সঙ্গীতে পরিবর্তন ۹ نها ১ম সংখ্যা ] কম্পনযুক্ত স্বর শুনিলাম। মনে মনে কিন্তু আনন্দ পাইলাম । ছেলেছোকরাদের মধ্যে আমাদের দল ছাড়া অন্ত সকলে কেহ হাসিতে লাগিল, কেহ অবাক হইয়। শুনিতে লাগিল, কেহ বিরক্ত হইয়া চলিয়া গেল। গৈাপাল-বাবু “চয়ণ মেরে মাথে” কল্যাণের ধ্রুপদ গান করিয়াছিলেন । রামদাস-বাবু “গোরা গণেশ" কল্যাণের ধ্রুপদ গান করিয়াছিলেন । গোপাল-বাৰু জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই কি কেদামতী ( প্রাচীন কালের ) চিত্র ?” মহেশ-বাবু তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিলেন, “কল্যাণের সনদী ধ্রুপদ দুই চারিটিই আছে।” বন্দে আলী খাঁ। হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “কল্যাণ কা দো চার হাঁ ধ্রুপক সনন্দী, অওর সব রামানন্দী ’’ খ৷ সাহেব একটু কারণ করিতেন ; তিনি হাসিতে হাসিতে “হামিয়ে আল্লা” গান করিতে লাগিলেন এবং বীণ! বাঙ্গাইতে লাগিলেন । আমি এই প্রথম বীণার সঙ্গে গান শুনিলাম ; এবং পরেও একবার কাসিম আলী খার গান বীণার সহিত শুনিয়াছি ; আর তৃতীয় বার শুনি নাই। ৫০ বৎসরে কি ভীবণ পরিবর্তন ? এখনকার বীণাতে গং বাজান হইয় থাকে এবং তার পরণ স্থানে ঠুংরী বাজান হইয়া থাকে। গান শিখিবার ইচ্ছা অত্যন্ত বলবর্তী হইল ; কিন্তু বলিবার সাহস নাই, কারণ স্কুলে পড়ি । কিছুদিন পরে পুনরায় কাশীধামের মদনপুরায় স্বৰ্গীয় ‘গরীশচন্দ্র লাহিড়ী রায় বাহাদুর মহাশয়ের বাটতে তন্ত্রকারদিগের সম্মেলন হই য়াছিল। বন্দে আলী খ, সাদিক আলি খাঁ। ( উভয়েই বাণাকার ) ; বাজ পাই সেভারী, অহম্মদ খ । সেতারী ; স্থানীয় তন্ত্রকারদিগের মধ্যে মহেশবাবু ( বীণকার ), নকুড়-বাবু, মাণিক-বাবু (উভয়েই সেতারী ) ; ইহারা সকলে নিজ নিজ স্ত্ৰ লইয়া উপস্থিত ছিলেন । ব্যবসায়ীরাই আপন আপন বাদ্যযন্ত্র লইয়। আসিয়াছিলেন। সেই ৪৫ বৎসর পূৰ্ব্বে গুণিগণ কাশীতে আসিলেই ধনী এবং গুণগ্ৰাহী ব্যক্তির গুণিগণের ধিষ্ঠার পরিচয় লইবার নিমিত্ত ঐৰূপে সকলকে আহবান ও সম্মান করিতেন। কেবল ষে গুণের পরিচয় হইত তাহা নহে, গুণদাতা গুরুদিগেরও পরিচয় এবং গুণের বিচার হইত। সাধনার দ্বারা গুরুদত্ত দ্রব্য কতদূর কাহার লব্ধ হইয়াছে তাহারও পরিচয় প্রকাশ হইত। সকলে সভাস্থ হইলে কে আগ্নে যন্ত্র হাতে করিবেন ইহার নিমিত্ত পরস্পরের মধ্যে অনুরোধের আদান-প্রদান হইতে আরম্ভ হইল। আজকাল দেখা যায় যে, গৃহস্বামী তাহার মনোমত লোককেই আগে বাজাইতে বা গান করিতে বলেন । তখন লঘু গুরুজ্ঞান এবং বিচার করা কৰ্ত্তব্যবোধে কেহই আগে যন্ত্র হাতে সইতে সাহস করেন নাই। অবশেষে বন্দে আলী খ। কাশীর বৃদ্ধ বাজপেয়ী মহাশয়কে আগে বাজাইতে অঙ্গুরোধ করিলেন। তিনি সেতার হাতে করিলেন _এবং গণেশ সিং জী মৃদঙ্গ বাঙ্গাইলেন। বাজপেয়ী জী খৰ্ব্বাকৃতি লোক ছিলেন এবং উহার অপেক্ষ তাহার সেতার বড় দেখাইত। যখন বাম হস্তের সাহায্যে আলাপ করিতে লাগিলেন তখন বড়ই মধুর শুনাইয়াছিল। মীড়গুলি মৰ্ম্মভেদী এবং চিত্তাকর্ষক ছিল বলিয়। কন্দে আলী খ বার স্বার প্রশংসা করিতে লাগিলেন । রীতিমত আলাপ অর্থাৎ স্থায়ী আরোহী অবরোহী এবং সঞ্চারী এই চারিবর্ণের আলাপ করিয়া তিনি পরণ বাজাইতে লাগিলেন ; সেই সময়ে গণেশ সিং জীও মুন্সঙ্গে ঐ পরণ বাজাইলেন । . আজকালকার মত যেমন মৃদঙ্গ বাজান হইয়া থাকে তেমন নহে । আধুনিক মৃদঙ্গীর কথায় কথায় তেহাই দিয়া থাকে, গায়কের মধ্যেও কেহ কেহ তেহাই দিয়া গান শব করিয়া থাকেন দেখা যায় । সে সময়ে নিয়ম ভিন্ন ছিল । যে বোল পরণ বাণীতে বাজান হয় সেই বোল , পৰুণ যুদঙ্গেও বাজান হয় ; তাহ ছাড়া পরণেরও হিসাব আছে, অর্থাং সমৃ fক তিন, সম কি ছয়, নও সম্ কি, সম কি বারহ । উপরন্তু আর একটি তেহই আছে, তাহার নাম "বেমনঝ ; ইহার উদেহু বে শুনিলেই গায়ক গান অথবা তাল ভুলি যাইবেন । তখন এই সমস্ত গুণ ও বিস্কার পরিচয় দেওয়া ও লওয়া হইত। বাজপেয়ী জী সেতারে বাজাইলেন কিন্তু বীণার সমস্ত কাজই সেতার দেখাইলেন ; এই নিমিত্তই বম্বে জালি খ। অত্যন্ত খুলী হইয়াছিলেন এবং বাজনা শেব হইলে বাজপেয়ীজীকে আলিঙ্গন করিয়াছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্ট। এইরূপে
পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।