পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] পরভৃতিকা ২৯ প্রবলভাবে বিদ্রোহ করিতে লাগিল । অবশেষে তাহারই জয় হইল । এইসকল কারণে ভানুমতী খুব শীঘ্রই স্বামীর অতি অন্তরঙ্গ বন্ধু হইয়া উঠিল । বাড়ীর অন্ত সকলে সামনে পিছনে তাহার নিন্দ কfরত বলিয়া আর কাহারও কাছে সে বড় একটা ঘোষিত না । স্বামীই ছিল তাহার একমাত্র সম্বল ৷ যতক্ষণ বাধ্য হইয় তাহাকে স্বামী হইতে দুরে থাকিতে হুইত, তাহার একটা মিনিটও যেন কাটিতে চাহিত না । বই পড়িয়া, শেলাই লইয়া বসিয়া, গোছানে! ঘর দশবার করিয়া গোছাইয়াও সে অস্থির হইয়া উঠিত। আর কিছু না পাইলে ভবানীর সঙ্গে অকারণ ঝগড়া করিত, এবং জ্ঞানদার ভিতর বাড়ীতে আসিবার সময় পাচ মিনিট অতি ক্রাস্ত ইয়া যাইতে না যাইতে বালিশে মুখ গুজিয়া কাদিতে আরম্ভ করিত । ভবানী এই ছেলে-মামুষের ছেলে-মামুষী দেখিয়া মনে মনে হাসিত, ভাবিত, “দু’দিন যাকৃ, ছেলে-পলের মা হ’লে, এসব পাগলামী নিজের থেকেই যা’বে ।” দিন কাটিয়া যাইতে লাগিল। ভানুমতীর বিবাহ হইয়াছিল প্রায় পনেরো বৎসর বয়সে, এখন তাহার বয়স কুড়ি। রূপ-যৌবনে তাহার সারা দেহ কুলে কুলে ভরিয়া উঠিল, কিন্তু কোল শূন্তই থাকিয় গেল । কর্তা প্রমদারগুন হইতে আরম্ভ করিয়া বাড়ীর চfকর দাসী পর্য্যস্ত সকলেরই ইহ লইয়া ক্ষোভের সীমা ছিল না । বংশের একমাত্র দুলাল জ্ঞানদা, তাহার ঘর যদি শিশুমুখের হাসিতে আলো না হইয় উঠে, তাহা হইলে এই বিশাল পুরীর আঁধার ঘুচিবে কেমন করিয়া ? শেষে কি কৰ্ত্তার ভাইপো লক্ষ্মীছাড়া মাতাল উদয়টাই আসিয়া সব জুড়িয়া বসিবে নাকি ? ডাক্তার রমেন্দ্রবাবু কৰ্ত্তার ঘরে ঢুকিতে ঢুকিতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আজ কেমন বোধ করছেন ?” প্রমদারঞ্জন তখনও বিছানা ছাড়িয় উঠেন নাই । একখানি খবরে কাগজ চোখের সম্মুখ হইতে সরাইয়৷ বলিলেন, “ভাল আর আছি কই ? ছেলেট বড় ভাবিয়ে তুলল। এইমাত্র গ্রিপেড টেলিগ্রাম কবুলাম বোসদের বাড়ী।” রমেন্দ্রবাবু বলিলেন, “আজকালকার ছেলে-ছোকরাদের রকমই হ’য়েছে ঐ । আমোদ হ’লেই হ’ল । কোথায় বুড়ে বাপ খুড়ে খবরের জন্য র্হাপিয়ে মর্ছে, সে-কথা তাদের মনে থাকুলে ত ।” প্রমদাবাবু বলিলেন, “শুধু বুড়ো বাপ ত বাড়ী জুড়ে নেই, তার স্ত্রীও ত রয়েছে ? তাকেও ত একটা খবর দিতে পাবৃত ! সে বেটী ত শুন্‌ছ একেবারে মরুতে বসেছে ভাবনায় ।” ডাক্তার বলিলেন, “হ, বৌমার শরীর কিছু দিন থেকে ভাল যাচ্ছে না শুনছিলাম। ছেলে-পিলে হবে নাকি ?” কৰ্ত্তা মান হাসি হাসিয়া বলিলেন, “কি জানি, সে-রকম ত কিছু শুনিনি। অদৃষ্ট্রে সে মুখ কি আছে যে নাভীর মুখ দেখে মরুব ? এত বড় বংশ জ্ঞানদার সঙ্গেই শেব হ’বে নাকি কে জানে ? উদয় হতভাগা এসে এ বাড়ীতে তার বারো ভূত নিয়ে রাজত্ব করছে জানলে আমার আত্মা ত শাস্তি পাবে না ।” ডাক্তার বলিলেন, "এরি মধ্যে হাল ছাড়ছেন ? কি ব৷ আপনার ছেলে বৌয়ের বয়েস ? কপাল জোর থাকে ত এখনও ঘর-ভরা নাতী-নাতনী দেখে ধেতে পারবেন।” প্রমদারঞ্জন বলিলেন, “ঘর ভরার আশা করি না হে ভায়, এখন একটি দেখে যেতে পারলেই আমার ঢের झ्म्न ।' রমেন্দ্রবাবু উঠিতে উঠিতে বলিলেন, "ত দেখবেন বই কি, নিশ্চয় দেখবেন । আচ্ছা, আসি আজ ; মিকৃচ্চারটা ঠিকমত থাচ্ছেন ত ? এখনো গুটি পীচ রুগীর বাড়ী ঢু মেরে ম্বেতে হবে ।” ডাক্তার চলিয়া গেলেন এবং কৰ্ত্ত আবার খবরের কাগজ পাঠে মন দিলেন। একজন হিন্দুস্থানী চাকর ঘরের সব দরজা জানলাগুলি খুলিয়া ঘর ঝাট দিবার আয়োজন করিতে লাগিল । ভবানী বাহির হইয়) যাইতেই ভাতুমতী উঠিয়া অস্থির ভাবে ঘরময় ঘুরিতে লাগিল। জ্ঞানদার অন্যায় ব্যবহারের কথা যত তাহার মনে হইতে লাগিল, ততই রাগে তাহার বুকের ভিতরটা ফুলিয়া উঠিতে লাগিল, অশ্রী যেন তাহার কণ্ঠরোধ করিয়া ধরিতে লাগিল। কি করিয়াছে সে, ধে তাহার সহিত এমন ব্যবহার ? কায়মনোবাক্যে স্বামীকে