পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] রাজা বিরূপাক্ষের ওষ্ঠে ফেন এবং ওষ্ঠ-প্রান্তে শোণিতবিন্দু দেখা দিল । প্রজাদিগকে পুরোহিত কহিলেন, ‘তোমাদের কোন চিন্তা নাই, তোমরা গৃহে ফিরিয়া যাও। দেবীর মর্য্যাদ। তিনি স্বয়ং অক্ষত রাখিবেন ।” প্রজারা চলিয়া গেল। তখন পুরোহিত রাজাকে কহিলেন, ‘মহারাজ, আপনিও গৃহে ফিরিয়া যান। অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করিলে মহামায়া প্রসন্ন হইবেন ।” রাজা কোন কথা না কহিয়া উদ্যানে ফিরিয়া গেলেন। & রাজা বিরূপাক্ষের মনে ভয়ের সঞ্চার হইয়াছিল। মন্দিরে বলপূৰ্ব্বক প্রবেশ করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন বলিয়া দেবীর অভিসম্পাতের ভয়, তাহার অপেক্ষাও ভয় প্রজাদের অসন্তোষ ও বিরক্তি লক্ষ্য করিয়া। উদয়ুনকে তিনি বিন কারণে রাজদ্রোহী বলিয়াছিলেন, এখন যদি সত্য সত্যই প্রজারা বিদ্রোহী হয় ? দেবীকে তুষ্ট করিবার জন্ত তিনি উদ্যান হইতে নগ্ন পদে, কাষায়-বস্ত্র পরিধান করিয়া, মন্দিরে গিয়া মহা সমারোহে দেবীর অর্চনা করিলেন, দেবীকে ও পুরোহিতকে প্রণাম করিয়া মন্দিরে বহু অর্থ প্রদান করিলেন । প্রজাদিগের মনোরঞ্জন করিবার আশায় নানাবিধ উৎসবের আয়োজন করিলেন, উৎসবে আহারের ও বস্ত্রাদি দানের মুক্ত হস্তে ব্যবস্থা করিলেন। অপর দিকে বিলাসের মাত্রা বাড়িল, রাজকৰ্ম্মে কিছু মাত্র মনোযোগ নাই । উদয়নকে নগর ত্যাগ করিতে হইল না। সকল কথা শুনিয়া মহামায়ার মন্দিরের পুরোহিত র্তাহাকে আশ্বাস দিলেন যে, তিনি নিৰ্ভয়ে থাকুন, আশঙ্কার কোন কারণ নাই। রাজা মন্দিরে আগমন করিলে তাহাকে নিভৃতে কহিলেন, "উদয়নকে শাস্তি দিবার বাসনা পরিত্যাগ করুন। দোষ আপনার, নিরপরাধী সন্ন্যাসীদিগকে অকারণে অবমাননা করিয়াছিলেন । ইহাতে আপত্তি করায় উদয়নের কি অপরাধ ? সেখানে অপর লোক উপস্থিত ছিল, উদয়নের প্রতি অবিচার করিলে তাহারা সকল কথা প্রকাশ করিবে, প্রজাগণ আরও কষ্ট হইবে।” রাজরোষ や*。 রাজা উদারভাবে কহিলেন, “আমি উদয়নকে ক্ষমা করিয়াছি।’ পুরোহিত স্মিতমুখে কহিলেন, সেই কথাই উত্তম।” উদয়ন নিজের কৰ্ম্মে নিযুক্ত হইলেন। গৃহে মাতা ছিলেন, আর কেহ না। মধ্যবিত্ত সঙ্গতিপন্ন গৃহস্থ, বিশেষ কোন অভাব ছিল না, উদয়নের অলস স্বভাব নহে বলিয়া তিনি কৰ্ম্ম করিতে আরম্ভ করিলেন। তখন মাত৷ কহিলেন, "উদয়ন, এইবার বিবাহ কর, নিজের সংসার কর, আমিও পুত্রবধূর মুখ দেখি।' উদয়ন হাসিতে লাগিলেন, কহিলেন, “বিবাহ কোথায়ু স্থির করিলে ? পাত্রীর জন্য অধিক দূরে অন্বেষণ করিতে হইবে না। মহাশ্বেতার বোন-ঝি স্বজাত মেয়েটি দেখিতে মন্দ নয়, কি বল ?” - মাতার হাস্যপূর্ণ চক্ষু দেখিয়া উদয়ন মস্তক অবনত করিলেন, কহিলেন, ‘তুমি যেখানে স্থির করিবে সেখানেই বিবাহ করিব।” ‘তোমার নিজের কোন মতামত নাই ? অপ্রতিভ হইয়া উদয়ন কহিলেন,‘আমারও মত আছে।’ মাতা আনন্দে হাসিতে হাসিতে কহিলেন, "তোমার মত জানিয়াই সম্বন্ধ করিয়াছি।’ ‘আমার মত কেমন করিয়া জানিলে ? ‘আমার চক্ষু আছে, মহাশ্বেতারও চক্ষু আছে, জানিতে কতক্ষণ ?” আনন্দে উদ্বেলিত হৃদয়ে উদয়ন জননীকে প্রণাম করিলেন। সেই রাত্রে উদয়ন স্বপ্ন দেখিলেন। দেখিলেন, চারিদিকে নিবিড় অরণ্য, কণ্টকময় মহাতরুতে পরিপূর্ণ, অরণ্যে অসংখ্য সর্প ও শ্বাপদকুল বিচরণ করিতেছে । লোলজিহব, নরমাংস-লোলুপ, বিপুলদেহ রাক্ষসগণ বিশাল বাহু প্রসারিত করিয়া ইতস্ততঃ ধাবিত হইতেছে। কোথাও আৰ্ত্ত প্রাণীর চীৎকার, কোথাও কম্পিতকায় জীবের পলায়ন। শোণিতের ন্যায় লোহিত রাগে আকাশ আচ্ছন্ন, বায়ুতে রোদনের স্বর প্রবাহিত হইতেছে। সহসা সেই ডয়াবহ স্থানে অভয় বাণী শ্রত হইল। আকাশ নিৰ্ম্মল হইয়া উজ্জল স্বর্ণবর্ণ ধারণ করিল, ফ্রাস