাবনা ছিল না। তিনি একথা পরিবারের কাহাকেও বলিয়৷ যান নাই। সুতরাং দৈব কৃপাতেই কেবল তাহার আপনার লোকের হাতে এই নোটগুলি পড়ে।