পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভবঘুর্যের চিঠি (রাজ রামমোহন রায়-স্মৃতিভাণ্ডার ) শ্ৰী তারকনাথ দাস ২শে জুন তারিখে বার্লিন হইতে এই সংবাদ প্রচার হইল যে, আগামী ২রা অক্টোবর তারিখে, জাৰ্ম্মনিরপ্রেসিডেন্ট ফিল্ড, মাসাল ভন্‌ হিন্‌ডেনৃবর্গের ৮০ বৎসরের জন্মদিন ; উক্ত দিনে সমস্ত জাৰ্ম্মন তাহাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশক কিছু টাক প্রেসিডেণ্টকে ডালি দিবে এবং উক্ত টাকা দ্বারা হয়ত প্রেসিডেন্ট জাৰ্ম্মন জাতির আর্থিক উন্নতির জন্ত একটা ফাউণ্ডেশন গঠন করিবেন। প্রত্যেক জাৰ্ম্মন যাহাতে কিছুনা-কিছু টাকা দান করে তাহার জন্য দেশব্যাপী কমিটি গঠন হইবে। এই খবরটি পড়িয়া বিশ্ব-রাজনীতি-বিশারদ বিস্মর্কের জীবনীর একটা ঘটনা মনে হয়। ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে ফরাসী প্রসিয়ার যুদ্ধের জয়ের পর জাৰ্ম্মনির লোকের বিস্মর্কের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিয়া তাহাকে কয়েক লক্ষ টাকা দেয়। আমার যতদূর জানা আছে, উক্ত টাকা বিস্মার্ক জাৰ্ম্মনজাতির ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ওরিয়ান্টাল সেমিনার স্থাপন করিবার জন্য দান করেন। জাৰ্ম্মনদের মধ্যে দেশভক্তি “মুখের কথা” নয়, কাজের দ্বারা তাহারা দেশভক্তি দেখায়। এইসঙ্গে একটা কথা বলিয়া লই। বর্তমান যুগে ভারতের জননেতাদের মধ্যে স্বৰ্গীয় রাজ রামমোহন রায় সর্বশ্রেষ্ঠ বলিলে অত্যুক্তি হয় না। তিনি ১০০ বৎসর পূৰ্ব্বে ভারতের এবং হিন্দু সমাজের কল্যাণের জন্ত যে-সমস্ত কাৰ্য্য আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহ এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই এবং যদি কোন দিন ভারত পুনরায় উন্নত হইতে চায় তাহ হইলে রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিষ্ঠিত কৰ্ম্মগুলিকে ভারতব্যাপী করিতে হইবে। বর্তমান ভারতে, বিশেষতঃ হিন্দু সমাজে, প্রকৃত “শ্রদ্ধা” নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না । যে-হিন্দু সমাজে গুরুদক্ষিণার জন্য শিষ্য প্রাণ পৰ্য্যস্ত দিতে প্রস্তুত হইত, সেই ভারতে কেবল “বাক্যে শ্রদ্ধা এবং কার্য্যকালে ভণ্ডামির প্রাধান্ত” দেখা যায়। রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতিরক্ষার জন্ত নানা প্রকারের সভা হয়, কিন্তু কাৰ্য্য বড় বেশী হয় নাই। আগামী ১৯২৮ সালে রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের শত বৎসরের উৎসব হইবে। এ সময়ে ইংলণ্ড আমেরিকা ও বিভিন্ন দেশ হইতে প্রসিদ্ধ লোকের ভারতে আসিবেন। এই উৎসব উপলক্ষে রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিবার জন্ত যদি রাজা রামমোহন রায়স্মৃতি-ভাণ্ডার স্থাপিত হয় তাহা হইলে খুব ভাল হয়। ভারতের ষত ব্রাহ্মসমাজের সভ্যেরা এবং ভারতের যে-সমস্ত উদারচেতা হিন্দুর রাজ রামমোহন রায়কে হিন্দু সমাজের সংস্কার-ক্ষেত্রে সহকৰ্ম্মী বলিয়া মনে করেন তাহার, যেসমস্ত ভারতবাসী রাজা রামমোহন রায়ের সূৰ্ব্ব-ধৰ্ম্মের-সার সিদ্ধান্ত করিবার প্রয়াসকে মানবজাতির মঙ্গলজনক জ্ঞান করেন তাহার, যে-সমস্ত হিন্দু, মুসলমান, খ্ৰীষ্টান বা অপর ভারতবাসী রাজ রামমোহন রায়কে ভারতের প্রথম রাজ-প্রতিনিধি, যিনি ভারতের কল্যাণের জন্য এবং দিল্লীর বানসাহের স্বত্ব রক্ষার জন্য ইংলণ্ডে গমন করেন এবং বিদেশে নিজের জীবন দেন, তাহার, সকলেই যদি গড়পড়ত এক টাকা করিয়া চাদা দেন তাহা হইলে অক্লেশে তিন লক্ষাধিক টাকা রাজা রামমোহন রায়স্মৃতি-ভাণ্ডারে উঠান সম্ভব। আশা করি, সময় নষ্ট না করিয়া রাজা রামমোহন রায়-স্মৃতি-ভাণ্ডার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপায় অবলম্বন করিতে ক্রটি হইবে না। যদি রাজা রামমোহন রায় স্মৃতিভাণ্ডার স্থাপিত হয় তাহা হইলে উক্ত স্মৃতিভাণ্ডারের টাকার দ্বারা কি করা উচিত ? প্রথমত –প্ৰতিভাওরের মূলধনের একটি টাকাও কোন বিষয়ে যাহাতে খরচ না হয় সে-দিকে নজর