পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

逐 ৪র্থ সংখ্যা ] ঋষি টলষ্টয়ের একখানি চিঠি 8ఫి(t হইবে, অথবা দেকাত ( Descartes ) এর মত বলিতে হইবে, “আমি কিছু জানি না, কিছু বিশ্বাসের বশে মানিয়া লই না ; আমি অন্য কিছুই চাই না, শুধু বুঝিতে চাই এই যে, যে জীবন আমরা ধারণ করিতে বাধ্য হইয়াছি, ইহার অর্থ কি, ইহার সত্য সার্থকতা কোথায় ?” এই প্রশ্নের সরল স্বচ্ছ ও পূর্ণ উত্তর মানুষ যুগের পর যুগ পাইয়াছে। আমার স্বার্থ আমাকে শিখায় যে, জগতের যত ধনসম্মান সৌভাগ্য আমার হউক। কিন্তু আমার জ্ঞান আমায় দেখাইয়া দেয় যে, ঐ ইচ্ছাটি শুধু আমার একলার নয়, প্রত্যেক মামুষের প্রত্যেক প্রাণীর। সুতরাং আমি এক সমস্তটা দখল করিতে গেলে ইহার আমায় পিধিয়া মারিবেই। যে-মুখের জন্য আমি লীলায়িত তাহা আমি একচেটিয়া করিতে পারি না। কিন্তু সুখের পিছনে ধাওয়াটাই ত জীবন ! মুখ না পাওয়া, স্বথ পাওয়ার জন্য চেষ্টা মাত্র না করা—সে ত মৃত্যু। যুক্তি বলে ; জগতের নিয়মে সকলেই নিজের নিজের মুখ চায় স্বতরাং আমি এক সব স্থখ কখনও পাইব না এবং পুরাপুরি বাচাও সেইজন্য আমার অদৃষ্টে নাই। কিন্তু এই নিখুত যুক্তিট। অটল থাকিলেও দেখি আমি দিব্য বাচিয়া আছি এবং সুখ খুজিয়া বেড়াইতেছি। আমাদের বলিতে হয়—মামুব নিজেকে যতট। ভালবাসে তার চেয়ে আমাকে যদি ভালবাসে তবেই আমার স্বর্থ-সমুদ্ধি সম্ভব হয়। কিন্তু এটা যে অসম্ভব ব্যাপার। ইহা কখনও হয় না ; তবুও আমরা ত পাশাপশি অাছি ; আমাদের সমস্ত কৰ্ম্ম-প্রচেষ্টা আমাদের শক্তি সৌভাগ্য ও সম্মানের অন্বেষণ কিসের আভাস দেয় ? আমরা ঐ সবের ভিতর দিয়া পমকে আপন করিতে চেষ্টা করিতেছি—নিজেকে মানুষ যতটা ভালবাসে তাহা অপেক্ষ আমাকে বেশী ভাল বাসাইতে প্রয়াস পাইতেছি। কিন্তু সকলেই দেখি আমা অপেক্ষা নিজেকে বেশী ভালবাসে সুতরাং সেই চরম তৃপ্তি আর ভাগ্যে ঘটিল না। কত মানুষ এমনি অনুভব করে—এ সমস্যার সমাধান করিতে পারে না-হুতাশ হইয়া জলিয়া পুড়িয়া বলে—এ জীবন কিছুই না, শুধু একটা নিষ্ঠুর পরিহাস । 哆 কিন্তু তবু বলি ঐ সমস্তার সমাধান অতি সহজ এবং আপন হইতে আমাদের কাছে দেখা দেয় ; একটি মাত্র অবস্থায় আমরা স্বধী হইতে পারি যখন পৃথিবীর জীব নিজেদের যত ভালবাসে তাহা অপেক্ষা অন্তকে বেশী ভালবাসিবে। এইটি সত্য হইলে নিখিলবিশ্ব আনন্দময় হইয়া উঠিবে। আমি মানুষ এবং আমার চৈতন্য আমাকে সৰ্ব্বসাধারণের সুখের মৰ্ম্মগত নিয়মটি দেখাইয়া দিতেছে । সে নিয়ম আমাদের মানিতে হইবে—আপনাকে যতটা ভালবাসি তাহ অপেক্ষ অপরকে ভালবাসিতে হইবে । এই ভাবে জীবনকে চালাইলে তাহার এমন একটি অপূৰ্ব্ব তাৎপর্ঘ্য আমাদের কাছে প্রকাশিত হইবে যাহা আমরা কখনও দেখি নাই। স্বষ্টির মধ্যে জীবে জীবে হিংসা দেখি–এক অন্যকে ধ্বংস করিতেছে দেখি, কিন্তু ইহাও সত্য যে, জীবে জীবে প্রেমের সম্বন্ধ গড়িয়া উঠিতেছে—এক অস্তকে সাহায্য করিতেছে। ধ্বংসের সঙ্গে প্রাণের যোগ নাই—প্রাণের ধারা পুষ্ট হইতেছে প্রেমের আদান-প্রদানে। এই প্রেম বাহিরে জীবে জীবে মৈত্রী ও অস্তরে অনুপম মাধুর্য্যের রূপ ধরিয়া দেখা দেয়। বিশ্বমানবের ইতিহাস আমি যতটুকু বুঝিয়াছি— আমি দেখিয়াছি যে, মানবসভ্যতা সম্মুখপানে চলিয়াছে একটি শক্তির প্রেরণায়—সেটি পরম্পরের প্রতি প্রডির টান ; এইখানেই জীবের ঐক্য-সিদ্ধির অটল ভিত্তি । এইটি ক্রমশঃ পরিস্ফুট করা এবং এই অনুপম নিয়মটি জীবনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা—ইহাই আমার কাছে ইতিহাসের যথার্থ স্বরূপনির্দেশ । মানুষ তার অস্তরের অমুভূতি ও বাহিরের ইতিহাসের অভিজ্ঞতা দিয়া ঐ সত্যটিকেই ধরিতে চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু শুধু বোধের মধ্যে ধরা নয়—প্রাণের গভীরতম প্রেরণায় ঐ সত্যের অসন্মিগ্ধ প্রামাণ্য দেখা। মানুষের সব-চেয়ে বড় তৃপ্তি, বড় মুক্তি, বড় আনন্দ ত্যাগ ও প্রেমে। এই অনন্ত পথটি দেখাইয়া দেয় প্রজ্ঞ, এবং হৃদয়ের আবেগ মানুষ সেই দিকে ঠেলিয়া লইয়া যায় । যাহা তোমাকে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছি যদি তাহ তোমার কাছে অস্পষ্ট বোধ হয় তাহার কঠোর সমালোচনা করিও না। আমার আশা আছে রম্য দল ।