२२ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৪e৪ । [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড উঠিভ। মেয়ের বাচের নৌকার সঙ্গে যাইতেন না। কিন্তু এসকল নৌকা যখন সারি গাহিতে গাহিতে বাড়ী ফিরিয়া আসিত তখন ঘাটে ঘাটে পুরস্ত্রীরা আসিয়া দাড়াইতেন । এবং যেই একখানা নৌকা তাহাদের ঘাটের পাশ দিয়৷ ছুটিতে ছুটিতে যাইত তখনই ইহার উলু দিয়া আত্মপর নিৰ্ব্বিশেষে সকল খেলোয়াড়কেই উল্লাসে অভিনন্দিত করিতেন। মাঝে মাঝে এই নৌকা-দৌড় উপলক্ষে মারামারি এবং রক্তারক্তি পর্য্যস্ত হইত। কিন্তু তাহাতে সচরাচর গ্রাম্য জীবনের সৌহার্দ ও শান্তি নষ্ট হইত না । মনসাপূজা হিন্দুরই পূজা ৭ বিসর্জনের দিনে হিন্দু মুসলমান সকলে মিলিয়৷ এই নৌকা-দৌড়ের আনন্দ-উৎসবে মাতিয়া যাইতেন। এই বাচ-খেলায় কোন সম্প্রদায়িক ভাব বা ভেদ ছিল না । হিন্দুর নৌকাতে মুসলমান এবং মুসলমানের নৌকাতে হিন্দু উঠিয় বৈঠা ধরিতেন। তখনকার দিনে ধর্শ্বের পার্থক্য থাকিলেও হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সামাজিকতার অভাব ছিল না। একে অন্তকে নিজের আত্মীয়-কুটুম্বের মতন দেখিতেন। ( t ) শ্ৰীহটে ষাইয়াই আমার রীতিমত শিক্ষা আরম্ভ হয়। আমি কখনই বাংলা পাঠশালায় যাই নাই। একেবারেই ইংরেজী স্কুলে ভৰ্ত্তি হই। তবে শ্ৰীহটে যাইয়া বাবা প্রথমে আমাকে ফার্শি শিখিবার জন্য এক মৌলবীর নিকটে পাঠাইয়াছিলেন। আমি প্রতিদিন প্রাতঃকালে এই মৌলবীর নিকটে যাইয়া ফাশি বর্ণমালা শিখিয়া ছিলাম। হিন্দু যেমন সরস্বতীর নাম লইয়া লেখাপড় আরম্ভ করিতেন, মুসলমানের সেইরূপ আল্লাহ ও রস্থলের নাম লইয়—লা এলাহি এল আল্লাহ মহম্মদ রহুল আল্লা— বলিয়া প্রতিদিনের পড়া স্বরু করিতেন। মৌলবীর নিকটে বাইয়। আমাকেও অন্যান্ত পড়য়ার মতন এই মুসলমানী মন্ত্র পাঠ করিয়াই আলেফ বে, তে, সে, পড়িতে হইত। বর্ণমালা শিখিয়া আমি"বন্দেনামা” পড়িতে আরম্ভ করি। কিন্তু এইখানেই আমার ফাঁশি পড়া শেষ হয়। বন্ধুেমাত্র প্রথম ছ'চার লাইন মুখস্থ হইতে ন হইতেই কিন্তু মনসার প্রতিমা বাবা আমাকে মৌলবীর নিকট হইতে ছাড়াইয়া আনিয়া ইংরেজী স্কুলে পাঠাইয়া দেন । ( & ) আমি যখন ইংরজে স্কুলে যাই তখন শ্ৰীহট্টে কোন সরকারী স্কুল ছিল না। শুনিয়াছি পূৰ্ব্বে নাকি একটা সরকারী স্কুল ছিল কিন্তু খৃষ্টীয়ান পাস্ত্রীর শ্রীহট্টে গিয়া বসিলে ক্রমে র্তাহীদের হাতেই লোক শিক্ষার ভার আসিয়া পড়ে। পাদ্রীদের স্কুল খোলা হইলে পরে পূর্বকার সরকারী স্কুল উঠিয়া যায়। ১৮৬৬ ইং অব্দে আমি শ্রীহট্রে যাই। তখন সহরে দুইটা ইংরেজী এন্ট্রেনস্ স্কুল ছিল । দুইটাই পাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত । একটা সহরের পূৰ্ব্বদিকে আর-একটা ইহার প্রায় কম বেশী এক মাইল দূরে সহরের পশ্চিম প্রাস্তে ছিল। পূৰ্ব্ব প্রাস্তের নাম ছিল নয়াশড়ক । স্কুলেরও নাম ছিল নয়াশড়ক স্কুল । পশ্চিম প্রাস্তের নাম ছিল সেখ-ঘাট। স্কুলেরও ঐ নাম ছিল। যতদূর মনে আছে বোধ হয় সেখঘাটের স্কুলই বড় ছিল । নয়াশড়ক স্কুলে এন্টেন্স পৰ্য্যন্ত পড়ান হইত কি না ঠিক মনে নাই সেখ ঘাট স্কুলে পড়ান হইত জানি। নয়াশড়ক আমাদের বাসার নিকটে বলিয়া আমি প্রথমে নয়াশড়ক স্কুলে ভৰ্ত্তি হই । তাহার অল্পদিন পরেই সেখঘাট স্কুলে ষাইয়া প্রবেশ করি । শ্ৰীহট্টের আগেকার সরকারী স্কুলের কথা বেশী কিছু শুনি নাই ; তবে শ্রীহট্টে ইংরেজী শিক্ষার প্রথম প্রবর্তক ইংরেজ সরকার নহেন, কিন্তু পাদ্রীরাই, ইহা জানি । শ্ৰীহট্টের তখনকার ইংরেজীনবিশের রেভারেও ডবলিউ প্রাইজ মহাত্মাকে শ্ৰীহট্টে আধুনিক শিক্ষা-গুরু বলিয়া আজিও সম্মান করেন। শ্রীহট্টে প্রথমে যাহার ইংরেজী শিক্ষা লাভ করেন প্রাইজ সাহেব তাহাদের সকলেরই গুরু ছিলেন। আমি প্রাইজ সাহেবকে দেখিয়াছি, কিন্তু র্তাহার নিকটে পড়ি নাই। বোধ হয় তখন তিনি শিক্ষকতা হইতে অবসর লইয়াছিলেন। অাব ছায়ার মতন তাহার শ্বেতশ্বশুশোভিত প্রশাস্ত-প্ৰসন্ন মুখ এখনও স্বত্তিতে জাগে। শ্রীহট্টের শিক্ষিত লোকেরা সহরের সাধারণ পুস্তকাগারে প্রাইজ সাহেবের নাম ও স্মৃতি জাগাইয়া রাখিয়াছেন। প্রাইজ সাহেব বাস্তবিক পুণ্যশ্লোক ব্যক্তি
পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।