পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૦ প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ; ১ম খণ্ড , বসন্ত এবং মিসেস্ মিত্র, দুইজনের সঙ্গেই ভবানী খুব ভাৰ জমাইয়া লইয়াছিল। তাহার নানারকম গল্প এবং আদৰকায়দাছুরস্ত কথায় লেডীডাক্তার খুসি ছিলেন । বসন্তু খুলি ছিল অন্ত কারণে। মনিবটি কিছু কড়া এবং হিসাবী হওয়াতে, তাহার পান দোক্তা, স্বগন্ধী তেল, সাবান প্রভৃতির খরচ চালানো মাঝে-মাঝে মুস্কিল হইয় উঠিত। ভবানীর বদান্ততায় আজকাল তাহার কপাল ফিরিয়াছিল। এ সব ত সে চাহিলেই পাইত, এমন কি ভবানী তাঁহাকে কথা দিয়া রাখিয়াছিল যে ভাতুমতীর যদি ছেলে হয় তাহা হইলে বসস্তকে একখানা গরদের শাড়ী ত দিবেই, হয় ত বেনারসীও দিতে পারে। বসন্তু বলিত, "দিদি, তোমার ভাই বরাত-ঞ্জোর আছে, খাস' মুনিব পেয়েছ। কে বলবে যে তুমি বাড়ীর বি । যেন তোমারই ঘর সংসার । টাকা পয়সা ষত খুলি খরচ কর, কোনোদিন তোমাম্ব না বলেন । আর দশ দেখ জামার । কাজ ভারী নর বটে, কিন্তু একটি পয়সা নাড়বার জো নেই, মাগী তখুনী ধ’রে ফেলে ।

  • ছেলে না পিলে। কার জন্তে পয়সা জমাচ্ছে জানিনা। একখানা ভাল কাপড় শুদ্ধ কিনে পরে না, হাতে ত এসে ইণ্ডিক দেখছি ঐ মরা সোনার বালা ছুগাছি। বাক্সেও নেই কিছু। কোথাও যদি যেতে হ’ল, তা বার করলে সেই সেকেলে এক লালপেড়ে গরণ, দেখে দেখে চোখ পচে

c P ভবানী বলিত, “আমার ভাকু বেঁচে থাক। কোনোদিন আমায় ওরা বিয়ের চোখে কি দেখেছে ? জামাই শুদ্ধ কখনো একটি কড়া কথা কোনদিন বলেনি। পোড়াকপাল আমাদের বাছা, তাই অমন ছেলে অকালে বেঘোরে মারা গেল।” বসন্তু একদিন কৌতুহলী হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “হ্যা গা দিদি, ওরা তোমায় মাইনে দেয় কত ক’রে ? খাওয়া পর, ধোপা, সব খরচাই ত দিচ্ছে ?” ভবানী হাসিয়া বলিল, “মাইনে আমায় কে দেবে লো ? সংসারই ত আমার হাতে ! ভান্থ মাসে মাসে বে দেড় হাজার করে টাকা পায়, তার কি একটা সে জাজুল দিয়ে ছোয় ? বাৰু এ'নে আমার কাছে দেন, আমি আষার বাবুর হাতে দিয়ে ব্যাঙ্কে জমা পাঠাই। যা দু দশ টকা খরচ লাগে, আমিই করি, কোনদিন সে খোজও নেয় না। শ্বশুরবাড়ী যখন ছিল, জামাই মাসে মাসে তাকে একশ’ টাকা ক’রে হাতখরচ দিত। তাও কি মেয়ে কখনও নিজের হাতে নাড়াচাড়া করেছে ? আমিই তার কাপড়-চোপড় করাতুম, যখন যা দরকার কিনেকেটে আনৃত্যুম। আমার হাতে মাচুর্য কিনা, মা মাসীর মতই আমায় মানে, ঝি ব’লে ত কোনো দিন অমাপ্তি করেনি।” বসন্ত বলিল, “বেশ আছে তুমি দিদি। দেড় হাজার টাকা আমরা কখনও এক সঙ্গে চোখেও দেখিনি।” ভবানী উঠিয়া পড়িল । বলিল, “যাই ভাই, এখন। আর এরপর ত এত ঘন ঘন আসতে পারব না। এতদিন মেজদিদি ছিল,ভাস্থকে ফেলে আসতে পারতুম যখন তখন। তা কাল সে শ্বশুরবাড়ী চ'লে যাচ্ছে, এখন আর কার কাছে রেখে আস্ব ? তা তুই যাস্ মাঝে মাঝে।” শোভাবতী তাহার পর দিনই চলিয়া গেল । শ্বশুরবাড়ী হইতে জোর তলব আসিয়াছিল। শাশুড়ীর কাজ চলেনা বউ ঘরে না থাকিলে, এবং শাশুড়ীর ছেলেরও মন ভাল থাকেন। কাজেই একজন প্রকাতে এবং আর একজন গোপনে নিজের নিজের মতামত ব্যক্ত করিতে বড় উৎসাহের সঙ্গেই লাগিয়াছিল। অগত্যা শোভাবতীকে শ্বশুরবাড়ী ফিরিতে হইল। ভবানীকে বলিয়া গেল, “সময়মত খবর দিস। যেমন ক’রে পারি আসব।” ভানুমতী বলিল, “তোর স্বামী বড় স্বার্থপর মেজদি, নিজের অস্থবিধাটুকুই দেখল। আজ না হয় কাল, তুই ত যেতিসই, কিন্তু আমার কথাটা একটু সে ভেবে দেখ লনা। আমার ত সারাজীবন একলাই কাটাতে হবে, তবু তুই ছিলি, গল্পগাছা ক'রে দুদণ্ড নিজের পোড়া কপালের কথা ভুলে থাকৃতুম, এখন সারাদিন একলা বসে কি ক’রে সময় কাটুবে ?” শোভাবতী মুখ মান করিয়া বলিল, “কি করুব ভাই, মেয়েমানুষের জীবন পরাধীন, হুকুম তামিল না ক’রে ত উপায় নেই। নইলে তোকে এই অবস্থায় একলা ফেলে আমি কখনও যাই । পুরুষ মানুষে কি আর আমাদের মাচুর্য ভাবে ? আমরা কেবল তাদের আরাম সুবিধার \