২৬ পাহাড়তলীতে, আর শ্রীহট্টের সর্বত্রই বিস্তর বন জঙ্গল ও ছোট ছোট পাহাড় আছে, সে-সকল জায়গায়, এখানকার কথা বলিতে পারি না, আমার বাল্যকালে বন্ত বরাহের খুবই উপত্রব ছিল । কৃষকের বরাহের উৎপাতে আপনাদিগের শস্যাদি রক্ষা করিতে বিস্তর বেগ পাইত। মাঝে মাঝে দাতাল বরাহ গ্রামে ঢুকিয়া হুবিধা পাইলে মানুষকে পর্য্যস্ত আহত এবং হত করিত। সুতরাং শিকারীরা প্রায়ই পাৰ্ব্বত্য অঞ্চলে বরাহ শীকার করিতেন । অস্ত্যজ জতির বন্য এবং গৃহপালিত উভয় জাতীয় শূকরের মাংসই স্বচ্ছদে ভোজন করে। কিন্তু বন্য বরাহ শীকার হইলে শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত ব্রাহ্মণ-কায়স্থ-বৈদ্য প্রভৃতিও স্থযোগ পাইলে ইহার উপরে ভাগ বসাইতে ছাড়িতেন না। শ্ৰীহট্ট সহরে মাঝে মাঝে শাক্ত ভদ্রলোকদিগের বাড়ীতে বরাহ-মাংস আমদানী হইত। বরাহের মাংস অত্যন্ত স্বস্বাছ, কোমল ও স্নেহযুক্ত। এই গোসাই ঠাকুরের শ্রীহট্টে অবস্থিতি কালে একবার আমার জ্যাঠতুত ভাই কতকটা বরাহ-মাংস সংগ্ৰহ করিয়া আনেন। আমার পিতৃকুল বৈষ্ণব হইলেও মাতৃকুল ঘোর শাক্ত । আমার মাতামহীর পিঞ্জালয়ে এককালে রীতিমত প্রবাসী-বৈশাখ, ১৩৪৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড মদ চোয়ান হইত। ইংরেজের আবগারী প্রতিষ্ঠিত হইবার পরেও একেবারে সেখানে এ কাজ বন্ধ হয় নাই । সে সমাজে বন্য বরাহের মাংস হিন্দুর অখাদ্য ছিল না। স্বতরাং মা এই মাংস রাধিতে কুষ্ঠিত হইলেন না। তবে বাবাকে লুকাইয়া এ কাজটা করিতে হইল। গোলাই ঠাকুর বন্য বরাহের ব্যঞ্জনের সন্ধান পাইয় তাহ আস্বাদন করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমার জোঠতুত ভাই মাকে আসিয়া সে-কথা বলেন। মা প্রথমে ব্রাহ্মণ-সন্তানকে নিজের রান্না খাইতে দিতে রাজী হন নাই । বোধহয় শেষে দিয়াছিলেন । এইসকল ঘটনাতেই দেশে জাতট। যে ভাঙ্গিতে আরম্ভ করিয়াছে মা ইহা বেশ টের পাইয়াছিলেন। আর এই কারণেই জাত রাখিবার জন্য ছেলের লেখাপড় বদ্ধ করা তাহার চক্ষে কিছুতেই সমীচীন বলিয়। বোধ হইল না। তিনি বাবাকে বুঝাইয়া আমাকে আবার স্কুলে পাঠাইয়! দিলেন । মা যদি এটি না করিতেন, তবে আমি আমরণ হয়ত গ্রাম্য জীবনের সঙ্কীর্ণতা এবং দলাদলির মধ্যেই পড়িয়া থাকিতাম । অথচ আমার মা বর্ণ-জ্ঞান লাভ করেন নাই । পরভৃতিক শ্ৰী সীতা দেবী “ভবানী, ও ভবানী !” “কি গে ? কেন ডাক্ছ ?” বলিতে বলিতে ভবানী আহবানকারিণীর কাছে আসিয়া দাড়াইল । বেলা দশট হইবে । শীতকালের রোদ খোলা জানালার পথে ঘরের ভিতর আসিয়া পড়িয়াছে। এই মধুর উত্তাপটুকু উপভোগ করিবার জন্যই যেন একটি যুবতী জানালার পাশে ইজি-চেয়ার টানিয়া লইয়া বসিয়াছে। তাহার উজ্জল গৌরবর্ণ মুখে রক্তের লেশমাত্র নাই, সম্প্রতি কোন পীড়া হইতে উঠিয়াছে বলিয়। মনে হয়। মুখও শুষ্ক, বেশভুষারও তেমন পারিপাট্য নাই, অথচ ঘরখানির সঙ্গ ও যে-প্রাসাদতুল্য অট্টালিকার মধ্যে তাহার স্থান, সেটিকে দেখিলেই স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এই গৃহের অধিবাসীদের আর যাহারই অভাব থাকুক, অর্থের অভাব নাই । - ঘরখানি যুবতীর শয়নকক্ষ। তাহার এক দিকে মেহগনির প্রকাও জোড়াখাট, অন্ত দিকে আয়ন
পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।