পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] ধৰ্ম্মবোধ 8@ যতো বাচে। নিবৰ্ত্তত্ত্বে অপ্রাপ্য মনসা সহ | আনন্দং ব্রহ্মণে বিদ্বান ন বিভেতি কদাচন ॥ সত্যের সুগভীর রসরূপকে আত্মার মধ্যে নিঃসংশয়ে গ্রহণ করা, এষং সেই বোধেয় পূর্ণতা দ্বারাই সংসারের কৰ্ম্মকে পবিত্র করা, সুন্দর করা, মামুষের সঙ্গে জগতের সঙ্গে সম্বন্ধকে কল্যাণময় প্রতিপূর্ণ করা এই যদি মানুষের জীবনের লক্ষ্য হয়, এষং সেই লক্ষ্যসাধনকেই যদি ধৰ্ম্মসাধন বলে, তবে তার প্রথম সরল শিক্ষাবিধি মনকে বিশ্বের দিকে উন্মুক্ত করা। সে তো ক্লাসের মধ্যে না, পুথির শ্লোকের মধ্যে সমাহিত হয়ে না। বিশ্বের মধ্যে অনিৰ্ব্বচনীয়ের উপলব্ধি সেই বিশ্বের ক্ষেত্রেই করতে হবে। নানা কৃত্রিম বাধায় যদি তার সঙ্গে আমাদের আনন্দের পরিচয় প্রতিহত হয় তাহ’লে দিনে দিনে আমাদের চিত্তের সহজ বোধশক্তি অসাড় হ’তে থাকে, তখন বিশ্বব্যাপারে কেবল আমরা যন্ত্রকে দেখি, আত্মীয়কে দেখিলে, অর্থকে দেখি, পরমার্থকে দেখিনে । সেই বোধশক্তির বিকীর যখন ঘটে তখনি ঈশ্বরকে কেমন ক’রে পাওয়া যেতে পারে এই প্রশ্নটি কঠিন সমস্ত হ’য়ে দাড়ায়। কেননা পুৰ্ব্বেই বলেছি আনন্দময়কে বোধের দ্বারাই পাওয়া যায়, জ্ঞানের দ্বারা নয়। সেই বোধকে উদ্বোধিত করবার প্রেরণা বিশ্বের সর্বত্র আছে । আকাশে আলোকে তার বাণী । সেই ৰাণীর কাছে দ্বার খুলে রেখে দেওয়া, মনকে জাগতে দেওয়ার অবসর দেওয়া আমাদের সাধনার গোড়ার পথ । অধিকাংশ স্থলে সে পথ বন্ধ হয়েছে ব’লেই আমরা নানা প্রকার অনুষ্ঠানের ভিতর দিয়ে পথ খুজে বেড়াই,— তাতে ফল যদি না পাই তাহ’লে চিত্তের অসারতা ও উপায়ের কৃত্রিমতাকে দোষ না দিয়ে ধৰ্ম্মের সত্যকেই অবিশ্বাস করি,—দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন ক’রে দিয়ে আলোককে অস্বীকার করি, একথা ভুলে যাই, আলোক তর্কের দ্বারা পাওয়া যায় না, বোধের দ্বারাই পাওয়া যায়। ( > ) আমাদের ভারতবর্ষের সাধনার একটি বিশেষত্ব আছে । সে আমাদের জানায় বিশ্বের মধ্যে যে আনন্দ রয়েছে, সেই আনন্দকে আপন চৈতন্তের ভিতর অকুভব করাতেই মুক্তি। আমি যখন ইউরোপে ছিলেম তখন এই বাণীটিই আমাকে প্রতিনিয়ত ভারতবর্যের দিকে টেনেছিল। সেখানে নানা চিস্ত ও কৰ্ম্মের ক্ষেত্রের মধ্যে জীবন-সমস্যা সমাধানের বিচিত্র প্রয়াসের মধ্যে নিবিষ্ট ছিলেম, কিন্তু । মনের একটি ক্ষুধা কিছুতেই যাচ্ছিল না। উন্মুক্ত আকাশের মধ্যে, তরুলতার সৌন্দর্য্যের মধ্যে আমাদের চিত্ত আনন্দ্বিত হ’য়ে যে অমৃত গ্রহণ করে, তারই অভাব অনুভব করেছি। এবং এইটেও অমুভব করেছি যে, যারা লোক সমাজে নানা কাজে ব্যাপৃত, তারা এ অমৃতকে ভুলে যায়। একে সমস্ত জীবনের অন্তর্গত ক'রে নিতে জানে না, একে বাইরের ভাবে দেখে। প্রাণশক্তির প্রাচুর্য্যবশত যুরোপীয় প্রকৃতিতে কৰ্ম্মোধ্যম প্রবল। য়ুরোপীয় সাধক সেই কৰ্ম্মোদ্যমের মধ্যেই ব্রহ্মের সেবা করতে চান। এইটিও খুব ষড় কথা, এইটিকে যেন আমরা শ্রদ্ধা করি, এই চেষ্টা র্যাদের মন থেকে প্রতিনিমুত আকার পাচ্চে তাদের প্রণাম করি। সেই সঙ্গে একথাও বলতে হয় যে, ভারতবর্ষে যারা বিশ্বের মধ্যে আত্মাকে প্রসারিত ক’রে ব্রহ্মকে অস্তরতম করতে চেয়েছেন, তারাও বড় সাধন করেছেন। যখন সমুদ্রপারে সেই লোকালয়ে নানা কোলাহলের মধ্যে ব্যস্ত হ’য়ে ছিলুম তথন আকাশের ডাকে ভারতবর্ষ আমাকে ডেকেছিল । আমার মনে একটি ক্ষুধা ছিল, সে-ই প্রবঙ্গরূপে আমাকে টেনেছিল। যুরোপের বড় বড় শহরের মধ্যে, জনতার কোলাহল ও কৰ্ম্ম-ব্যাপারের প্রবলতার মধ্যে প্রতিনিয়তই অন্তরে একটি আহবান শুনতে পাচ্ছিলুম সেই স্থবিপুল বস্তুবিরল অবকাশের, যার মধ্যে দাড়িয়ে ঋষির প্রণাম করেছিলেন :– যো দেবেtহয়েী যোহপস্থ যে বিশ্বং ভুবনমাবিবেশ য ওষধিযু যে বনস্পতিযু তস্মৈ দেবায় নমো নমঃ । -- এই নমস্কারটির অভাব অত্যন্ত অনুভব করেছি। বারেবারে মনে পড়েছে আমার আবাস-গৃহের দ্বারে যে গাছটি প্রত্যহ বাড়ছে সে কি বাণী নিয়ে অপেক্ষা করছে স্বর্ষ্যোয়ের ও স্বৰ্য্যান্তের আকাশের তলে দাড়িয়ে ? সেই গাছটি একটি সহজ তানপুরার মত, তাতে জীবনসঙ্গীতের